পাঠক মত

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে নামাজ

প্রকাশ | ২৩ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
নামাজ এমন এক নেয়ামত যা সরাসরি প্রিয় নবী মুহাম্মদের (সা.) মাধ্যমে আলস্নাহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মানুষের জন্য ফরজ করেছেন। যা আলস্নাহতায়ালার সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। বান্দার ইবাদতি জিন্দিগির একটি শ্রেষ্ঠ অনুষঙ্গ হলো নামাজ। নামাজ ইসলামের দ্বিতীয় রুকন। নামাজ আলস্নাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ও সর্বোত্তম আমল। কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব হবে। যদি তার নামাজ ঠিক হয় তবে তার সব আমল-ই ঠিক হবে। আর তার নামাজ বিনষ্ট হলে, তার সব আমল বিনষ্ট হবে। অভ্যাস করুন দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার কারণ এর লাভ শুধু আখেরাতে নয় দুনিয়ার জীবনেও রয়েছে এর অসংখ্য উপকারিতা ও বৈজ্ঞানিক যথাযথ ব্যাখ্যা। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের একটা নীতি হলো, মানুষের অন্তর যখন শান্তি লাভ হয় তখন দেহের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর শক্তিও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের শক্তি শারীরিক সুস্থতার ভিত্তি হিসাবে কাজ করে। যার ফলে মানুষের শুধু প্রতিভা ও বুদ্ধিমত্তার বিক্ষিপ্ততা এবং চিন্তার ভিড় থেকে নিষ্কৃতি লাভ হয় না বরং শারীরিক দিক দিয়েও মানুষের শক্তিসামর্থ্য বৃদ্ধি পায়। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে নামাজের গুরুত্ব: এআর কমর নামে একজন বিশেষজ্ঞ তার ইউরোপের ডায়েরিতে লিখেছেন, আমি নামাজ আদায় করছিলাম। একজন ইংরেজ গভীর মনোযোগ দিয়ে আমার নামাজ আদায় প্রত্যক্ষ করছিলেন। নামাজ শেষ হওয়ার পর তিনি বললেন, আপনি ব্যায়ামের এ পদ্ধতি আমার লেখা বই থেকে শিখেছেন? কারণ আমিও ব্যায়ামের এরকম পদ্ধতিই আমার বইতে উলেস্নখ করেছি। যে ব্যক্তি এরকম পদ্ধতিতে ব্যায়াম করবে সে কখনো জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হবে না। সে ইংরেজ তারপর ব্যাখ্যা করে বললেন, দাঁড়ানো অবস্থা থেকে সরাসরি সিজদার ব্যায়ামে চলে গেলে হৃৎপিন্ডের ওপর চাপ পড়ে। এ কারণেই আমি আমার বইতে এরকম ব্যায়াম করতে নিষেধ করেছি। আমি লিখছি, প্রথমে দাঁড়িয়ে ব্যায়াম করতে হবে এবং হাত বাঁধতে হবে। এরপর খানিকটা ঝুঁকে হাত এবং কোমরের ব্যায়াম করতে হবে। তারপর মাথা মাটিতে ঠেকিয়ে ব্যায়াম করতে হবে। শুধু বিশেষজ্ঞদের দ্বারাই এরকম ব্যায়াম করানো সম্ভব। ইংরেজ লোকটির কথা শেষ হওয়ার পর আমি তাকে বললাম, আমি একজন মুসলিম। ইসলাম এভাবেই নামাজ আদায় করার নির্দেশ দিয়েছে। আপনার লেখা বই আমি কখনো চোখে দেখিনি, পাঠও করিনি। আমরা দিনে পাঁচবার এভাবে নামাজ আদায় করি। আমার কথা শুনে তার বিস্ময়ের অবধি রইল না। তিনি ইসলাম সম্পর্কে