স্মরণসভায় প্রধানমন্ত্রী

শিশুর ভবিষ্যৎ নিরাপদ হোক

প্রকাশ | ২০ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বর্তমানে দেশে শিশুহত্যা ও নির্যাতনের পেছনে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট শেখ রাসেলসহ বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকান্ডের বিচার বন্ধে তৎকালীন সরকারের তৎপরতার ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আমলে ওই হত্যাকান্ডের বিচারের পথ বন্ধ করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। শেখ রাসেলের ৫৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় বঙ্গবন্ধুকন্যা আরও বলেন, সেই সময় যদি ওই শিশু হত্যাকারী, নারী হত্যাকারীদের বিচার হতো তাহলে অন্তত মানুষের ভেতরে একটা ভয় থাকত। এই ধরনের মানসিকতা গড়ে উঠত না। শিশুহত্যা ও নির্যাতনের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে অভিহিত করেছেন বিশ্লেষকরা। তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলছে শিশু ধর্ষণ, ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা ও নির্যাতন। এ ঘটনায় সচেতন দেশবাসী ও অভিভাবক মহল রীতিমতো উদ্বিগ্ন। স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, বাসে-লঞ্চে, পথে-ঘাটে, মাঠে কোথাও আজ যেন শিশুরা নিরাপদ নয়। এ অবস্থা নিঃসন্দেহে একটি জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং তা জাতির জন্য এক অশনি সংকেতই বটে। আশঙ্কাজনক হারে শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনাগুলো বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন করছে। বলা বাহুল্য, কোনো সমাজে অপরাধ বিস্তৃত হলে এবং অপরাধীদের কঠোর সাজার ব্যবস্থা করা না হলে সে সমাজে নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধ অবশিষ্ট থাকে না। মানুষের বিবেক, সামাজিক অবক্ষয় কোন স্তরে পৌঁছালে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে একজন পিতা তার সন্তানকে হত্যা করতে পারে, তা জেনে বিস্ময়ের সীমা থাকে না। আর এ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এনে ভবিষ্যতে আর কোনো শিশু যেন হত্যার শিকার না হয় সে লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। শিশু হত্যাকারীদের কঠোরতর সাজা নিশ্চিতের আশ্বাসও তিনি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বড়বোন হিসেবে আমি তাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি। কিন্তু ঘাতকের নির্মম বুলেট তাকে বাঁচতে দেয়নি। পঁচাত্তরে শেখ রাসেল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে দেশে ফিরে এলেও বাবা-মা, ভাই-ভাবীসহ স্বজনদের বিচার চাওয়ার সুযোগ ছিল না। তিনি মামলা করারও সুযোগ পাননি। একটি দেশে যদি স্বজন হত্যার বিচার চাওয়া না যায় এর চেয়ে পরিতাপের আর কি হতে পারে। অথচ সে সময় খুনিদের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি দূতাবাসে নিয়োগ দিয়ে 'পুরস্কৃত' করা হয়েছে। তার এরই নেতিবাচক প্রভাব সমাজে পড়েছে বলে তিনি মনে করেন। ওই সময় শিশু হত্যাকারী, নারী হত্যাকারীদের বিচার করা গেলে, এই মানসিকতা গড়ে উঠত না বলেও তিনি দাবি করেন। স্মর্তব্য যে, প্রধানমন্ত্রী শিশুদের কল্যাণে নেয়া সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেছেন ওই অনুষ্ঠানে। শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে বিরত রাখা ছা্‌ড়াও ঝরেপড়া, প্রতিবন্ধী এবং এতিম শিশুদের শিক্ষাসহ নানান কর্মসূচির কথা উলেস্নখ করেন। পাশাপাশি এসব শিশুদের অবহেলা না করতেও সবাইকে আহ্বান জানান। তিনি শিশুদের মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ থেকে দূরে থাকার পাশাপাশি সততার সঙ্গে জীবনযাপনের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সব শিশুর ভেতরেই একটা সুপ্ত চেতনা রয়েছে, মনন রয়েছে, শক্তি রয়েছে এবং সেটা বিকশিত করতে হবে। সততার সঙ্গে জীবনযাপন করলে সবসময় নিজের ভেতরে এমনিতেই শক্তি সঞ্চার হয়। কারো কাছে তখন মাথা নত করে চলতে হয় না। আর শিশুদের পাশে থাকার লক্ষ্যেই ১৯৮৯ সালে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ গঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ রাসেল আমাদের মাঝে না থাকলেও শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের মাধ্যমে হাজার হাজার, লাখো রাসেলকে পেয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রী উলেস্নখ করেছেন। দেশের শিশুদের শিক্ষিত ও নৈতিকতাবোধসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারের অঙ্গীকারের কথাও তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী- যা অত্যন্ত ইতিবাচক। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, আগামীর এই প্রজন্ম দেশের শিশুদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করতে সরকার কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চিত করবে।