বেড়েছে যৌন নির্যাতন

কার্যকর পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ২৩ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দিনে দিনে বাড়ছে যৌন নির্যাতনের ঘটনা। এর ফলে দেশের সচেতন মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। চলতি বছরের ফেব্রম্নয়ারি-মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিল-মে মাসে সহিংস ঘটনা কমলেও যৌন নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে ৭৮ দশমিক ০৭ শতাংশ। ওই সময় নির্যাতনের শিকার হওয়া ২২৫ জনের মধ্যে নিহত হয় ৬ জন এবং আহত হয় ১১৯ জন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোসাইড স্টাডিজ সেন্টারের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে (পিস রিপোর্ট) এ চিত্র উঠে এসেছে। হঠাৎ করে এই দুই মাসে কেন যৌন নির্যাতন এত বেড়ে গেল তা গুরুত্বসহকারে দেখা উচিত। যেখানে দেশে দিনে গড়পড়তা ১ দশমিক ৫ থেকে ২ শতাংশ সেখানে এই দুই মাসে গড়ে প্রতিদিন চারটি ঘটনা ঘটে। এই সময়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ঘটনা ঘটেছে ২৬০০টি। এসব ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৮১২ জন, আহত হয়েছে ২৫৬৬ জন। এ সময় যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২২৫টি। বন্ধুকযুদ্ধ হয়েছে ১০৫টি এবং আটক করা হয়েছে ৫১০৪ জনকে। জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত সংবাদগুলো পর্যালোচনা করে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। অন্যান্য অপরাধের তুলনায় যৌন নির্যাতন বা সহিংসতার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি মানবাধিকার কর্মীদের উদ্বিগ্ন করছে। সামাজিক অস্থিরতা ও বিচারহীনতার কারণেই যৌন সহিংসতা বাড়ছে। অপরাধ করে নিষ্কৃতি পাওয়ার একটি সংস্কৃতি চলছে। এর পাশাপাশি সামাজিক অবক্ষয়ও একটা কারণ। মনে রাখতে হবে সমাজে নারীর অগ্রগতি হয়েছে এটা যেমন সত্য একইভাবে সত্য পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির এখনো পরিবর্তন হয়নি। যার কারণে নারী ঘরে-বাইরে নির্যাতিত হচ্ছে। সমাজ পরিবর্তন মানে সামাজিক কাঠামো ও সমাজের মানুষের কার্যাবলি ও আচরণের পরিবর্তন। তাদের মানসিকতার পরিবর্তন। বিশৃঙ্খল অপরাধপ্রবণ অবক্ষয়গ্রস্ত সমাজে বসবাস করে উন্নত রুচি ও সংস্কৃতির অধিকারী হওয়া যায় না। এমন সমাজে হত্যা, সন্ত্রাস, যৌন নির্যাতনের ঘটনা বন্ধ করা সহজ কাজ নয়। আমরা চাই, পরিকল্পিত ও বিন্যস্ত সমাজ। নীতিবোধ ও চারিত্রিক মূল্যবোধ সমাজ গঠনের প্রধান শক্তি, যা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। কোনোভাবেই আমাদের সমাজ যেন আলোর দিকে অগ্রসর হতে পারছে না। কূপমন্ডূকতা যেমন আমাদের সমাজকে দিন দিন গ্রাস করছে, তেমনি নারীর ক্ষেত্রেও যেন সমাজ দিন দিন আরও নিষ্ঠুর হয়ে উঠছে। নিষ্ঠুরতার বলি হচ্ছে নারী। কোনোভাবেই তা রোধ করা যাচ্ছে না। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও নারীরা নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হতে থাকবে, নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হবে- এটা যেখানে সমর্থনযোগ্য নয়, সেখানে দেখা যাচ্ছে শুধু মফস্বল বা গ্রামে নয়, রাজধানী ঢাকাতেই নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের হার ৭০ শতাংশ বেড়েছে। এ বিষয়টি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক এবং সার্বিক অর্থেই আশঙ্কারও বটে। চারদিকের অবস্থা দেখে আমাদের রক্ত হিম হয়ে যাচ্ছে। ঘুমহীন রাত কাটাতে হচ্ছে। সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার কারণেই মূলত এমনটি হচ্ছে। রাষ্ট্রের মধ্যে শৃঙ্খলা না থাকলে সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে এটাই স্বাভাবিক; যার কারণে সামাজিক অবক্ষয় এত চরমে পৌঁছেছে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের ভয়াবহ চিত্র ভয়ঙ্করভাবে উদ্বেগজনক। মানুষ অতিমাত্রায় প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় যান্ত্রিক হয়ে গেছে। ফলে মানবিক মূল্যবোধ লোপ পেয়েছে। অন্যায়টাকেই তারা স্বাভাবিক মনে করছে। সামাজিক সুস্থতা আনয়নের পাশাপাশি নতুন সমাজ নির্মাণের জন্য এ ধরনের অবক্ষয়কে প্রতিরোধ করতে হবে এবং যে কোনো মূল্যে। এ জন্য ব্যাপকভাবে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন এবং এর কোনো বিকল্প নেই।