কঠোর নজরদারির বিকল্প নেই

ইয়াবার বৃহৎ চালান আটক

প্রকাশ | ১০ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ২ লাখ ৬ হাজার পিস ইয়াবাসহ চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। লবণবোঝাই দুটি গাড়িতে করে ইয়াবার বিপুল এই চালান ঢাকায় আনা হয়েছে, যার বাজারমূল্য সাত কোটি ২১ লাখ টাকা। র‌্যাবের দেয়া তথ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গাড়ি চালানোর ছদ্মবেশে মাদক ব্যবসা করতেন বলে জানিয়েছেন। এ যাবত এই চক্রটি আটটি চালানও ঢাকায় এনেছে। সরকার তথা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, মাদকের বিস্তারে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে, এর মাঝে মারণনেশা ইয়াবার এই বৃহৎ চালানের বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক পরিস্থিতিকেই নিদের্শ করে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোরবানির ঈদকে টাগের্ট করে ইয়াবা চোরাচালানকারী চক্রটি কক্সবাজার থেকে লবণবোঝাই দুটি গাড়িতে করে ইয়াবার এই চালানটি রাজধানীতে নিয়ে আসে। এদের উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা থেকে সুযোগ বুঝে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এগুলো সরবরাহ করা। ইয়াবা বহনে এই চক্রটি যে গাড়ি ব্যবহার করেছে তারও কোনো লাইসেন্স নেই। আটককৃতরা জানিয়েছে, ইয়াবা ব্যবসায়ী চক্রের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পরই তারা এ ব্যবসায় নেমেছেন। এ চক্রের সদস্য ১৫ থেকে ২০ জন, যারা সবাই পরিবহন-সংশ্লিষ্ট খাতে কমর্রত। নিজেদের পেশার আড়ালে গোপনে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তারা। এই চক্রের নিয়ন্ত্রণকারী টেকনাফের রফিক দালাল এবং ব্যবস্থাপনার সাবির্ক দায়িত্বে রয়েছে চালক মাসুম। কক্সবাজারের স্থানীয় কিছু দালাল মাদক ডিলারদের যোগসাজশে পণ্যবাহী পরিবহনের চালক ও সহকারীকে মোটা অঙ্কের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে গাড়িতে ইয়াবা পরিবহনের জন্য প্রলুব্ধ করে থাকেন। মাদক লেনদেনের অথর্ সাধারণ ব্যাংক, ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার বা হুন্ডির মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয়ে থাকে বলেও গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা র‌্যাবকে জানিয়েছেন। চার জন আটকের পর এই চক্রের বাকি সদস্য এবং এদের মূলহোতাদের ধরতে র‌্যাব তৎপর বলেও জানা যায়। কয়েকমাস ধরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদকের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে অভিযান পরিচালনা করছে সারাদেশে। ইতিমধ্যে অনেক মাদক ব্যবসায়ী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই নিহতের ঘটনা আসছে গণমাধ্যমে। উদ্বেগের বিষয় হলো, মাদক কারবারিরা যে এরপরও থেমে নেই, তা রাজধানী থেকে বিপুল ইয়াবার চালান আটকের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট। পাশাপাশি এটাও স্পষ্ট যে, মাদক চক্র কৌশল পাল্টে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফঁাকি দিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। তবে কিছুতেই বোধগম্য নয় যে, সীমান্তের কড়া পাহারা ভেদ করে কীভাবে ইয়াবার এই চালানটি সুদূর কক্সবাজার থেকে খোদ রাজধানী পযর্ন্ত এসে পেঁৗছাতে পারল। আমরা মনে করি মাদক কারবারীদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি এসব বিষয়েও সংশ্লিষ্টদের খতিয়ে দেখা কতর্ব্য। চলমান অভিযানের মধ্যেও মাদক পাচারকারীরা যেন মরিয়া হয়ে উঠেছে। মাদকপাচারকারীচক্রের রাঘববোয়ালরা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মাদক ছড়িয়ে দিচ্ছে। দিন দিন মাদকের কালো থাবা যেভাবে সমাজে সম্প্রসারিত হচ্ছে, ভয়াবহ রূপধারণ করছে তা রোধ করতে না পারলে জাতির ভবিষ্যৎ যে মুখ থুবড়ে পড়বে তা নতুন করে বলাই বাহুল্য। যা নেশাগ্রস্ত করে সেটাই মাদক। অবাক হলেও সত্য যে, প্রতিবেশী দেশগুলো থেকেই এগুলো দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের মধ্যেও এ বৃহৎ চালান আটকের ঘটনা এটাই প্রমাণ করে, রাঘববোয়ালরা এখনো সক্রিয়। এত কঠোর অভিযান পরিচালনার পরও মাদক পাচার কেন বন্ধ হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখাও সময়ের দাবি। সবোর্পরি বলতে চাই, মাদক বহু সংসার তছনছ করেছে, করছে। মাদকের বিরূপ প্রভাবের কথা সবারই জানা। ফলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাদকবিরোধী অনমনীয় অভিযান চলমান থাকবে বলেই প্রত্যাশা করি। শুধু অভিযান পরিচালনা নয়, সীমান্ত গলে যাতে মাদক দেশের অভ্যন্তরে ঢুকতে না পারে, সে ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা জরুরি। দেশের মধ্যে মাদক উৎপাদনের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে তা ধ্বংস করাও অপরিহাযর্। গ্রেপ্তার করতে হবে রাঘববোয়ালদের। তাদের কঠোর শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলনও বেগবান করা দরকার। দেশ থেকে মাদক নিমূের্ল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারির বিকল্প থাকতে পারে না।