ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা

কার্যকর পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছেই। পত্রপত্রিকার পাতা উল্টালেই দুর্ঘটনার ভয়াবহ চিত্র সামনে আসে যা অত্যন্ত উদ্বেগের। এবারে অনলাইন খবরের মাধ্যমে জানা গেল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় দুই ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনায় ১৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আরও যাত্রী মারা যেতে পারে এমন আশঙ্কাও উঠে এসেছে খবরে। উলেস্নখ্য, সোমবার দিবাগত রাত ২টা ৪৮ মিনিটে উপজেলার মন্দবাগে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা ও সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন দুটির মধ্যে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে একটি ট্রেনের একাধিক বগি আরেকটি ট্রেনের কয়েকটি বগির উপর উঠে যায়। আমরা বলতে চাই, এই ধরনের ঘটনা যখন ঘটে তখন তার ভয়াবহতা কিরূপ বলার অপেক্ষা রাখে না। সঙ্গত কারণেই ঘটনার কারণ অনুসন্ধান এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যত দ্রম্নত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। বলা দরকার, স্টেশন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে যে, তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের চালক সিগন্যাল (সংকেত) অমান্য করায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। মন্দবাগ রেলস্টেশনে দাঁড়ানোর জন্য এই সিগন্যাল দেয়া হয়। ওই সিগন্যালে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস প্রধান লেন থেকে ১ নম্বর লাইনে যেতে শুরু করে। ট্রেনটির ছয়টি বগি ১ নম্বর লাইনে উঠতে পেরেছিল। অন্য বগিগুলো প্রধান লেনে থাকা অবস্থায় তূর্ণা নিশীথা সিগন্যাল অমান্য করে। এর ফলে তূর্ণা নিশীথার একাধিক বগি ওই ট্রেনের কয়েকটি বগির ওপর উঠে যায়। এতে উদয়নের তিনটি বগি দুমড়ে মুচড়ে যায়। আমরা বলতে চাই যে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুটি ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেল সচিব। রেলওয়ের পক্ষ থেকে দুটি ও জেলা প্রশাসন থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সঙ্গত কারণেই, যত দ্রম্নত সম্ভব সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। একইসঙ্গে ট্রেনের সিগন্যাল অমান্য করার বিষয়টিও আমলে নিতে হবে। কেননা, দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে ট্রেন সিগন্যাল অমান্য করার অভিযোগ সামনে আসছে- যা এড়ানোর সুযোগ নেই। আমরা মনে করি, এবারে যে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনাটি ঘটল তা অত্যন্ত মর্মান্তি এবং হৃদয়বিদারক। ফলে সামগ্রিকভাবে ঘটনাটি খতিয়ে দেখে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার বিকল্প থাকতে পারে না। প্রসঙ্গত, এটাও বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। রেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা কিংবা ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষ হতাহত হওয়ার খবরও গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। অথচ যখন একের পর এক এভাবে ঝরে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ, তখন পরিস্থিতি কতটা ভয়ানক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ কথা মনে রাখা দরকার যে, শুধু প্রাণহানি নয়, এর বাইরে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণসহ ঘটছে বিভিন্ন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এ ছাড়া এর আগে এমন বিষয়ও সামনে এসেছে যে, দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আমরা চাই, এবারের ঘটনাটি আমলে নিয়ে এর পরিপ্রেক্ষিতে যত দ্রম্নত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক। সর্বোপরি বলতে চাই, এবারের ঘটনায় সিগন্যাল অমান্য কেন হলো সেটা যেমন খতিয়ে দেখতে হবে, বিভিন্ন সময়ের রেল দুর্ঘটনাগুলো আমলে নিতে হবে। অরক্ষিত রেল ক্রসিংসহ নানা ধরনের অব্যবস্থাপনার ঘটনাও আলোচনায় এসেছে বিভিন্ন সময়ে। এ ছাড়া নানান স্থানে রেললাইন ক্রস করে চলে গেছে সড়ক পথ। আর সেই সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন ধরনের যান বাহন ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষের শিকার হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। কেননা, ট্রেন যখন আসবে তখন সড়ক পথের যান চলাচল বন্ধ থাকবে এটাই নিয়ম, আর এই দায়িত্বটা হচ্ছে, নিয়োজিত গেটম্যানের। কিন্তু অনেক ক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান নেই এমন অভিযোগও এসেছে। সঙ্গত কারণেই আমরা মনে করি, যত দ্রম্নত সম্ভব সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। কেননা, দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে একের পর এক মানুষ চলে যাবে না ফেরার দেশে; এটি কাম্য হতে পারে না।