আমার কাছে আরও নানা তথ্য জানতে চাইলেন। পাকিস্তানের একজন হৃদরোগী তার হৃদরোগের নানা রকম চিকিৎসা নিতে নিতে একপর্যায়ে অস্ট্রেলিয়ায় যান। সেখানে হার্ট স্পেশালিস্ট তাকে পরীক্ষা করার পর কিছু ওষুধ দেন এবং ব্যায়াম করার পরামর্শ দেন। ব্যায়ামের ব্যাপারে ডাক্তার বলেন, আপনাকে আমার ফিজিও ওয়ার্ডে আমার তত্ত্বাবধানে আট দিন ব্যায়াম করতে হবে। রোগী ব্যায়াম অনুশীলন করে দেখলেন যে, সে ব্যায়াম সম্পূর্ণ নামাজের মতো। রোগী সঠিক নিয়মেই ব্যায়াম অনুশীলন করছিলেন। ডাক্তার এ অবস্থা দেখে অবাক হয়ে বললেন, আপনি কীভাবে এত কঠিন ব্যায়াম এত তাড়াতাড়ি আয়ত্ত করলেন? আমার অন্য রোগীদের তো এ ব্যায়াম অনুশীলন কমপক্ষে আট দিন সময় লেগে যায়। রোগী জানালেন, আমি একজন মুসলিম। আপনার শেখানো ব্যায়াম তো সম্পূর্ণই নামাজের মতো। এ কারণে এ ব্যায়াম অনুশীলনে আমার কোনো সমস্যা হয়নি। পাকিস্তানি ডাক্তার মাজেদ যামান ওসমানী ইউরোপে ফিজিওথেরাপিতে উচ্চ ডিগ্রির জন্য গেলেন। সেখানে তাকে ব্যায়াম সম্পর্কে যা কিছু শেখানো হলো সেই পাঠ ছিল পুরোপুরি নামাজের মতো। তিনি অবাক হয়ে বললেন, এ পর্যন্ত শুধু ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে আমি নামাজ আদায় করেছি, কিন্তু এখানে দেখতে পাচ্ছি বিস্ময়কর ব্যাপার। নামাজের মতো ব্যায়ামের মাধ্যমে বড় বড় রোগ ভালো হয় যাচ্ছে। ডাক্তার সাহেব লিখে দিলেন, এ ব্যায়াম অনুশীলন মাধ্যমে যেসব রোগ আরোগ্য হতে পারে তা হলো- মস্তিষ্কের রোগ বা মেন্টাল ডিজিজ, স্নায়বিক রোগ, মানসিক রোগ, অস্থিরতা ও অবসাদজনিত রোগ, হৃদরোগ, আর্থাইটিস, ইউরিক এসিড থেকে সৃষ্ট রোগ, পাকস্থলীর ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং প্রতিক্রিয়া সৃষ্ট অন্যান্য রোগ, চোখ এবং গলার রোগ। বিখ্যাত একজন আমেরিকান ডাক্তার তার এক সাক্ষাৎকারে নামাজ এবং ইসলাম সম্পর্কে তার জীবনের অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, নামাজ হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ ও ভারসাম্যপূর্ণ ব্যায়াম। এতে শারীরিক ও পাশবিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার প্রশ্ন দেখা দেয় না। যিনি নামাজের এ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছেন তিনি সম্ভবত আধুনিক যুগের যান্ত্রিক এবং মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা বিবেচনা করেই এ পদ্ধতির বিন্যাস ঘটিয়েছেন। নামাজে হাত তোলা, হাত বাঁধা, নিচের দিকে চোখ রাখা, আবার হাত ছেড়ে দেয়া, ঝুঁকে যাওয়া, মন মস্তিষ্ককে কেন্দ্রীভূত রাখা, অধিক রক্ত সঞ্চালনের সুযোগ দেয়া, কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে হাঁটু ভেঙে বসা, এসব কিছুই হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ ব্যায়ামের পদ্ধতি। দেওয়ান সিং মাফতুন ছিলেন একজন প্রখ্যাত ভারতীয় সাংবাদিক এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী। তিনি