আমাদের স্বপ্ন বলি হচ্ছে যে কারণে

অতিসম্প্রতি বুয়েটে ঘটে যাওয়া নিরীহ ও মেধাবী ছাত্র আবরার হত্যাকান্ড দেশবাসী ও ছাত্রসমাজের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। মিডিয়ার বদৌলতে এ মর্মান্তিক ও জঘন্য হত্যাকান্ডের সচিত্র প্রতিবেদন দেশের জনগণ জানতে পেরেছে। ফলে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা সমাজে আজ উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। এমনকি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র নিন্দা ও প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়েছে। এ ধরনের ঘৃণ্য কর্মকান্ড আমাদের আদিম অসভ্য ও বর্বর যুগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

প্রকাশ | ২১ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
আমরা শৈশবে পড়েছিলাম-ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ। এখন সেই প্রবাদ যেন অন্য নামে রূপ ধারণ করেছে। আজকের ছাত্রসমাজ চারদিকে লোভ-লালসার ভয়ংকর মোহ ও দুষ্টুচক্রে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে। যে ছাত্রসমাজ শৈশব থেকে লেখাপড়ায় মনোযোগী হয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ গঠনের ব্রত গ্রহণ করবে। পাশাপাশি বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মকান্ড ও গবেষণায় নিজেদের নিয়োজিত করবে তার পরিবর্তে কেন এই ছাত্রসমাজ ভয়াবহ অপরাধের দিকে ধাবিত হচ্ছে তা কি একবারও সমাজ ও রাষ্ট্র খতিয়ে দেখার দরকার মনে করছে না? তরুণ ছাত্রসমাজের সুন্দর জীবন গঠনের জন্য শিক্ষাঙ্গনে পড়ালেখার সুষ্ঠু ও অনুকূল পরিবেশ তৈরির ব্যাপারে সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব সর্বাধিক। কিন্তু আজকের সম্ভাবনাময়ী ছাত্রসমাজ আলোর পথ থেকে বিচু্যত হয়ে অন্ধকার জগতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পড়ালেখার বাইরে গিয়ে অবৈধ পন্থায় বিনা পরিশ্রমে রাতারাতি ধনী হওয়ার বাসনায় নিজেরা আসামাজিক কর্মকান্ড যেমন-মাদক, টেন্ডারবাজি, ক্যাসিনো, খুন, ছিনতাই, ধর্ষণ ও ডাকাতি ইত্যাদি অনৈতিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। এ থেকে আমাদের পরিত্রাণের উপায় কি?। অধিকন্তু অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা জঙ্গি ও সন্ত্রাসের কালো থাবায় মদদপুষ্ট হয়ে তারা বিপথগামী হয়ে যাচ্ছে। অনেকে গুম, অপহরণ ও হত্যার শিকার হচ্ছে, এমনকি বিভিন্ন অপরাধে জড়িত হচ্ছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতির পেছনে কলকাঠি নাড়ে সুবিধাবাদী কিছু রাজনৈতিক দল ও মাফিয়া চক্র। তারা নিজেদের স্বার্থ-সিদ্ধির আখের গোছানোর জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তরুণ ও মেধাবী ছেলেমেয়েদের টার্গেট করে প্রলোভন দেখিয়ে ব্যবহার করছে এবং তাদের সুন্দর ভবিষ্যতের অপমৃতু্য ঘটাচ্ছে। ফলে ছাত্রসমাজ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড থেকে দূরে সরে গিয়ে নানাবিধ অসামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের ভার্চুয়াল জগতে আবদ্ধ করে রাখছে। তারা রাজনীতির সুষ্ঠু ধারার পরিবর্তে নিজেদের মধ্যে হানাহানিসহ সম্মানের জায়গা নষ্ট করছে। এহেন অসামাজিক ও অপরাধমূলক কাজে কিছু স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক দল ও অপরাধীচক্র পর্দার অন্তরালে মদদ দিয়ে নিজেদের ফায়দা লুটে নিচ্ছে। এই সুবিধাগোষ্ঠী ছাত্রছাত্রীদের প্রকৃত হিতাকাঙ্ক্ষী হতে পারে না। তারা কিছুদিন একদলকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ ও সুবিধা হাতিয়ে