কী অবস্থায় কাশ্মীরি জনগণ?

কাশ্মীরের স্বতন্ত্র সত্তা তথা স্বাধীন রাজ্যের মর্যাদা লাভ নির্ভর করছিল ভারত ও পাকিস্তানের রাষ্ট্র নেতাদের গৃহীত পদক্ষেপের ওপর। ভারত ও পাকিস্তান দুই রাষ্ট্রই কাশ্মীরের ওপর কর্তৃত্ব আরোপ করতে গিয়ে তাকে দুই ভাগে ভাগ করে ফেলেছিল। এর দুই-তৃতীয়াংশ ভূখন্ড ভারতের নিয়ন্ত্রণে ও বাদবাকি এক-তৃতীয়াংশ পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছিল। ১৯৬২ সালের সংঘঠিত ভারত-চীন যুদ্ধের সময় আকসাই অঞ্চলটি চীনা নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

প্রকাশ | ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
৭০ বছরের বেশি সময় ধরে কাশ্মীরকে স্বতন্ত্র রাজ্যের মর্যাদায় শাসন করে গত ৫ আগস্ট ২০১৯ অনেকটা হঠাৎ করে সে মর্যাদা বাতিল করে ভূখন্ডটি দু'ভাগ করে এবং কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে এনে কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ প্রত্যয়টি বাস্তবে কার্যকর করা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর উপত্যকা লাদাখ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাজ্য হিসেবে দুই অংশের মর্যাদা কেড়ে নেয়া হয়েছে। আগেও কোনো কোনো সময় অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তাকে কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে আনা হয়েছিল। কিন্তু এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে তা করা হলো। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির এক সিদ্ধান্তের কথা রাজ্যসভায় ঘোষণা করে বিষয়টিকে কাশ্মীরসহ ভারতবাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধরেন। সিদ্ধান্ত ঘোষণার সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজ্য সভায় জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য পুনর্গঠন বিল পেশ করেন। বিলটি মোকাবিলা করার ব্যাপারে বিরোধী দলগুলো একজোট হতে ব্যর্থ হয়েছিল। এ সময়ে বিতর্কে অংশ নিয়ে তিনি ৩৭০ ও ৩৫ 'ক' ধারার কারণে কাশ্মীরে কোনো শিল্প স্থাপন ও পর্যটনের উন্নতি হয়নি বলে অভিযোগ করেন। পরদিন ৬ আগস্ট লোকসভায় ভারতের সংবিধান সংশোধনী বিল এনে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে তা পাস করে এ সিদ্ধান্তের আইনি ভিত্তি দেয়া হয়েছে। এখন ধারা ৩৭০ বাতিলের কাশ্মীরিদের সত্তায় আঘাত হানা হলো। কাশ্মীরিদের একটি পতাকা ও সংবিধানকে অস্বীকার করা হলো। কাশ্মীরের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাদের গৃহবন্দি করাসহ জনগণের প্রতিবাদের আশঙ্কায় সান্ধ্য আইন জারি, গণমাধ্যমের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ, সব ধরনের টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া, বিরোধী নেতাদের কাশ্মীরে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে এ সব পদক্ষেপ গ্রহণের আগে কয়েকদিন ধরে এ সংক্রান্ত পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছিল। বাৎসরিক অমরনাথ তীর্থযাত্রা বাতিল করে তীর্থযাত্রীসহ পর্যটকদের দ্রম্নত কাশ্মীর ত্যাগ করার নির্দেশ, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা, সর্বোপরি সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি কাশ্মীরের ব্যাপারে কোনো বড় পদক্ষেপ নেয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিল। রাজ্য সভায় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে স্বতন্ত্র মর্যাদা ও ৩৫ 'ক' ধারা বাতিল করে রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা নির্ধারণ এবং তাদের বিশেষ অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা দানের জন্য রাজ্য আইন সভার ক্ষমতা এখন রদ করা হয়েছে। উলেস্নখ করা দরকার যে, ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারা ছিল অস্থায়ী, ট্রান্সজিশনাল ও বিশেষ ধারা, যা জম্মু?