ঘুষ ঝুঁকি সূচকের শীর্ষে দেশ

মূলোৎপাটনই কাম্য

প্রকাশ | ১৬ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি ঘুষের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ। উদ্বেগের হলো, এ ঝুঁকি আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছেও। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ঘুষবিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন ট্রেস ইন্টারন্যাশনালের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে আসা এমন তথ্য আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে চিন্তার। জানা গেছে, 'ট্রেস ব্রাইবারি রিস্ক ম্যাট্রিক্স' শীর্ষক ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের সূচকে বাংলাদেশে ঘুষের ঝুঁকি স্কোর দাঁড়িয়েছে ৭২, যা আগের বছরের তুলনায় ২ পয়েন্ট বেশি। প্রত্যেক দেশকে বিভিন্ন দিক বিচারে ১ থেকে ১০০-এর মধ্যে স্কোর দেয়া হয়েছে। যে দেশের স্কোর যত বেশি, সে দেশে ব্যবসায় তত বেশি ঘুষের ঝুঁকি রয়েছে। বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য ক্ষেত্রে ঘুষের ঝুঁকির বিষয়ে ব্যবসায়ীদের আরও বেশি নির্ভরযোগ্য তথ্যের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ২০১৪ সাল থেকে এ সূচক প্রকাশিত হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশে বর্তমানে ঘুষ-দুর্নীতির বিষয়টি বহুল আলোচিত। বিশ্লেষকরা বলছেন, ঘুষ-দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে শেকড়-বাকড় গেঁড়ে বসেছে। দেশের সরকারি-বেসরকারি এমন কোনো খাত নেই যেখানে ঘুষ-দুর্নীতি নেই। তবে আশার কথা হলো, বর্তমান সরকার ঘুষ-দুর্নীতি রোধে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে। অন্যদিকে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য শুদ্ধাচার কৌশল প্রণয়ন করে, তাদের বেতন-ভাতা বাড়িয়ে দিয়েও দুর্নীতি দমন করা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে- এমন খবরও এসেছে গণমাধ্যমে। আর এমন সময় ঘুষ ঝুঁকির বৈশ্বিক সূচকে দুই পয়েন্ট বৃদ্ধির তথ্য সামনে এলো, যা সামগ্রিকভাবেই দেশের জন্য নেতিবাচক। তথ্য মতে, সম্প্রতি প্রকাশিত এ সূচকের ২০১৯ সালের সংস্করণে ঘুষের ঝুঁকির ক্ষেত্রে আগের বছরের চেয়ে ২ পয়েন্ট বেড়ে বাংলাদেশ এ তালিকার ১৭৮তম অবস্থানে আছে। উদ্বেগের যে, বাংলাদেশের এ স্কোর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ভারত ৪৮ পয়েন্ট নিয়ে ৭৮তম ও পাকিস্তান ৬২ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার ১৫৩তম অবস্থানে আছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিনামূল্যে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এ সূচক বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ঘুষের প্রসার ঘটায় এমন কতগুলো পরিস্থিতি বুঝতে কোম্পানিগুলোকে সহায়তা করে। এগুলো হলো বেসরকারি খাতের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগের ধরন ও বিস্তৃতি, ঘুষের প্রতি সামাজিক মনোভাব ও তা নিষিদ্ধে সরকারের ক্ষমতা, সরকারের স্বচ্ছতা এবং দুর্নীতি পর্যবেক্ষণ ও প্রকাশে সুশীল সমাজের সক্ষমতা। প্রত্যেক দেশের ঘুষ ঝুঁকি পরিমাপ করা হয়েছে চারটি ক্ষেত্র বিবেচনায়। এগুলো হলো- সুযোগ, প্রতিবন্ধকতা, স্বচ্ছতা ও তদারকি। আবার সুযোগ পরিমাপের জন্য রয়েছে তিনটি বিষয়-মিথস্ক্রিয়া, প্রত্যাশা ও সুবিধায়ন। ঘুষবিরোধী কার্যক্রম ও সামাজিক সচেতনতা পরিমাপ করা হয় প্রতিবন্ধকতা ক্ষেত্রটির আওতায়। স্বচ্ছতা পরিমাপ করা হয় প্রক্রিয়া ও স্বার্থের মাধ্যমে। আর তদারকির বিষয়টি মুক্ত গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের সক্রিয়তার ওপর নির্ভর করে। পৃথক এ প্রক্রিয়ায়, সামগ্রিক সুযোগের ক্ষেত্রে ৮৬; এর আওতায় থাকা বিষয়গুলোর মধ্যে মিথস্ক্রিয়ায় ৬৮, প্রত্যাশায় ৭৮ ও সুবিধায়নে বাংলাদেশের স্কোর ৭৭। আর সামগ্রিক প্রতিবন্ধকতায় ৬৩; এর মধ্যে সামজিকভাবে ঘুষবিরোধী মনোভাবে ৬৮ ও প্রয়োগে স্কোর ৬৪। অন্যদিকে সামগ্রিক স্বচ্ছতায় ৬০; এর মধ্যে প্রক্রিয়ায় ৬১ ও স্বার্থে ৬২। সামগ্রিক তদারকির ক্ষেত্রে ৬৪, মুক্ত গণমাধ্যমে ৫৬ ও সুশীল সমাজের সক্রিয়তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্কোর ৬৯। গড়ে গত বছরের তুলনায় এবার এই ঝুঁকির পয়েন্ট বেড়েছে। আমরা মনে করি, বৈশ্বিক এ তথ্য বাংলাদেশে ঘুষ-দুর্নীতির ব্যাপকতাকেই নির্দেশ করে। যেহেতু স্কোর বাড়ছে সুতরাং পরিস্থিতি যে আরও ভয়াবহতার দিকেই যাচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, সরকার তথা দেশের নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি আমলে নিয়ে দ্রম্নততার সঙ্গেই কার্যকর উদ্যোগ নেবে। ঘুষের এ চিত্র দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে যে বাধাগ্রস্ত করছে তা সংশয়হীনভাবেই বলা যায়। ফলে বিদ্যমান এ পরিস্থিতি থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। এ জন্য আইনের কঠোর প্রয়োগসহ সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করুক- এটাই প্রত্যাশা।