কৃষি বাদ দিয়ে শিল্পায়ন নয়

প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য অত্যন্ত যৌক্তিক

প্রকাশ | ০৮ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও কৃষির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। কৃষি এবং কৃষককে গুরুত্ব দিয়ে সরকার উন্নয়ন পরিকল্পনা করে থাকে উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কৃষি ও কৃষককে বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন ও শিল্পায়ন নয়। তিনি আরও বলেছেন, এক ফোটা জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কৃষকলীগের ১০ম সম্মেলনে বুধবার তিনি এসব কথা বলেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ। কৃষকরাই বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রাখে। কৃষক ফসল ফলায়, যা থেকে দেশের মানুষের ভরণ-পোষণ চলে। দেশ আজ কৃষি উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ, এতে কৃষকের অবদান রয়েছে। ফলে প্রধানমন্ত্রী ওই সম্মেলনে কৃষক ও কৃষির সাফল্য তুলে ধরে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত সময়োপযোগী উপলব্ধি বলে প্রতীয়মান হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষকের জন্য জাতির পিতার সংগ্রামের কথা উলেস্নখ করে বলেছেন, জনসংখ্যা বাড়বে, খাদ্য চাহিদাও বাড়বে। কাজেই একটি সমাজের জন্য একটি দেশের জন্য কৃষক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলার মানুষ কীভাবে শোষিত-বঞ্চিত, বিশেষ করে কৃষক সম্প্রদায়; ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এটা প্রত্যক্ষ করেছেন। তাই তিনি বাংলাদেশকে স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তাই আমাদের সবসময় লক্ষ্য, কৃষকের অধিকার সংরক্ষণ। আমাদের দেশ আমরা উন্নত করব, শিল্পায়নে যাব কিন্তু কৃষককে ত্যাগ করে নয়, কৃষিকে ত্যাগ করে নয়। কারণ কৃষিই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। তিনি বলেছেন, তার সরকার দেশের উন্নয়ন প্রকল্পটা এমনভাবে নিয়ে থাকে, যাতে কৃষককে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ ছাড়া সরকারের ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এর অর্থ হলো যাতে কৃষি জমি নষ্ট না হয়। যেখানে-সেখানে যত্রতত্র শিল্প প্রতিষ্ঠান কেউ গড়ে তুলতে পারবে না। যারা শিল্পপ্রতিষ্ঠান করতে চায় তাদের ওই অর্থনৈতিক অঞ্চলে পস্নট বরাদ্দ দেওয়া হবে এবং সব ধরনের সার্ভিস সেখানে দেওয়া হবে। কাজেই তারা সেখানে শিল্প গড়ে তুলবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তব্য কৃষি ও কৃষকের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক। আমরা লক্ষ্য করেছি, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর থেকেই কৃষিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আসছে। কৃষিতে ভর্তুকির পাশাপাশি কৃষককে অর্থ সাহায্য দিয়ে 'কৃষিবান্ধব সরকার' হিসেবে দেশবাসীর কাছে আস্থা অর্জন করেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। অন্যদিকে সরকার কৃষিতে গুরুত্ব দেওয়ায় কৃষি বিজ্ঞানীরা জিন আবিষ্কারের মধ্যদিয়ে কৃষি উৎপাদনে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে চলেছেন। ধান, সবজি, ফলের নানান উন্নত জাত আবিষ্কার এবং পরিবর্তিত জলবায়ু সহনশীল জাত উদ্ভাবন করায় কৃষি উৎপাদনও বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বলাই বাহুল্য, কৃষি খাতে সরকারের সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার সুফলই বর্তমানে পাচ্ছেন দেশের জনগণ। কৃষির এই সাফল্য উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'কৃষিজমি বাঁচাতে হবে। কারণ, ১৬ কোটির ওপর মানুষকে আমাদের খাবার দিতে হবে। অবশ্য আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করায় এখন পুষ্টির দিকে নজর দিয়েছি। ডিম, মাংস, মিঠা পানির মাছ, তরিতরকারি এবং ধান উৎপাদনে সরকারের সাফল্যও তিনি তুলে ধরেন। পাশাপাশি সরকারের 'আমার বাড়ি আমার খামার' কর্মসূচির উলেস্নখ করে যার যার বাড়িকে তার তার খামারে পরিণত করার আহ্বানও জানান তিনি। তিনি প্রশ্ন করেন, 'কেউ বসে থাকবে কেন, সবাই কাজ করবে। যে যেভাবে উৎপাদন করতে চায়, যা উৎপাদন করতে চায়। আমরা সেই সুযোগটা দেবো এক টুকরো জমিও অনাবাদি থাকবে না।' প্রধানমন্ত্রীর এই দৃঢ়তা এবং কৃষির প্রতি অনুরাগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই আমরা মনে করি। সর্বোপরি বলতে চাই, কৃষকের উৎপাদিত পণ্য সমবায়ের মাধ্যমে বাজারজাতকরণের যে উদ্যোগের কথা প্রধানমন্ত্রী উলেস্নখ করেছেন, তা সময়োপযোগী এবং এ দেশের কৃষকের প্রতি শেখ হাসিনার সুচিন্তিত পরিকল্পনারই বহিঃপ্রকাশ। প্রত্যাশা থাকবে, প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য সংশ্লিষ্টরা বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেবেন। কৃষিই যেহেতু বাংলার প্রাণ সেহেতু কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে এমন যৌক্তিক উপলব্ধি এবং নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমাদের অভিবাদন।