ডিজিটাল জালিয়াতি চক্র গ্রেপ্তার

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হোক

প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
রাজধানী থেকে ডিজিটাল জালিয়াতির সবর্বৃহৎ একটি চক্রের ‘মাস্টার মাইন্ড’সহ ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। উদ্বেগের বিষয় হলো, চক্রটি দীঘির্দন ধরে বিসিএস, ব্যাংকসহ সরকারি নানা চাকরির নিয়োগে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভতিের্ত জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করে আসছিল। তাদের প্রধান কাজ ছিল, পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র নিয়ে সেটা সমাধান করে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার হলে পরীক্ষাথীের্দর সরবরাহ করা। ধৃত চারজনের কাছে প্রায় ১০ কোটি টাকার অথর্ ও সম্পদের সন্ধান পেয়েছে সিআইডি। বলাই বাহুল্য, দীঘির্দন ধরেই ডিজিটাল জালিয়াতির বিষয়টি আলোচনায় ছিল। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জালিয়াতি রোধে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও এ চক্রের টিকি স্পশর্ করতে ব্যথর্ হচ্ছিল। অবশেষে সিআইডি এই চক্রের সন্ধান পায় এবং তাদের গ্রেপ্তার করে। সবর্বৃহৎ জালিয়াতি চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, সিআইডি গত ১০ মাসে চারটি ধাপে অভিযান চালিয়ে ওই চক্রের ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ভতির্ জালিয়াতি করে এরা কোটিপতি বনে গেছে। তাদের মধ্যে চারজনের ১০ কোটি টাকার সম্পদের হিসাব পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ তদন্ত দলের কমর্কতার্রা। সিআইডি সব শেষ ধাপে গত পঁাচ দিনে এই ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আছেন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) সহকারী পরিচালক (বরখাস্ত) অলিপ কুমার বিশ্বাস, বিএডিসির সহকারী প্রশাসনিক কমর্কতার্ মোস্তফা কামাল এবং রাজধানীর দুটি স্কুলের শিক্ষক। সিআইডি জানায়, আগে গ্রেপ্তার করা ২৮ জনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পরের ৯ জনের মধ্যে তিনজন বৃহস্পতিবার আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়। বাকি ছয়জনকে দু’দিনের রিমান্ড (জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজত) মঞ্জুর করেছে আদালত। স্মতর্ব্য যে, দেশে যখনই বড় ধরনের কোনো জালিয়াতির ঘটনা সামনে এসেছে, তখন সংশ্লিষ্ট কমর্কতাের্দর যোগসাজশের বিষয়টিও বিভিন্নভাবে আলোচনায় এসেছে। সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশ ছাড়া বড় ধরনের জালিয়াতির ঘটনা কিছুতেই সম্ভব নয় বলে বিশেষজ্ঞরা বার বার বলে আসছেন। সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হওয়া জালিয়াতি চক্রের সদস্যদের পরিচয় থেকেও বিষয়টি স্পষ্ট হতে পারে। সিআইডির অপরাধ তদন্ত বিভাগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, কয়েক বছরে জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভতির্ ও সরকারি চাকরিতে শতাধিক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছে চক্রটি। জালিয়াতির মাধ্যমে যারা নিয়োগ পেয়েছে, তাদের বেশ কয়েকজনের তথ্যও সিআইডির কাছে রয়েছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে এদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। সিআইডির কমর্কতার্রা জানান, তাদের মূল লক্ষ্য চক্রটির মূলোৎপাটন করা। জানা গেছে, জালিয়াতি চক্রের মূল হোতাদের একজন মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের ইব্রাহিম। যোগ্যতা না থাকা সত্তে¡ও তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৬তম বিসিএসে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হন। বিষয়টি কতটা উদ্বেগের তা বলাই বাহুল্য। এই ইব্রাহিম দরিদ্র পরিবারের সন্তান হলেও বিলাসী জীবনযাপন করেন। দামি গাড়ি, ডুপ্লেক্স বাড়ির মালিক হয়েছেন তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে। রাজধানীতে রূপালী মানি এক্সচেঞ্জ নামে তার একটি অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানেরও সন্ধান পেয়েছে সিআইডি। সব ঘটনা এক উদ্বেগজনক বাস্তবতাকেই নিদের্শ করে। দেশে বড় ধরনের ডিজিটাল জালিয়াতির ঘটনা কম হয়নি। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ডিজিটাল পদ্ধতির নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। আমরা মনে করি, অপরাধীদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা জোরদারেরও বিকল্প থাকতে পারে না। ২০১৪ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে ‘তথ্যনিরাপত্তা পলিসি গাইডলাইন’ ও ‘সাইবার সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি’ প্রণয়ন করে গেজেটও প্রকাশিত হয়। দেশের বিদ্যমান বাস্তবতায় এর দ্রæত বাস্তবায়নও জরুরি। তথ্যপ্রযুক্তিগত মজবুত নিরাপত্তা অবকাঠামো গড়ে তুলতে ব্যাপকভিত্তিক কমর্সূচি হাতে নেয়া প্রয়োজন। এর জন্য দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে হবে। শুধু প্রতিষ্ঠানের নয়, ব্যক্তিপযাের্য়ও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় জনসচেতনতা সৃষ্টিতে নিতে হবে যথাযথ উদ্যোগ। প্রত্যাশা থাকবে, যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে সিআইডির হাতে গ্রেপ্তারকৃতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হবে। দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে তা জালিয়াতির ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সহায়ক হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।