-কাশ্মীর রাজ্যকে ভারতীয় সংবিধানের আওতামুক্ত করেছিল এবং শুধুমাত্র অর্থ, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র বিষয় এবং যোগাযোগ ব্যতীত অন্য সব বিষয়ে আইন প্রণয়নের এখতিয়ার রাজ্যটির ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। এ ছাড়া রাজ্যটির নিজস্ব পতাকা ও সংবিধান রাখার সুযোগ রাখা হয়েছিল। পতাকা ও সংবিধান হারিয়ে কাশ্মীরবাসীর অবস্থান কী হবে? এক কথায় অবস্থান হবে এ রকম যে, তারা পতাকা ও সংবিধান হারানোর বেদনায় নিঃশেষ হয়ে যাবে অথবা বেশি শক্তির অধিকারী হয়ে স্বাধীনতামুখী আন্দোলনে সংগঠিত হবে এবং স্বাধীনতার আন্দোলনকে চাঙ্গা করে তুলবে। তবে পাকিস্তান ও ভারতের সদিচ্ছায় তাদের কাঙ্ক্ষিত ইচ্ছার সহজ প্রতিফলন ঘটাতে পারে। স্বাধীন ও পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে তাদের স্বীকৃতির দাবি ওঠে আসবে। আর দাবির প্রতিষ্ঠায় হয়তো অনেক রক্তপাতও হবে কিন্তু সব শেষে সভ্যতা, গণতন্ত্র ও মানবতার কল্যাণে তা হয়তো প্রতিষ্ঠা পাবে। কিন্তু ততদিনে অশান্তির লেলিহান ও দাবানলে পৃথিবীর ভূস্বর্গ নামেখ্যাত কাশ্মীরের হয়তো বা সুন্দর নামের মানচিত্রও মুছে যেতে পারে। কাশ্মীরের স্বতন্ত্র সত্তা তথা স্বাধীন রাজ্যের মর্যাদা লাভ নির্ভর করছিল ভারত ও পাকিস্তানের রাষ্ট্র নেতাদের গৃহীত পদক্ষেপের ওপর। ভারত ও পাকিস্তান দুই রাষ্ট্রই কাশ্মীরের ওপর কর্তৃত্ব আরোপ করতে গিয়ে তাকে দুই ভাগে ভাগ করে ফেলেছিল। এর দুই-তৃতীয়াংশ ভূখন্ড ভারতের নিয়ন্ত্রণে ও বাদবাকি এক-তৃতীয়াংশ পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছিল। ১৯৬২ সালের সংঘঠিত ভারত-চীন যুদ্ধের সময় আকসাই অঞ্চলটি চীনা নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। \হজাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ১৯৪৮ সালে কাশ্মীরকে নিয়ে গণভোটের প্রস্তাব গ্রহণ করলেও এর বাস্তবায়নের ব্যাপারে দুই দেশের ব্যর্থতা কাশ্মীর নিয়ে নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছিল। ১৯৪৮ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর গৃহীত অস্ত্র সংবরণ রেখা পরবর্তীকালে দুই দেশের সীমান্ত রেখা হিসেবে গণ্য হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে যে, পাকিস্তান যেমন ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরকে এক বিতর্কিত বিষয় হিসেবে মনে করে অপর পক্ষে ভারত ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ভারতের অংশ বলে মনে করে। এ বিষয়ে কাশ্মীরের প্রধান পক্ষ এর জনসাধারণকে কোনো মতামত দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি। ভারতভুক্তির সময় যেমন কাশ্মীরবাসীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার মূল্য ছিল না- একইভাবে ৫ আগস্ট কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার বিষয়টি জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে হয়নি। কাশ্মীরের