নেন। প্রয়োজন ফুরালে তাদের ছেঁটে ফেলে নতুন আরেক দলকে তাদের অনৈতিক কাজে লাগানো হচ্ছে। এভাবে আমাদের ছাত্রসমাজ আজ বিভ্রান্ত হচ্ছে এবং বিভিন্ন অপকর্মে ব্যবহৃত হচ্ছে। তথাকথিত রাজনীতির এই অপধারা ধ্বজাধারীদের কুকর্মে এবং তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আমাদের যুব ও ছাত্রসমাজের নৈতিক চরিত্র ও সুন্দর ভবিষ্যৎকে হরণ করা হচ্ছে। বর্তমান ছাত্র ভবিষ্যতের রাষ্ট্রচালক। সুতরাং রাষ্ট্র চালনার নীতি অর্থাৎ রাজনীতি বিষয়ে সচেতনতা ও জ্ঞানের অনুশীলন ছাত্রাবস্থায় হওয়া আবশ্যক। তাই ছাত্র রাজনীতির অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য। রাজনৈতিক ঘটনাস্রোত ও ছাত্রসমাজ এই দুইয়ের সংশ্লিষ্টতা অবশ্যই সাম্প্রতিককালের ব্যাপার নয়, ইতিহাস এর সাক্ষ্যবাহক। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এরূপ অনেক উদাহরণ লিপিবদ্ধ আছে। স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে সংঘটিত অনেক আন্দোলনে ছাত্রসমাজের অবদান সম্পর্কে আমরা অবহিত। ভাষা আন্দোলনে ছাত্রদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে পুরোভাগে থেকে উলেস্নখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন ছাত্রছাত্রীরা। এ ছাড়া আরও অনেক গঠনমূলক আন্দোলনে ছাত্রছাত্রীদের সক্রিয় ভূমিকা প্রশংসনীয় ছিল। কাজেই ছাত্র রাজনীতি বা ছাত্রছাত্রীদের রাজনৈতিক আন্দোলন ও ঘটনাবলিতে জড়িত হওয়া নিন্দনীয় বা সমালোচনার বিষয় হিসেবে গণ্য হওয়া ঠিক নয় যদি তা সঠিক পথে হয়ে থাকে। সন্দেহ নেই, আবরার হত্যাকান্ড কিছুদিন দেশের মানুষের আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে থাকবে। এ হত্যাকান্ডের ঘটনা দেশের সব মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণা পেয়েছে। এতে সরকারি দলের পক্ষে একটি অন্তত ভালো কাজ হয়েছে, আর তা হলো ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি নিয়ে চারদিকে যে আলোচনার ঝড় উঠেছিল আবরারের এ নির্মম ঘটনার পর তা কিছুটা থিতিয়ে আসবে। লক্ষণীয়, যুবলীগের সম্রাটসহ অন্যদের গ্রেপ্তারের পর দেশের প্রধান মিডিয়াগুলোয় কথিত নেতাদের গঠিত সাম্রাজ্য ও অবৈধ অর্থোপার্জনের কিচ্ছা-কাহিনী নিয়ে যে বিরাট আকারের শিরোনাম হয়ে আসছিল সে শিরোনামের জায়গা এখন দখল করে নিয়েছে আবরার হত্যাকান্ডের ঘটনা। কাকতালীয়ভাবে আবরার হত্যাকান্ডের ঘটনাটিও ঘটেছে সম্রাটের গ্রেপ্তারের ঠিক পরদিন। মানুষ এ নিয়ে হয়তো ব্যস্ত থাকবেন কিছুদিন। চিহ্নিত কিছু মিডিয়াও এ নিয়ে বেশ হই-হুলেস্নাড় করবে পরিকল্পনামাফিক। কথিত থিঙ্কট্যাঙ্কের সদস্যদের ইলেকট্রিক মিডিয়ার বিভিন্ন টকশোগুলোতে এ নিয়ে নানা ধরনের বিচার-বিশ্লেষণ করতে দেখা যাবে। ধীরে ধীরে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির ঘটনা দৃশ্যের অন্তরালে ঢাকা পড়ে যাবে। একই উপায়ে আবরারের এ ঘটনা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সাম্প্রতিক স্বাক্ষরিত চুক্তি নিয়ে দেশের নাগরিকের ভেতর যে ব্যাপক মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে তাও হয়তো সমালোচনার আড়ালে চলে যাবে। এ সব কিছুই কিন্তু কিছু কিছু মানুষের কল্পিত ধারণা। অতিসম্প্রতি বুয়েটে ঘটে যাওয়া নিরীহ ও মেধাবী ছাত্র আবরার হত্যাকান্ড দেশবাসী ও ছাত্রসমাজের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। মিডিয়ার বদৌলতে এ মর্মান্তিক ও জঘন্য হত্যাকান্ডের সচিত্র প্রতিবেদন দেশের জনগণ জানতে পেরেছে। ফলে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা সমাজে আজ উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। এমনকি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র নিন্দা ও প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়েছে। এ ধরনের ঘৃণ্য কর্মকান্ড আমাদের আদিম অসভ্য ও বর্বর যুগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কোনো সভ্য ও সুশীল সমাজে এ ধরনের কর্মকান্ড আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার কথা নয়। মনে হয় যেন সমাজ ও রাষ্ট্র জরা-ব্যাধিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। আশপাশের বা বহির্বিশ্বের মানুষের কাছে জাতি হিসেবে আমাদের মাথা হেট হয়ে আসছে। এ ধরনের বর্বরোচিত ও ঘৃণ্য কাজ যদি একের পর এক ঘটতে থাকে তাহলে জাতি হিসেবে আমাদের অবস্থান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে আজ ভাবার সময় হয়ে এসেছে?। নিকট অতীতে ফেনীর নুসরাত হত্যা, বরগুনার রিফাত হত্যাকান্ড, কুমিলস্নার সোহাগী জাহান তনু হত্যাকান্ড, সাংবাদিক সাগর-রুনী ও বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডসহ আরও অনেক আলোচিত হত্যাকান্ডে দুস্কৃতিকারীদের যথাযথ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার নৃশংস হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। আর এ কারণেই জাতি আজ সোচ্চার ও প্রতিবাদমুখর। এ ছাড়া ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনে নজিরবিহীন রেকর্ড হতে চলেছে দেশে। হঠাৎ যেন মানুষের পাশবিক প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। একের পর এক ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও কোনোভাবেই যেন এর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। বিকৃত রুচির একশ্রেণির মানুষের বিকৃতি থেকে রেহাই পাচ্ছে না কোমলমতি শিশুরাও। ঘরে-বাইরে সর্বত্রই নারী ও শিশুর জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠছে। বিরূপ প্রভাব পড়ছে সামাজিক জীবনে। চলতি বছরের গত সাড়ে তিন মাসে ৩৯৬ জন নারী-শিশু হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। খোদ পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমনের মামলা হয়েছে ১ হাজার ১৩৯টি এবং হত্যা মামলা হয়েছে ৩৫১টি। বেসরকারি সংগঠন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে সারা দেশে ৪৭ শিশু ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টা ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। ৪৭ শিশুর মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৩৯ জন। শিশু ধর্ষণের ঘটনায় শিশুর শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এহেন বর্বরোচিত ঘটনা যদি একের পর এক ঘটতে থাকে তাহলে আমরা দায়বদ্ধ অমানবিক অসভ্য সমাজে পরিণত হবো। সমাজে দেখা দেবে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা। আর একটি ঘৃণিত ও দলিত সমাজে মানুষের মধ্যে থাকে না কোনো মায়া, মমতা, সহানুভূতি ও সহনশীলতা। জাতীয় অনৈক্য, সহনশীলতা ও পরমত সহিষ্ণুতার অভাবে সমাজ হিংস্র সমাজে পরিণত হয়। ফলে, গুম, অপহরণ, ধর্ষণ, হত্যা, নারী ও শিশু পাচার, মাদক, লুটপাট, ছিনতাই, ডাকাতি ইত্যাদি জঘন্য অপরাধের বিস্তার লাভ করে থাকে। আমরা কি এই ধরনের পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আর যদি তাই হয়। তার থেকে মুক্তির উপায় কি? এ বিষয়ে সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকারের পক্ষ থেকে অনতিবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সামাজিক অনাচার বন্ধের জন্য সরকার, প্রশাসনসহ রাষ্ট্রীয় সব এজেন্সিকে প্রয়োজনে