বিশ্ববিদ্যালয়ে টর্চার সেল!

এই ভয়াবহতা বন্ধ হোক

প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিশ্ববিদ্যালয়ের্ যাগিংয়ের নামে ভয়াবহ শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিষয়টি মাঝে মধ্যেই আলোচনায় উঠে আসে।র্ যাগিং সংস্কৃতি অমানবিক এবং এটি বন্ধ করতে বিভিন্ন সময়ে নানান উদ্যোগের কথাও জানা যায়। সাম্প্রতিক সময়ের্ যাগিংয়ের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে শিক্ষার্থী নির্যাতনের আরেক নাম 'টর্চার সেল' কাহিনী। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে নানান নামে এই টর্চার সেলগুলো চালু আছে। সম্প্রতি বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের ঘটনার পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের টর্চার সেলের বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে। আর সম্প্রতি সহযোগী একটি গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ঢাবি, রাবি, জাবি, চবিসহ ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ে 'টর্চার সেল' নামে নির্যাতন কেন্দ্রের সন্ধান মিলেছে। এসব কেন্দ্রে নিয়মিতই চলে শিক্ষার্থীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন; যা রীতিমতো আঁতকে ওঠার মতো। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের কেন্দ্রের খবরে অভিভাবকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। আর বিশিষ্টজনরা তাদের বক্তব্যে উলেস্নখ করেছেন, এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কারণেই। বিষয়টি একদিকে যেমন পরিতাপের, অপরদিকে গভীর উদ্বেগের। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই বহু শিক্ষার্থী বিভিন্ন সময়ে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীর মারধরের শিকার হয়েছেন। তুচ্ছ ঘটনায় যখন-তখন চলে শিক্ষার্থী নির্যাতন। চুল বড় রাখা, ছাত্রনেতাদের সালাম না দেয়া- এমন সব ঠুনকো অজুহাতে মারধর করে হাত-পা ভেঙে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। শাসক দলের ছাত্র সংগঠন যে কায়দায় ভয় জিইয়ে রেখে তাদের দখলদারি জারি রাখে, সেই একই কায়দায় নতুনদের দেয়া হয় 'আদবকায়দা'র শিক্ষা। যখন-তখন ডেকে এনে করা হয় জিজ্ঞাসাবাদ। ঢাবির 'গেস্টরুম', ক্যাম্পাস এবং ১৩টি আবাসিক হলে গত ৭ বছরে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা ৫৮টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কাউকে কাউকে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ করার ঘটনাও আছে। উলেস্নখ করা যেতে পারে, শুধু ছেলেদের হলে নয়, মেয়েদের হলগুলোতেও চলে নিপীড়ন। সেখানেও রয়েছে রাজনৈতিক রুম। তবে সেটি মূলত ছাত্রীদের ওপর মানসিক নিপীড়ন এবং দলীয় কর্মসূচিতে যেতে অস্বীকৃতি জানালে 'শিবির' তকমা দিয়ে হল থেকে বের করে দেয়া হয়। কেউ যেন এদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রতিবাদী মতামত না প্রকাশ করে, সে জন্য ৫৭ ধারার ভয়ও দেখানো হয়। এসব নির্যাতন সেলের আবার রকমারি নামও দেয়া হয়। রাবির এমন একটি টর্চার সেলের নাম 'ভাইরুম'। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে শিক্ষা শেষে একজন শিক্ষার্থী দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করবেন। ফলে সেই বিদ্যাপীঠের এহেন পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহতাকে নির্দেশ করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশ্ববিদ্যালয় হলো শিক্ষালাভের পবিত্র স্থান। যেখানে শিক্ষালাভের মাধ্যমে পাঠপুস্তকের বাইরেও একজন শিক্ষার্থী নৈতিক জ্ঞানসম্পন্ন ও মানবিকতাবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবেন এটাই প্রত্যাশা থাকে জাতির। ফলে সেখানকার এই পরিস্থিতি এমন কেন হবে, এ প্রশ্ন স্বাভাবিক কারণেই অযৌক্তিক নয়। বলাই বাহুল্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের্ যাগিংসহ টর্চার সেলবিষয়ক নির্যাতন দীর্ঘদিন আলোচিত হলেও সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় তথা হল প্রশাসন বক্তব্য-বিবৃতি ছাড়া এসব অনৈতিক কর্মকান্ড নিরসনে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিয়েছে এমন তথ্য নেই। ফলে সাধারণ এবং ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা নির্যাতনের বিষয়ে অভিযোগ দিতেও ভয় পান। আশার কথা যে, সম্প্রতি ঢাবি প্রশাসন হলে শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছে, যা ইতিবাচক। স্মর্তব্য যে, দেশের বিশিষ্টজনরাও বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলোর এরূপ ভয়ঙ্কর তথ্য সামনে আসায় তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, এগুলো রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের ফল। এসব নিরসনে দল নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে জাতীয় কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেছেন কেউ। কেউ বলেছেন, ভয়াবহ এই সংস্কৃতি থেকে বের হতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই ভয়াবহ বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার জাগরণ ঘটনানো অত্যন্ত জরুরি। ছাত্র সংগঠনের আমুল সংস্কারের কথাও এর আগে বলেছেন বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে হল প্রশাসনের এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল হওয়ার বিকল্প থাকতে পারে না। দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এহেন পরিবেশ শোভনও নয়- স্বস্তিকরও নয়; এটা কিছুতেই চলতে দেয়া উচিত নয়। প্রত্যাশা থাকবে বিষয়গুলো সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং রাজনৈতিক দলগুলো আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হোক এটাই প্রত্যাশা।