গণতান্ত্রিক ধারায় গণতন্ত্রের জয় হোক

গণতান্ত্রিক ধারায় গণতন্ত্রকে উন্নয়নের স্বাথের্ এগিয়ে নিতে হবে। সব জাতীয় আন্তজাির্তক ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনকে জনগণের উন্নয়নের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়া জরুরি।

প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

মাহমুদুল হক আনসারী
জুলুম, নিপীড়ন, নিযার্তনের বিরুদ্ধে মানবতার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গণতন্ত্র। গণতন্ত্র মানে মানুষের কথা বলার অধিকার। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কমর্সংস্থান পাওয়াই হলো গণতন্ত্র। গণতন্ত্র অথর্ কয়েক বছরের মাথায় গতানুগতিক নিবার্চন দিয়ে ক্ষমতার হাতবদল নয়। গণতন্ত্রের অধিকার হলো জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। দেশের স্বাধীনতা সাবের্ভৗমত্ব স্বাধীনভাবে রক্ষা করা। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানচিত্র সংরক্ষণ করা। পররাষ্ট্রনীতির সব নিয়ম-নীতি মেনে দেশকে সাবির্কভাবে এগিয়ে নেয়া। কারও সঙ্গে শত্রæতা নয়Ñ বন্ধুত্বের মাধ্যমে সুসম্পকর্ বজায় রাখা। বাংলাদেশের প্রতিটি ইঞ্চি মাটির সবর্দা সুরক্ষা প্রতিষ্ঠা করা। দেশের বডাের্র বসবাসরত সব শ্রেণির ও পেশার জনগণের সুরক্ষা প্রতিষ্ঠা করা। গণতন্ত্র অথর্ দেশের সবর্স্তরের মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। সাম্প্রদায়িকতার ঊধ্বের্ থেকে সব ধরনের পেশা ও মানুষের কল্যাণে রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। জনগণের কল্যাণে যারাই দেশ ও জনগণকে ভালোবাসবে তাদেরই নিবাির্চত করা জনগণের দায়িত্ব। যারাই দেশকে উন্নয়নে অগ্রগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাবে তাদেরই বিজয় করার ভোটারদের নৈতিক দায়িত্ব। স্বাধীনতা সাবের্ভৗমত্ব জনগণের মৌলিক অধিকার কমর্সংস্থান, ঘরে ঘরে শিক্ষিত বেকারদের চাকরির দাবি যারাই পূরণ করতে পারবে তাদেরই জয়ী করা দরকার। স্বাধীনতার পর ক্ষমতার হাতবদল জনগণ বারবার দেখেছে। জনগণ দেখেছে যারাই ক্ষমতায় ছিল তাদের অবৈধ অথের্র পাহাড়। দেশের সম্পদ অথর্ বিদেশে পাচার করে ক্ষুধাথর্ মানুষের কাঙ্গাল করার দৃশ্য জনগণ তাদের অন্তর থেকে এখনো ভুলতে পারেনি। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে দঁাড়িয়ে রাখতে হলে গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক জনবান্ধব একটি সরকার দরকার। আর এ সরকার আসতে হবে নিবার্চনের মাধ্যমে। নিবার্চন হতে হবে নিরপেক্ষ সুষ্ঠু এবং পেশিশক্তি মুক্ত। কালো টাকার দাপট ও ব্যবহার চীর তরে বন্ধ করতে হবে। যখন-তখন কিছু আন্তজাির্তকগোষ্ঠীর অবৈধ নাক গলানো প্রতিরোধ করতে হবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র উন্নয়ন সমৃদ্ধি বেকার সমস্যার কমর্সংস্থান নাগরিক অধিকার সবকিছু এ দেশের জনগণ ঠিক করবে। নিবাির্চত সরকারের পরিকল্পনা সবকিছুর বাস্তবায়ন চায় জনগণ। উন্নয়নের সঙ্গে দুনীির্তর কোনো তুলনা হয় না। উন্নয়ন হতে হবে শতভাগ দুনীির্তমুক্ত। উন্নয়নের সুফল শহর-গ্রাম সবখানে সমানতালে জনগণের নাগালে পেঁৗছাতে হবে। উন্নয়নের নামে অপ্রয়োজনীয় এলাকায় অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়ে অথর্ অপচয় জনগণের সমথর্ন পাবে না। উন্নয়নের বতর্মান ধারাবাহিকতা রাখতে হলে অবশ্যই উন্নয়ন প্রত্যাশী দলকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। বারবার ক্ষমতার পালাবদলে দেশ ও জনগণের কল্যাণের চেয়ে দলের নেতাকমীের্দর লুটপাটের রাস্তা সুগম হয়। বাংলাদেশের ধারাবাহিক রাজনীতি দল