ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে

প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে

প্রকাশ | ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ একটি জনসংখ্যাবহুল দেশ। সঙ্গত কারণেই জনসাধারণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের বিষয়। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, যদি এমন বিষয় সামনে আসে, দেশে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে এবং শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের নারী-পুরুষ এখন এই নীরব ঘাতকের শিকার হচ্ছে- তখন স্বাভাবিকভাবেই সৃষ্ট পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলে প্রতীয়মান হয়। সঙ্গত কারণেই এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির (বাডাস) এক জরিপে এমন উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে যে- শহর থেকে গ্রাম- সর্বত্রই প্রায় সমান হারে ডায়াবেটিস ছড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া যে হারে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে ও শনাক্ত হচ্ছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ এর শিকার। চিকিৎসকরা একে মহামারীও বলতে শুরু করেছেন। ওই জরিপে দেখা গেছে, দেশের ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যদিও জরিপটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। তথ্য মতে, দেশের কত শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসের শিকার তা খুঁজে বের করতে গত বছরের নভেম্বরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন-কমিউনিক্যাবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম ও বাডাসের সেন্টার ফর গেস্নাবাল হেলথ রিসার্চ শাখা যৌথভাবে জরিপটি পরিচালনা করে। এ জন্য প্রায় চার মাস ধরে দেশের ৬৪ জেলার ৪০০ উপজেলায় এক লাখ মানুষের রক্তসহ শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। চলতি বছরের ফেব্রম্নয়ারি মাসে সব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জরিপের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকরা দেখতে পান এক-চতুর্থাংশেরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিসের শিকার। এ ছাড়া আক্রান্তদের অর্ধেকেই জানতেন না তাদের ডায়াবেটিস আছে। অথচ এক দশকেরও কম সময় আগে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮ ভাগেরও কম মানুষ। বলার অপেক্ষা রাখে না, চিকিৎসকের সংকট এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব থেকে শুরু করে নানা ধরনের সংকটের বিষয় বিভিন্ন সময়েই পত্রপত্রিকায় উঠে এসেছে। এ ছাড়া চিকিৎসা ব্যয়ের কারণেও অনেক পরিবারই অভাব-অনটনকে মোকাবেলা করে সুচিকিৎসা নিতে পারে না এমন অভিযোগও আছে। আমরা বলতে চাই, ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণগুলো পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এর আগে এমন বিষয়ও সামনে এসেছে, ডায়াবেটিস রোগ বৃদ্ধির অন্যতম কারণই হলো অসচেতনতা। এ ছাড়া দেশের ডায়াবেটিস রোগীর ৪০ শতাংশ কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এমন খবরও জানা গিয়েছিল। সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া দরকার, গত ৯ বছরের ব্যবধানে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে এমনটিও আলোচনায় এসেছে। যেখানে একজন চিকিৎসক বলেছেন, এই হারে ডায়াবেটিস বৃদ্ধি পেলে ২০৩০ সালে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। সঙ্গত কারণেই সার্বিক এই পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে- গর্ভকালীন ডায়াবেটিসও বিশ্বজুড়ে বাড়ছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই হার অনেক বেশি। এ ছাড়া ডায়াবেটিস মহামারী রূপ নিচ্ছে। দ্রম্নত নগরায়ণের ফলে পরিবর্তিত জীবনযাপনের কারণে বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বাড়ছে এমন তথ্যও উঠে আসছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডায়াবেটিসের কারণে প্রতি বছর পাঁচ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। শুধু তাই নয়- ডায়াবেটিসের কারণে অর্থনৈতিক চাপও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা মনে করি, ডায়াবেটিস প্রতিরোধে উদ্যোগ গ্রহণ এবং মানুষকে সচেতন করতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।