পাঠক মত

নবপ্রজন্মের বিপথগামিতার কারণ

প্রকাশ | ১০ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

আব্দুল খালেক মন্টু বগুড়া
দশর্নশাস্ত্রের তত্ত¡ানুযায়ী নতুন প্রজন্মের সুপথ ও বিপথগামিতার প্রধান কারণ সাধারণত দুটি। বংশগতি (ঐবৎবফরঃু) ও পরিবেশ (ঊহারৎড়হসবহঃ)। মানব ইতিহাসের প্রথম থেকেই বংশগতি নতুন প্রজন্মের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর দারুণ প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। চারিত্রিক গুণাবলিসম্পন্ন পরিবারের জাতকেরা সাধারণত সুপথগামী হয়ে বেড়ে ওঠে। অন্যদিকে চরিত্রহীন পরিবারের সন্তান-সন্ততি বিপথগামী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়েই বড় হয়। অবশ্য ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। যেমনÑ দৃষ্টিনন্দন পরিচ্ছন্ন বাগানেও অসাবধানতাবশত আগাছা জন্মাতে পারে। তেমনি গবরেও পদ্মফুল ফুটতে পারে। শিশুরা সাধারণত তাদের পারিবারিক পরিবেশের মধ্যে বেড়ে ওঠে এবং এই পরিবেশই তাদের জীবনে ছাপ রাখে গভীরভাবে। কিন্তু বড় হওয়ার একপযাের্য় তাদের সামাজিক আঙিনায় পা রাখতে হয়। সামাজিক পরিবেশ এ সময় তাদের প্রচÐভাবে আবতির্ত-বিবতির্ত করে চলে। সামাজিক পরিবেশ পরিশুদ্ধ বা সুষ্ঠু না হলে কিশোর-যুবারা বিপথগামী হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। প্রচলিত সমাজে নানাবিধ সংস্কার-কুসংস্কার, আচার-অনাচার, সু-কু বিনোদন, সমাজনীতি, কৃষ্টি-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি-অপসংস্কৃতি, ধমর্-অধমর্, সু-কু রাজনীতি ইত্যাদি নতুন প্রজন্মের অন্তরে দারুণ প্রভাব বিস্তার বা ছাপ ফেলে। পরিবার, সমাজ, ছাত্র ও জাতীয়জীবনে কিশোর-যুবাদের গঠনমূলক পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়ার দায়িত্ব সাধারণত অভিভাবক, শিক্ষক, সমাজপ্রধান ও রাজনীতিকদের। শিশুদের প্রথম শিক্ষক হলেন মা। তাই মানুষের মতো মানুষ হওয়ার প্রথম পাঠ নিতে হয় মায়ের কাছে। তারপর পরিবারের কাছে। সুতরাং শিশুর মানুষ হয়ে ওঠার পেছনে মা-বাবা ও পরিবারের ভ‚মিকা সবচেয়ে বেশি। এই মা-বাবা বা পরিবারের কারণেই সন্তান বিপথগামী হতে পারে এবং হয়ও। মা-বাবারা যেরূপ চিন্তা-চেতনার মানুষ, সন্তান-সন্ততিও সেরূপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এবং হয়ও। কৃষকের ছেলে কৃষক, শ্রমিকের ছেলে শ্রমিক, জেলের ছেলে জেলে, চাকুরের ছেলে চাকুরে, হারামখোরের ছেলে হারামখোর, রাজনীতিকের ছেলে রাজনীতিক, আওয়ামী পরিবারের ছেলে আওয়ামী লীগ, বিএনপির পরিবারের ছেলে বিএনপি, জামায়াত পরিবারের ছেলে জামায়াত, প্রগতিশীল পরিবারের ছেলেমেয়েরা প্রগতিশীল, রক্ষণশীল পরিবারের সন্তানরা রক্ষণশীল, জঙ্গিবাদী পরিবারের বংশধররা জঙ্গি হওয়াই স্বাভাবিক এবং হয়ও। এরূপ সব ক্ষেত্রেই এ অবস্থা বিরাজ করছে। ব্যতিক্রম যে কিছু নেই তা নয়। বংশগতির ধারা আবহমানকাল থেকেই চলে আসছে। জ্ঞানবিজ্ঞান, মননচচার্ ও সংস্কৃতি সাধনার দ্বারা মনমানসিকতার উৎকষর্ লাভের মাধ্যমে বংশগতির খারাপ ধারাগুলোকে উল্টিয়ে ফেলে সত্যিকার মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার প্রচেষ্টা সবসময়ই কাজে লাগে। মা-বাবার চরিত্রগুণ বা দোষের উত্তরাধিকারী হয় তাদের সন্তান-সন্ততি তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মতোই। সব ধমের্ই সখ্য ও মানবতার কথা, মানুষের কল্যাণের কথা বলা হয়েছে। তাই নিজ নিজ ধমর্ সঠিকভাবে শেখানোর দায়িত্ব মা-বাবা ও পরিবারকেই নিতে হবে সবার আগে এবং সন্তান-সন্ততিরও এ বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া উচিত। এমন হলে ধমের্র ভুল ব্যাখ্যা দঁাড় করিয়ে কাউকে বিপথে নেয়া সম্ভব নয়। ছোট ছেলেমেয়েদের সামনে মা-বাবা বা পরিবারের সদস্যদের ভালো কাজের উদাহরণ দেখাতে হবে। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কথা। শিক্ষকরা যদি সুপÐিত হন, মুক্তমনের মানুষ হন, চিন্তায়-কথায়-কাজে সত্যনিষ্ঠ হন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ যদি শিক্ষাদানের উপযোগী হয়, তাহলে ছাত্রছাত্রীরাও সঠিকভাবেই প্রভাবিত হয়ে গড়ে ওঠার পরিবেশ পায়। আর এর ব্যতিক্রম হলে যা হওয়ার তাই হয়। সন্তান-সন্ততি বা ছাত্রছাত্রীরা বিপথগামী হয়। অবশ্য এরও যে ব্যতিক্রম নেই তাও নয়। তবে তা খুবই সামান্য।