সুন্দরবনের জন্য প্রকল্প

যথাযথ উদ্যোগ নিন

প্রকাশ | ১৪ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
একটি দেশের জন্য বনভূমিকে রক্ষা করার পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য রক্ষাও কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সঙ্গত কারণেই এ সংক্রান্ত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই প্রতীয়মান হয়। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নও নিশ্চিত করা। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, জীববৈচিত্র্য রক্ষা, বনব্যবস্থাপনা, বনজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি এবং পর্যটনের সম্ভাবনাকে ঘিরে সুন্দরবন সুরক্ষায় প্রায় ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। আর আগামী ছয় মাসের মধ্যে প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনের জন্য প্রচেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব। জানা গেছে, সুন্দরবন সুরক্ষা প্রজেক্ট এখন পস্ন্যানিং কমিশনে রয়েছে; পাস হয়নি। পর্যালোচনা করে পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। মূলত বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের এই প্রকল্পে বনজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য বড় বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে বলেও খবরে উঠে এসেছে। প্রসঙ্গত বলা দরকার, ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ঘিরে নানা কর্মকান্ডের জন্য পরিবেশবাদীরা রয়েছেন উদ্বিগ্ন। তবে এই প্রকল্প পাস হলে সুন্দরবন সুরক্ষার কাজ আরও একধাপ এগুবে বলে মনে করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব। এ ছাড়া বনের ওপর নির্ভরশীল স্থানীয় মানুষের বনে প্রবেশ কমানো গেলে সুন্দরবনের ক্ষতি কম হবে- এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে। আমরা বলতে চাই, জীববৈচিত্র্য রক্ষা, বনব্যবস্থাপনা, বনজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি এবং পর্যটনের সম্ভাবনাকে ঘিরে প্রকল্প গ্রহণ করা- এগুলোকে সামনে রেখে সামগ্রিক বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং এটিও বলা দরকার, বিকল্প কর্মসংস্থানের প্রশ্নে আলোচনায় আসছে যে, সুন্দরবনে যত মানুষ কম ঢুকবে, তখনই ন্যাচারেল ইকু সিস্টেম ডেভেলপ করবে। এ জন্য সুন্দরবনের ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা কমানোর বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে আর যেহেতু সুন্দরবন সুরক্ষা প্রজেক্ট এখন পস্ন্যানিং কমিশনে রয়েছে; পাস হয়নি। ফলে পর্যালোচনা করার পর অনুমোদন হলে যেন প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো ধরনের গড়িমসি না হয় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। কেননা, এ কথা ভুলে যাওয়া যাবে না, এর আগে নানা ধরনের প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধি, সময়ক্ষেপণসহ নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের অব্যবস্থাপনার অভিযোগও আছে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে। সঙ্গত কারণেই প্রকল্প গ্রহণই শুধু নয়, সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া সমীচীন। প্রকল্পসংক্রান্ত বিষয়ে এটিও সংশ্লিষ্টদের আমলে নেয়া দরকার, বন কর্মকর্তা বনজীবীদের নিয়ে বেশি চিন্তিত হলেও পরিবেশবাদী অনেকের তা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। তারা বলছেন, বনজীবীরা নয়, বরং বনের আশপাশ ঘিরে নেয়া বিভিন্ন বড় প্রকল্পই বনের প্রধান ক্ষতির কারণ। সঙ্গত কারণেই এই বিষয়টি আমলে নিতে হবে এবং পর্যালোচনা সাপেক্ষে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে এই অঞ্চলকে রক্ষায় সুন্দরবনের অবদান অনস্বীকার্য। আর শুধু দুর্যোগ থেকে রক্ষায় নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসেবেই নয়, সুন্দরবন এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ও ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য এবং উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার অন্যতম রক্ষাকবচ। তাই সুন্দরবন রক্ষায় বাংলাদেশকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে এবং এর জীবনবৈচিত্র্য রক্ষা থেকে শুরু করে সামগ্রিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।