পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক

কার্যকর পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ১৬ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
পেঁয়াজের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে। দাম বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় এবার এক লাফে ডাবল সেঞ্চুরির মুখ দেখল পেঁয়াজ। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। ওইদিন সকালেও কোনো কোনো বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল ১৮০ টাকা; কিন্তু বিকালে খুচরা বাজারে দাম ২২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে! বলা দরকার, এমনিতেই নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে নানা সময়েই নানা ধরনের অভিযোগ সামনে আসে- যেখানে সাধারণ মানুষকে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হিমশিম খেতে হয়। ফলে এভাবে যদি পেঁয়াজের মূল্য বাড়তে থাকে তবে তা কতটা উদ্বেগের কারণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। উলেস্নখ্য, গত সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে অস্থির হয়ে উঠেছিল পেঁয়াজের বাজার। ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে ভারত। বাংলাদেশ আমদানির ক্ষেত্রে ভারতের ওপরই নির্ভরশীল। ফলে দেখা যায় দেশের বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়তে থাকে। তখন দুই দিনের মধ্যে কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকা ছাড়ায় দেশি পেঁয়াজের দাম। ভারতীয় পেঁয়াজও বিক্রি হতে থাকে ১০০ টাকার কাছাকাছি দরে। এ ক্ষেত্রে এটা বলা জরুরি, বাজার তদারকি ও হুজুগ শেষের পর দাম আবার কিছুটা কমে গিয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে আবার লাগামহীন হয়ে পড়েছে পেঁয়াজের দাম। আমরা মনে করি, সামগ্রিক এই পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। লক্ষণীয়, একজন আমদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতা জানিয়েছেন, চাহিদার বিপরীতে জোগান একদম কম। দেশি পেঁয়াজ এখনো ওঠেনি। ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি নেই। সব মিলিয়ে অস্থির বাজার। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার সংসদে শিল্পমন্ত্রী বলেছেন, 'শিগগিরই পেঁয়াজের মূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আসবে। উপজেলাপর্যায়ে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এখন লিন সিজন চলছে। এ সময় একটা সংকট থাকে।' এ ছাড়া পরিস্থিতি মোকাবিলায় মিয়ানমার ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানির ব্যবস্থা করার বিষয়টিও সামনে আসে। শিল্পমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজের বাজার যেটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল, সেটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালু আছে, কোথাও কেউ যেন বেশি দামে বিক্রি করতে না পারে। কিন্তু লক্ষণীয় যে, এর পরও ঝাঁজ বেড়েছে পেঁয়াজের দামের। আমরা বলতে চাই, এটা আমলে নেওয়া দরকার, বাজারের অসংখ্য ক্রেতার অভিযোগ বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা তাদের খেয়াল খুশিমতো দাম হাঁকছেন। দ্রম্নত সময়ের মধ্যে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চাওয়ার বিষয়ও সামনে এসেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে পেঁয়াজের বাজার চালু থাকায় ক্রেতারা হয়ে পড়ে দিশাহারা। এ নিয়ে গণমাধ্যমে একাধিকবার সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। আমরা মনে করি সামগ্রিক এ পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এভাবে যদি পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে তবে সাধারণ মানুষের পরিস্থিতি কতটা দুর্বিষহ হতে পারে সেটা বিবেচনা করা জরুরি। আমরা মনে করি, পেঁয়াজ নিয়ে যা হচ্ছে তা রীতিমতো নৈরাজ্য। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। বারবার পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভোক্তারা। এটা মনে রাখা দরকার, রসনাবিলাসের জন্য পেঁয়াজের গুরুত্ব অপরিসীম। রন্ধনশিল্পে পেঁয়াজ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রতিদিনের রান্নায় পেঁয়াজের জোগান জরুরি। আমরা মনে করি, পেঁয়াজ নিয়ে যা শুরু হয়েছে তা আমলে নিতে হবে এবং মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা গেলে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ দেশেই উৎপাদন করা সম্ভব। তখন আর বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে না। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, যত দ্রম্নত সম্ভব বাজার নিয়ন্ত্রণ করুন এবং পেঁয়াজ নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে এই সঙ্কট সমাধানের উদ্যোগ নিন। পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে নিম্ন আয়ের মানুষের এখন করুণ অবস্থা। ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিরসনে সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।