দারিদ্র্য বিমোচনে বর্তমান সরকারের সাফল্য

শুধু কৃষি খাতের আধুনিকীকরণ কিংবা শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগই নয়, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করে কর্মসংস্থানের জায়গাটিকে সম্প্রসারিত করা হলে দারিদ্র্যসীমা তার অবস্থানকে প্রতিনিয়ত অতিক্রম করবে। সেই লক্ষ্যেই বাংলাদেশ দ্রম্নত এগিয়ে যাচ্ছে

প্রকাশ | ১২ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

কে এম মাসুদুর রহমান
বাংলাদেশে দরিদ্রের সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। শেখ হাসিনা সরকারের গত ১০ বছরে নেয়া নানা উদ্যোগ আর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকায় দারিদ্র্য বিমোচন ঘটছে দ্রম্নত। বিশ্বের সামনে দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশ যে এক অনুকরণীয় অবস্থানে পৌঁছেছে, তার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করেছে বহুমাত্রিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক। তারা বলছে, বিশ্বের অন্য উন্নয়নশীল দেশের উচিত কীভাবে দারিদ্র্য দূর করতে হয়, তা বাংলাদেশের কাছ থেকে শেখা। টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশটি অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের কাছে অনুকরণীয় হতে পারে। বাংলাদেশের এই 'উন্নয়ন বিস্ময়' জাতিসংঘকেও বিস্মিত করেছে। বাংলাদেশের মানুষ অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারী। অপরিসীম তাদের ধৈর্য, সৃজনশীলতা এবং সংগ্রাম করার মনোবল ও উদ্যম। আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেই, কেউ আমাদের আটকাতে পারবে না। বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখি। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। সরকারের উন্নয়নে দেশের দারিদ্র্যের হার কমছে প্রতিনিয়ত। হিসাব অনুযায়ী ২০১৮ সালে দেশে চূড়ান্ত দারিদ্রের হার ২১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং হতদরিদ্র্যের হার ১১ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০০৫ সালে যেখানে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ শতাংশ, ২০১৬ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২৪ দশমিক ৩ শতাংশে। সত্তর দশকের 'ষড়যন্ত্রমূলক' তলাবিহীন ঝুড়ি, নব্বই দশকের তুলনামূলক অচেনা বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী এক বিস্ময়ের নাম। সম্ভাবনার দিগন্তে পত পত করে উড়ছে পতাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে দেশের উন্নয়ন প্রকল্প একের পর এক পেখম মেলে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। চার লেন মহাসড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পানগাঁও নৌ-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, গ্যাস সংকট নিরসনে এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎ প্রকল্প, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদু্যৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, মাতারবাড়ী বিদু্যৎ প্রকল্প, পায়রা সমুদ্রবন্দর, রাজধানীর চারপাশে সু্যয়ারেজ ট্যানেল নির্মাণের মতো অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। উন্নয়নের এ কর্মযজ্ঞে যোগ হয়েছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প এবং দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুমধুম প্রকল্প। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি অঞ্চলের কাজের উদ্বোধনও করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। বিদু্যৎ উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ নিরাপদ এবং পণ্য পরিবহন- খালাস সহজীকরণ করতে নেয়া আরো কিছু অবকাঠামোর সংস্কার হচ্ছে। একই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও এগিয়েছে দেশ। ১৬ কোটি মানুষের দেশে কয়েক বছরে সক্রিয় মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি, আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সম্ভাবনার নবদিগন্তে বাংলাদেশ সংখ্যা সাড়ে ৫ কোটি। দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ 'বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট' মহাকাশে উৎক্ষেপণ হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। দারিদ্র্য দূরীকরণ মানে এই নয় যে, দেশে কোনো গরিব