অনৈতিক সম্পর্কের বলি বাবা-মেয়ে

যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি

প্রকাশ | ২২ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
প্রতিবেশী মাইনুদ্দীন নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে 'অনৈতিক সম্পর্ক' দেখে ফেলায় মা হাসিনা বেগম নিজ হাতে খুন করেন চার বছর বয়সী সন্তান ফাতেমাকে। এর পরে কথিত প্রেমিকের সঙ্গে মিলে হাসিনা শ্বাসরোধের পর ছুরিকাঘাতে খুন করেন স্বামী আবু তাহেরকে। আর এমন নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামে। নিজ বাসায় বাবা-মেয়ে খুনের ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের পর রোববার সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ জানিয়েছে এ তথ্য। তথ্য মতে, লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ হাসিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নিয়ে রাতে গ্রেপ্তার দেখায়। আর ভোর রাতে নোয়াখালী সদর উপজেলা থেকে মাইনুদ্দীনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রসঙ্গত আমরা বলতে চাই, পরকীয়ার কারণে এমন নৃশংস ঘটনা বিভিন্ন সময়েই ঘটছে যা পত্রপত্রিকায় উঠে আসে। বলাই বাহুল্য যে, এমন হত্যাকান্ড নৃশংস ও বর্বরতার শামিল। আমরা মনে করি, যখন পারিবারিক ও সামাজিক হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলো গণমাধ্যমে আসছে তখন এই চিত্র কতটা ভীতিকর তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পরিস্থিতি এমন যেন, একটি ঘটনার নৃশংসতা ছাড়িয়ে যাচ্ছে আরেকটিকে। সঙ্গত কারণেই, সংশ্লিষ্টদের এটা আমলে নেয়া জরুরি, সামাজিক ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব-কলহের কারণে অবলীলায় খুন হচ্ছে মানুষ। এ ছাড়া পত্রপত্রিকায় দৃষ্টি রাখলেই স্পষ্ট হয় আশঙ্কাজনকহারে ঘটছে পারিবারিক হত্যাকান্ড। বাবা-মায়ের হাতে সন্তান হত্যার ঘটনা যেমন ঘটছে, তেমনি এমন ঘটনা সামনে আসছে যে, সন্তানের হাতে জন্মদাতা বাবা-মায়ের প্রাণহানিও ঘটছে। পরকীয়ার কারণে স্বামীর হাতে স্ত্রী এবং স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন হওয়ার ঘটনাও কম নয়। ফলে একেকটি ঘটনায় পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, মানুষের নৈতিক স্খলন, লোভ ও হিংস্রতার ভয়াল রূপের কাছে টিকতে পারছে না সামাজিক কিংবা পারিবারিক বন্ধন। আমরা মনে করি, সামগ্রিক বিষয়গুলো আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। সমাজবিজ্ঞানীরাও বলছেন, সামাজিক বন্ধনে চিড় ধরা, অস্থিরতা ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব-টানাপড়েনে আপনজনকে খুনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে এটাও উলেস্নখ করা দরকার, এর পেছনে উলেস্নখযোগ্য কারণ হিসেবে উঠে আসছে হতাশা, পরকীয়া, আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কমে যাওয়া, নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়সহ বিভিন্ন কারণ। ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি সামাল দিতে পারিবারিক বন্ধন জোরদার করার উদ্যোগ গ্রহণ যেমন জরুরি, তেমনিভাবে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বোঝাপড়া বাড়াতে হবে। এ ছাড়া সুশিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। সংশ্লিষ্টদের এটাও আমলে নেয়া দরকার- এ ধরনের ঘটনা রোধ করতে না পারলে বসবাসের স্বাভাবিকতা নষ্ট হবে। যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। ফলে পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। আর এই লক্ষ্যে করণীয় নির্ধারণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নও নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের অভাবে পারিবারিক বন্ধন ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। ফলে সমাজে বেড়ে চলেছে অপরাধও যা অত্যন্ত উৎকণ্ঠার। আমরা মনে করি, এবারের যে ঘটনাটি ঘটল, তা আমলে নিয়ে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে উদ্যোগ গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টরা তৎপর হবেন। মনে রাখতে হবে, এ ধরনের ঘটনা রোধ করতে না পারলে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হতে থাকবে, নানা ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যেভাবে একের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ও পারিবারিক কলহ বাড়ছে, অনৈতিক সম্পর্কের জের ধরে নৃশংস ঘটনা ঘটছে- এর মধ্যদিয়ে অবক্ষয়ের ভয়াবহ রূপই স্পষ্ট হয়। সঙ্গত কারণেই এসব ঘটনা রোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি রাখার বিকল্প নেই।