রিয়াসাত নামে একটি সাময়িক বের করতেন। এ সাময়িকীর একটি সংখ্যায় তিনি লিখেছেন, নামাজ সময়ানুবর্তিতা শিক্ষা দেয়। কেউ যদি ডিসিপিস্নন শিখতে চায় সে যেন নামাজ সম্পর্কে চিন্তা করে। নামাজের মধ্যে প্রভু ও ভৃত্যের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না। সব মুসলমান যদি সঠিকভাবে নামাজ আদায় করতে শুরু করে তবে কোরআনের ঘোষণাই বাস্তবায়িত হবে, মুসলমানরাই বিজয়ী হবে। দেহ, সমাজ সংস্কার ও পরিশুদ্ধির উৎকৃষ্ট ব্যবস্থা হচ্ছে নামাজ। নামাজের মাধ্যমে আলস্নাহতায়ালা সন্তুষ্ট হন। হাফেজ ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার আহমদ বলেন, একবার ওয়াশিংটনে একজন ত্বক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে আমার দেখা হয়। তিনি বলেন, আমার ইচ্ছা সারা দেশের মানুষকে নামাজী বানিয়ে দিই। আমি জানতে চাইলাম, আপনার এরকম ইচ্ছা হওয়ার কারণ কি? তিনি বললেন, আপনি তো একজন ইঞ্জিনিয়ার, আপনি বুঝতে পারবেন, মানবদেহের ফিজিওলোজি লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, মানুষের হৃৎপিন্ড রক্ত প্রবেশ করায় আবার বেরও করে দেয়। হৃৎপিন্ডে তাজা রক্ত প্রবেশ করে। যখন মানুষ বসে বা দাঁড়ায় তখন দেহের নিচের অংশে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়, এ সময়ে নিচের অংশে প্রেসার বা চাপও বৃদ্ধি পায়। ইমাম যখন কোরআন তেলাওয়াত করে তখন মোকতাদিরা গভীর মনোযোগের সঙ্গে তা শ্রবণ করে। এ তেলাওয়াত এবং শ্রবণের মাঝখানে একটি বিশেষ রকমের রশ্মি তৈরি হয়। প্রখ্যাত আধ্যাত্মবিশারদ লিড বিটার বলেছেন, প্রতিটি শব্দ হচ্ছে একটি ইউনিট। এ ইউনিট থেকে একটি তীব্র আলো বের হয়। সেই আলো পজিটিভ এবং নেগেটিভ হয়ে থাকে। কোরআনের উচ্চারিত প্রতিটি শব্দই পজিটিভ। নামাজীর ওপর যখন সেই শব্দের প্রভাব পড়ে তখন তাদের বহু রোগ শেষ হয়ে যায়। রিসার্চ ইন দি ফেনোমেনন অব স্পিরিচুয়্যালিজম গ্রন্থের লেখক বলেছেন, লোভ, লালসা, কৃপণতা, হিংসা, ঘৃণা প্রতিশোধ গ্রহণ এরকম ঘৃণ্য অভ্যাসের কারণে মানুষ মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়, তা থেকে মুক্তি পাওয়া মানুষের সাধ্যাতীত। একমাত্র মৃতু্যর মাধ্যমেই মানুষ এসব রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারে, কিন্তু এসব রোগে আক্রান্ত মানুষ যদি খুশুখুযুর সঙ্গে নামাজ আদায় করতে শুরু করে তবে শিগগিরই এসব রোগ থেকে মুক্তিলাভ করতে সক্ষম হবে। প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ভাইস এডমিরাল তার রচিত 'আসবর্ন মূর দি ভয়েস' গ্রন্থে বলেছেন, নামাজের বিনয় ও নম্রতা নামাজের অংশ নয়; বরং এসব হচ্ছে শান্তির অংশ। তিনি আরও বলেছেন, কেউ যদি আধ্যাত্মিকতার শীর্ষে উন্নীত হতে চায় তবে তার প্রতি আমার পরামর্শ হচ্ছে, নামাজ পড়ো, নামাজ পড়ো, নামাজ পড়ো। আরিফ ইকবাল নূর শিক্ষার্থী: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়