শুদ্ধি অভিযানের মতো জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে নিরবচ্ছিন্ন অভিযান কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। এই বিষয়ে সারা দেশের জনগণ তথা ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক সব স্তরের মানুষকে সজাগ ও সতর্ক হতে হবে। যেন কোনো অবস্থাতেই কেউ কোনো অনৈতিক কাজ করে পার পেয়ে না যায়। এ ক্ষেত্রে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব অপরাধী ও দুস্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করতে হবে। অধিকন্তু সব ছাত্র ও যুব শ্রেণিকে নতুন প্রত্যয় ও প্রতিশ্রম্নতি প্রেরণে কাজ করে যেতে হবে। বিশেষ করে কোনো অন্যায় ও অপারাধের বিরুদ্ধে তাদের সর্বপ্রথম রুখে দাঁড়াতে হবে। সব অন্যায় ও অনাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। তারা বিগত দিনে অত্যাচার, অবিচার ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তার নিরসনকল্পে অনেক তাৎপর্য ভূমিকা রেখেছে। কাজেই আজকের ছাত্রসমাজের কাছেও জাতির এই প্রত্যাশা যে, ছাত্রসমাজ তার বিবেককে জাগ্রত পড়াশোনায় মনোযোগী হবে এবং যে কোনো গঠনমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করবে। লোভ, লালসা, হিংসা ও প্রতিহিংসার ঊর্ধ্বে উঠে সেবা ও মানবতা বোধে উজ্জীবিত হবে এবং দেশ ও জাতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। আর তাহলেই আগামী ২০২১ ও ২০৪১ সালের মধ্যে রূপকল্প বাস্তবায়নসহ উন্নত দেশের মর্যাদার আসনে আমরা আসীন হবো। বর্তমানে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি আর অনৈতিকতায় রাতারাতি অঢেল সম্পদের মালিক বনে যাওয়ার বাসনা সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। তাকে কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কেননা সব অসামাজিক ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডের ফলে সমাজে আসবে স্থবিরতা। সমাজ একদিন নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় পতিত হবে। এতে সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হবে-সমাজে আসবে অস্থিরতা ও অশান্তি। অস্থিরতা ও অশান্তির জন্য বিভিন্ন অপমৃতু্যর হারও বাড়তে থাকবে। যে কোনো মৃতু্যই নির্মম ও শোকাবহ। কোনো মৃতু্যই আমাদের কাম্য নয় যেমন-দুর্ঘটনায় মৃতু্য ও সন্ত্রাসী ও দুস্কৃতিকারী দ্বারা মৃতু্য সমাজকে তিলে তিলে অধঃপতনের দিকে নিয়ে যাবে। এ ছাড়া অন্যায়, অনৈতিকতায় সমাজে যেমন বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টি হয়। তেমনি সামাজিক বৈষম্যেরও সৃষ্টি হয়ে থাকে। ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান তৈরি হয়। ফলে সমাজে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দানা বেঁধে ওঠে। এমতাবস্থায়, আমাদের তরুণ ছাত্রসমাজকে অনতিবিলম্বে এহেন ন্যক্কারজনক ও ভয়াবহ পরিস্থিতির জিম্মি দশা থেকে মুক্ত করতে হবে। আমাদের তরুণ সমাজকে আগামীর সুন্দর ভবিষ্যৎ গঠনে প্রেরণা শক্তিতে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। তাদের স্বপ্ন যদি আবরার হত্যার মতো নৃশংসতায় চুরমার ও নিঃশেষ হয়ে যায় তাহলে আমরা জাতি হিসেবে নিকৃষ্ট জাতিতে পরিণত হবো। আসুন সংঘাত নয়, হিংসা নয়, প্রতিহিংসা নয়, ভেদাভেদ নয় দলমত-নির্বিশেষে মানবতার সেবায় নিজেকে নিবেদিত করে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে উন্নত ও সভ্য দেশে পরিণত করার মহান ব্রত গ্রহণ করি এবং একে অন্যের সহযাত্রী হই। ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ: লেখক, কলামিস্ট ও গবেষক