ও নিবার্চনের ইতিহাস তাই বলে। এখানে জনগণের কল্যাণের চেয়ে ব্যক্তি দল ও নেতাদের সুবিধাই বেশি দেখা হয়। ফলে জনগণ স্বাধীনতার ৪৭ বছরের মাথায় যে পরিমাণ রাষ্ট্রীয়ভাবে উন্নয়নের সুফল পাওয়ার কথা ছিল সে পরিমাণ সুবিধা থেকে জনগণ বঞ্চিত। স্থানীয় ও জাতীয় নিবার্চন আসলে জাতীয় রাজনৈতিক দল সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাদের বক্তব্য প্রতিশ্রæতি এবং কমর্সূচিতে গ্রামের সহজ-সরল মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়। আসলে ওইসব দল কখনো ক্ষমতার মসনদের নাগাল পায়নি। কিন্তু তাদের বক্তব্যের উত্তেজনা বেশি। জনগণকে ভাবতে হবে দেশের স্বাধীনতার সাবের্ভৗমত্ব নাগরিক ও মানবাধিকার কাদের হাতে নিরাপদ, কারা দেশকে উন্নয়নে এগিয়ে নিতে পারবে। যাদের পক্ষে উন্নয়ন অগ্রগতি অব্যাহত রাখা সম্ভব তাদেরই ভোটের রায় প্রদান করে জয়ী করা দরকার। তাহলেই দেশের ধারাবাহিক উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। সন্ত্রাসী, জঙ্গি, স্বাধীনতার শত্রæ ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে কখনো নিবাির্চত করা সমুচিত হবে না। বতর্মানে দেশ, শিক্ষা, সংস্কৃতি উন্নয়ন কমর্সংস্থান সৃষ্টিতে যেভাবে এগিয়ে চলছে এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। শিক্ষা, বিদ্যুৎ আজ জনগণের নাগালে পেঁৗছে গেছে। সারা দেশে নতুন নতুন কমর্সংস্থান সৃষ্টির জন্য শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠছে। বিদেশি বিনিয়োগ অব্যাহতভাবে আকৃষ্ট হচ্ছে। দেশের সহিংস রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ বিদ্যমান আছে। উন্নয়ন পরিকল্পনা সারা দেশে ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে। দুনীির্তর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং সরকার কঠোর অবস্থানে আছে। কাউকেই দুনীির্তর কারণে ছাড় দেয়া হচ্ছে না। দেশে হাজার হাজার প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক্স, অনলাইন মিডিয়া স্বাধীনভাবে তাদের মতামত নিবন্ধ-প্রবন্ধ প্রচার করে যাচ্ছে। প্রতিদিন নতুন নতুন প্রচার মাধ্যমের সৃষ্টি হচ্ছে। লেখক, প্রাবন্ধিক, মুক্তমনা গবেষকের সৃষ্টি হচ্ছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এখন আর সেশন জটের বেড়াজালে পড়ে না। বছরের নিদির্ষ্ট সময়ে পরীক্ষা রেজাল্ট ক্লাস সবকিছু সুশৃঙ্খলভাবে চলছে। সরকারের কিছু সেক্টরের দুনীির্ত থাকলেও তা কঠোর হস্তে দমনের জন্য সরকারের উচ্চমহল থেকে নিদের্শনা আসছে। দুনীির্তর অপরাধী কোনো অবস্থায় পার পাবে না। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স-নীতি বাস্তবায়িত হচ্ছে। যুবসমাজকে ধ্বংসকারী মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কারণে আজকে মাদক ব্যবসায়ী পাচারকারী কেউ রেহাই পাচ্ছে না। সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একেবারে শতভাগ মাদক নিমূর্ল ও প্রতিরোধে মাটে তৎপর। এভাবে একদিন দুনীির্তর বিরুদ্ধে ও জিরো টলারেন্স জাতি দেখতে পাবে। যেমনটি আজকের শিক্ষাথীর্রা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করে গোঠা জাতিকে জাগিয়ে দিয়েছে। দেখিয়ে দিয়েছে রাস্তার শৃঙ্খলা ট্রাফিক ব্যবস্থা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। তাদের দুদিনের আন্দোলনে পরিবহন সেক্টর মালিক, শ্রমিক যাত্রীদের তারা বোঝাতে সক্ষম হয়েছে রাস্তার শৃঙ্খলা কীভাবে রাখতে হয়। আমাদের গৌরব আগামী দিনের ভবিষ্যৎ এ শিক্ষাথীর্রাই পারবে দেশকে দুনীির্তমুক্ত একটি আদশর্ ও ন্যায়নীতিপূণর্ সমাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে। তাদের