লোক থাকবে না। কিন্তু গরিব সব সময় থাকবে। এর মধ্যে প্রতিবন্ধী, বিধবা বা অসহায়দের দেখাশোনা করতে হবে রাষ্ট্রকেই। ১৯৭১ সালে দারিদ্র্য দূরীকরণের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা এখনও রয়েছে। দেশ স্বাধীনের পর লক্ষ্য ছিল, দেশ হতে দারিদ্র্য দূর করা। তখন দেশে সত্তর ভাগ মানুষ ছিল দরিদ্র। দারিদ্র্য দূরীকরণ ছিল তখন উন্নয়নের মূলমন্ত্র। সেই সত্তর ভাগ থেকে নেমে এসেছে ২১ ভাগে। এই হার ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার জন্য কাজ অব্যাহত রেখেছে শেখ হাসিনার সরকার। বিশ্বে এখন হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৭৭ কোটি। যাদের দৈনিক আয় এক দশমিক ৯০ ডলারের কম। তাদের মধ্যে ৫১ শতাংশ বা ৩৯ কোটির বসবাস সাহারা অঞ্চলে। আর ৩৪ শতাংশের বসবাস দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। ঠিক এর বিপরীত অবস্থানে বাংলাদেশ। প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান ও ভুটানের চেয়েও এগিয়ে বাংলাদেশ। ২০০৫ সালেও দেশে যেখানে হতদরিদ্রের হার ছিল ৪৩ শতাংশ, ১০ বছরের ব্যবধানে তা কমে ১২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। বিশ্বের খুব কম দেশই এমন সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে। তাই বাংলাদেশ আজ এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দারিদ্র্য বিমোচনে শেখ হাসিনা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কৃষি ও শিল্প খাতে বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বাড়ানো, সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন, সামাজিক বিভেদ হ্রাস ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির কাজটি দ্রম্নতগতিতে এগিয়ে নিচ্ছেন। তাই দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে উলেস্নখযোগ্য অগ্রগতিও সূচিত হয়েছে। বিশ্বের বহু দেশের চেয়ে নিম্ন আয় সত্ত্বেও বাংলাদেশ দারিদ্র্য হ্রাসে বেশ সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশে এখন হতদরিদ্র তারাই যাদের দৈনিক আয় ১৪৮ টাকার কম। বাংলাদেশ এখন যে হারে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে, তাতে ২০৩০ সাল নাগাদ হতদরিদ্রের হার তিন শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়াবে। শেখ হাসিনার সরকার অসাধ্য সাধন করার কাজটি সূচারুরূপে পালন করায় দারিদ্র্য মুক্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দারিদ্র্য হ্রাসের এই ধারাবাহিকতাকে এগিয়ে নিতে ষোলো কোটি মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। সচ্ছল বাঙালির জীবনধারায় প্রবাহিত হবে বাংলাদেশ, সেই প্রত্যাশা চিরায়ত। নির্বাচনোত্তর বাংলাদেশের ৫ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দারিদ্র্য বিমোচন এবং কর্মসংস্থান প্রকল্প। টেকসই উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে নাগরিকদের জীবনমানকে এগিয়ে নিতে গেলে দারিদ্র্যকে অতিক্রম করার সরকারি অঙ্গীকার বৃহৎ কর্মপ্রকল্প প্রণয়ন ও প্রস্তবায়নই একমাত্র লক্ষ্য। তেমন প্রবৃদ্ধির গন্তব্যে এগিয়ে যেতে কর্মসংস্থানমুখী পরিকল্পনাকে বিশেষ জোর দেয়া হচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচনকে সাধারণ জনগণের মধ্যে প্রভাবিত করতে হরেক রকম সামাজিক কর্মসূচিও সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। অবকাঠামো উন্নয়নে বৃহৎ কর্মপরিকল্পনায় সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতে নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি দেশের সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রাকে বেগবান করবে, যার সরাসরি অংশীদার হবে সাধারণ জনগোষ্ঠী। তাদের ভাগ্যোন্নয়নে নতুন নতুন মহাপরিকল্পনায় দেশকে আরও শক্তিশালী করতে দারিদ্র্যের মতো অভিশাপকে মুছে ফেলার প্রত্যয়ে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর সুফল পেতেও খুব বেশি দেরি হবে না। শুধু কৃষি খাতের আধুনিকীকরণ কিংবা শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগই নয়, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করে কর্মসংস্থানের জায়গাটিকে সম্প্রসারিত করা হলে দারিদ্র্যসীমা তার অবস্থানকে প্রতিনিয়ত অতিক্রম করবে। সেই লক্ষ্যেই বাংলাদেশ দ্রম্নত এগিয়ে যাচ্ছে। কে এম মাসুদুর রহমান: অর্থ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