প্রধান প্রধান রাজনীতিবিদদের সঙ্গেও কোনো পরামর্শ করা হয়নি। ভারতের শাসকদল বিজেপি মনে করছে যে, জাতীয় প্রধান ধারার সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের জনগণের পরিপূর্ণ একাত্ম হওয়ার পথে ৩৭০ ধারা এক মনস্তাত্ত্বিক বাধা। এ ধারা বাতিলের ব্যাপারে বিজেপি ছিল অঙ্গীকারাবদ্ধ। ২০১৯ এ নির্বাচন উপলক্ষে ইস্তেহারে উলেস্নখ করা হয়েছে যে, জনসংঘের সময় থেকে ৩৭০ ধারার বিষয়ে তাদের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি। এ অবস্থান যেন কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ। এতে কাশ্মীরিদের কাশ্মীরি সত্তার ওপর অনিবার্যভাবে এক চরম আঘাত। এ ক্ষত ও আঘাতের পরিণতি কী হবে? এর পরিণতি হয়তো সুখকর নয়। এতে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি বিঘ্নিত হবে। প্রতিবেশী দেশের মধ্যে প্রতিবেশীসুলভ মনোভাবের চির ধরবে। উস্কানিমূলক কর্মকান্ড চলতে থাকবে। উস্কানি আর মদদে কাশ্মীরি জনগণ নিজেরাই আত্মঘাতী কাজে লিপ্ত হয়ে পড়বে। অবশেষে একদিন পুঞ্জীভূত ক্ষোভ আর অশান্তির দাবানলে জ্বলবে কাশ্মীর। কারো অধীনতা নয়, কাশ্মীরিদের নিজেদের এলাকায় তাদের স্বাধীনতা ও মুক্তির আকাঙ্ক্ষা জোরদার হবে এবং সংগ্রাম ও আন্দোলন ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হবে এবং সহিংসতা বাড়তে থাকবে। কাশ্মীরের ভারতভুক্তির ব্যাপারে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি রাজনীতিক অবস্থান কী ছিল। তার পূর্বসূরি জনসংঘের আমল থেকে তাদের আপসহীন মনোভাব ছিল। প্রসঙ্গত বলা যেতে পারে, হায়দারাবাদের বেলায় শাসক নিজামের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ভারতের তৎকালীন সরকার শক্তি প্রয়োগ করে রাজ্যটির দখল নিয়ে নেয়। কাশ্মীরের বেলায় তাদের যুক্তি ছিল যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা না চাইলেও মহারাজা ভারতভুক্তি চেয়েছেন বলে এটা ভারত ইউনিয়নের অংশ। উভয়ক্ষেত্রেই তাদের কাছে রাজ্য দু'টির অবস্থানগত গুরুত্ব ছাড়াও ধর্মীয় বিবেচনায় তাদের স্বাধীন থাকা বা পাকিস্তানভুক্তি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য ছিল না। কাশ্মীরের বেলায় দেখা যাচ্ছে জম্মু'র হিন্দু জনগোষ্ঠী রাজ্যের স্বতন্ত্র মর্যাদার বিষয়ে মুসলমানদের মতো চিন্তা করেনি। একইভাবে লাদাখ অঞ্চলের বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীও চিন্তা করেনি। সংসদীয় নির্বাচনী ফলাফলে আঞ্চলিক ও ধর্মীয় বিভেদ ক্রমান্বয়ে পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। ২০১৪-এর নির্বাচনের মতো ২০১৯-এর নির্বাচনে বিজেপি জম্মু ও লাদাখে প্রাধান্যে ছিল, অন্যদিকে কাশ্মীর উপত্যকায় ন্যাশনাল কনফারেন্স সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। ২০১৪ নির্বাচনের মতো ২০১৯-এও মোদির জোয়ার বিজেপির পক্ষে একচেটিয়াভাবে হিন্দু ভোট আকর্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। যার দরুন জম্মু এলাকায় বিজেপির ভোট বেড়েছে। কিন্তু উপত্যকায় এনসি'র ভোট কমেছে। বিজেপি'র নির্বাচনী প্রচারে ভোটারদের বিশেষ করে হিন্দু প্রাধান্যের জম্মুতে পুনরায় ক্ষমতা পেলে ৩৭০ ও ৩৫ 'ক' ধারা বাতিল করার প্রতিশ্রম্নতি দেয়া হয়েছিল। তা ছাড়া বালাকোটে বিমান হামলার বিষয়টিও তারা তুলে ধরেছিল। কাশ্মীর ভারতের একমাত্র রাজ্য যেখানে জনসংখ্যা বিচারে মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণ ছিল। বিজেপি সরকারের সিদ্ধান্তে এ নিয়ন্ত্রণ পাল্টে ফেলা এবং সাংবিধানিক দিক দিয়ে অন্য রাজ্যগুলোর সমতলে কাশ্মীরকে নিয়ে আসার ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়েছে। তাদের হিন্দুত্ববাদের সঙ্গে কাশ্মীর কখনোই খাপ খাইনি। লক্ষ্য করা গেছে যে, পূর্বসূরি জনসংঘের রাজনীতি গ্রহণ করায় বিজেপি কাশ্মীরের জন্য কোনো পৃথক মর্যাদার পক্ষে ছিল না। বিশেষ করে ২০১৪ সাল থেকে হিন্দুত্ববাদের দর্শনকে বাস্তবায়নের ইচ্ছা সরকারের নীতিতে স্থান পেয়েছে। কয়েক মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরও কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। দেখা যাচ্ছে যে, উপত্যকার ওপর সিদ্ধান্তের অভিঘাত তীব্র হয়েছে। ইতোমধ্যে সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে কয়েকটি রিট পিটিশন জমা হয়েছে। শুধু আইনি দৃষ্টিতে বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে- তা নয়। কাশ্মীরি রাজনীতিবিদ ও জনগণের মধ্যে এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি ভারতের অন্যান্য অংশেও প্রগতিশীল রাজনীতিক, সংস্কৃতি কর্মী, মানবাধিকার কর্মীরা এ ব্যাপারে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বন্দ্বে নতুন উপাদান যুক্ত হয়েছে। এই উপাদানের শরিকদার অন্য কেহ হবে কী না তা ভবিতব্য জানে। প্রাথমিকভাবে দু'দেশের তরফ থেকে সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার হুমকিও দেয়া হয়েছে। বস্তুত অতীতে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন কমিয়ে আনার ফল শেষ পর্যন্ত ভালো হয়নি। কাশ্মীরের ভারতভুক্তিকে পাকিস্তানের প্রত্যাখ্যান বা ভারতীয় শাসনের ব্যাপারে কাশ্মীরবাসীর অনাগ্রহের কারণে ৭০ বছরের বেশি সময় এক জ্বলন্ত সমস্যা হিসেবে থেকে গেছে। এ সমস্যা কতকাল জ্বলন্ত ও ঝুলন্ত হয়ে থাকবে। এ সমস্যার সমাধান কবে হবে, কীভাবে হবে তার উত্তর খোঁজা যেমন চলতে থাকবে, অন্যদিকে বর্তমান দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও শান্তির জন্য এটা বড় হুমকি হয়ে থাকবে। কাশ্মীর নিয়ে ইতোমধ্যে ভারত-পাকিস্তান তিনটি যুদ্ধে জড়িয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সীমান্ত সংঘর্ষ হয়েছে। উড়ি হামলা, পাঠানকোট হামলা হওয়ার সঙ্গে আন্তঃসীমানা আক্রমণ নিয়মিত ঘটে থাকে। ভারতীয় লেখক প্রবীর ঘোষ যথার্থ বলেছেন যে, পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক হওয়ার পর দু'দেশের ভেতর যুদ্ধের আশঙ্কা মিলিয়ে গেছে। যে মত দেয়া হয় তা ভ্রান্ত। দু'দেশের রাজনীতিকরা ও রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে দেশপ্রেমিক বনে যায়। পরিশেষে এ কথা বলা যায় যে, রাজনীতি ও ধর্মভিত্তিক হানাহানির ঊর্ধ্বে ওঠে কাশ্মীরি জনগণের চাওয়া-পাওয়াকে মূল্য ও মর্যাদা দিয়ে এবং তার অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তাদের মুক্ত মানুষের দাবিতে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আর এই নীতির মাধ্যমেই হয়তো বা কাশ্মীরের রক্তপাত বন্ধ হবে। মানুষে মানুষে সদ্ভাব ছাড়া প্রকৃত কল্যাণ সাধন সম্ভব নয়। আর এ ক্ষেত্রেও কোনো হিন্দুত্ববাদ নয় বা অন্য কোনো ধর্মীয় অনুষঙ্গ নয় বরং মানব ধর্মকে প্রাধান্য দিলেই কাশ্মীরি জনগণ প্রকৃত মুক্তির আস্বাদন গ্রহণ করে ধন্য হবে। ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ: লেখক, কলামিস্ট ও গবেষক