কাছে দেশবাসীর অনেক আশা-প্রত্যাশা। তারা দুনীির্ত কী তা বোঝে না। তাদের কোনো হৃদয় ও অন্তর মানবতার কল্যাণে ছটপট করে। তারা দুনীির্তর স্বজনপ্রীতি সন্ত্রাস নৈরাজ্য অনৈতিকভাবে মানব হত্যা সহ্য করে না। তাই তারা তাদের সতীথের্ক হত্যার প্রতিবাদে সারা দেশে প্রতিবাদের আন্দোলন দেখিয়ে দিয়েছে। এখানে প্রতিদিন প্রতিবছর প্রতিমুহ‚তের্ মানুষ শিক্ষায় চিন্তায় সচেতন হচ্ছে। মানুষের অধিকার এখন কেউ চেপে ধরে রাখতে পারবে না। মানুষ যার যার অধিকার সম্পকের্ অনেক সচেতন। এটা সম্ভব হয়েছে শিক্ষা কমর্সূচি ঘরে ঘরে সম্প্রসারণ হওয়ার কারণে। তথ্যপ্রযুক্তির ইন্টারনেট মোবাইল কম্পিউটার এখন জনগণের হাতের নাগালে। অতীতের একটি সরকার একটি সিম মাত্র ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। আর তখন তো ইন্টারনেট তথ্য প্রযুক্তি ভাবাই মুশকিল ছিল। এখন ৫৫ হাজার টাকার একটি সিম বিনা পয়সায় পাওয়া যায়। এক মিনিটের কথা বলা যখন ছিল দশ টাকায় এখন এক মিনিট কথা বলতে মাত্র দশ পয়সা লাগে। ইন্টারনেট মোবাইল কম্পিউটার তথ্যপ্রযুক্তি দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে পেঁৗছে গেছে। ইউনিয়ন পরিষদের সবক’টি সেন্টারে গ্রামের মানুষ সব রাষ্ট্রীয় তথ্যের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। গ্রামের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষাথীর্রা গ্রামে বসেই তথ্যপ্রযুক্তির সুফল ভোগ করতে পারছে। সব পরীক্ষার ফলাফল মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে ঘরে বসেই পাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় সব খবরাখবর তথ্য-উপাত্ত ইন্টারনেটের মাধ্যমে সঙ্গে সঙ্গেই পেয়ে যাচ্ছে। আবেদন, অভিযোগ যে কোনো সমস্যার জন্য জনগণের সুবিধাথের্ মোবাইল কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এভাবে হিসেব করলে এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে জনগণ বিভ্রান্ত হচ্ছে। সঠিক নিয়মে নিদির্ষ্ট সময়ে জনগণ তাদের আবেদন-নিবেদন, অভিযোগ প্রেরণ করতে পারলেই সেখানে তা নিষ্পত্তি হচ্ছে। বতর্মান প্রধানমন্ত্রী, পুলিশ প্রদানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ওপর অপির্ত দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্গে জনগণের ডাকে দৌড়ে আসেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ থাকলেও গোঠা বাহিনীকে নিয়ে নেতিবাচক সমালোচনার পক্ষপাতী নই। এভাবে বতর্মানে দেশ সব সেক্টরে উন্নয়ন অগ্রগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাওয়া অব্যাহত রাখতে এগিয়ে নেয়ার দল ও ব্যক্তিকে নিবাির্চত করতে হবে। সঠিকভাবে দেশ যদি এভাবে উন্নয়নমুখী এগিয়ে যায় তাহলে বাংলাদেশকে আর কেউ কণ্ঠ চেপে ধরতে পারবে না। নিজস্ব অথার্য়নে পদ্মা সেতুর মতো লাখো কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। বাংলাদেশকে যারা তলাবিহীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে ও দেখাতে চায় তাদের আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে বাংলাদেশ এখন আপন মহিমায় নিজস্ব শক্তিতে স্বাধীনভাবে দÐায়মান। কেউ ইচ্ছে করে ধাক্কা মেরে বাংলাদেশকে পিছনে নিয়ে যাওয়ার দিন শেষ। তাই গণতান্ত্রিক ধারায় গণতন্ত্রকে উন্নয়নের স্বাথের্ এগিয়ে নিতে হবে। সব জাতীয় আন্তজাির্তক ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনকে জনগণের উন্নয়নের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়া জরুরি। মাহমুদুল হক আনসারী: গবেষক, প্রাবন্ধিক সয.যড়য়ঁবধহংধৎর@মসধরষ.পড়স