কিশোর গ্যাং-দেশ ও জাতির জন্য মহাবিপৎসংকেত

প্রকাশ | ১৭ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশে সম্প্রতি কিশোর অপরাধের সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে চলেছে। এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশ নড়েচড়ে বসলেও সারা দেশে ভয়াবহ মাত্রায় বাড়ছে কিশোর অপরাধের ঘটনা। আজকাল পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের মধ্যে স্নেহ ও সম্মানের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে; যার ফলে পারিবারিক দ্বন্দ্ব দেখে কিশোর-কিশোরীরা অপরাধে জড়াতে পিছপা হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সন্তানের ইচ্ছে পূরণে পরিবার অবাধে টাকা-পয়সা দিয়ে থাকে কোনো ধরনের হিসাব-কিতাব ছাড়াই, যা তাকে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে সম্পৃক্ত হতে সাহায্য করে। এখন কিশোর-কিশোরীদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পদার্পণ করার মনমানসিকতা নেই বললেই চলে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল-মিলিয়ে চলতে গিয়ে তারা এখন প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়ছে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে মনোসংযোগের অভাব অনেক সময় তাদের অপকর্মে লিপ্ত হতে বাধ্য করে। একই সঙ্গে মা-বাবার কাছ থেকে সন্তানের পর্যাপ্ত সময় না পাওয়াটাও উদ্বেগের বিষয়। বস্তুত অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণহীনুা, ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের অবাধ সুবিধা ইণ্যাদি কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। অনেক মা-বাবা আছেন; তারা তাদের সন্তান কী করছে, কার সঙ্গে মিশছে, ইন্টারনেটে কী দেখছে, সে সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন না। তাদের সন্তানদেরই অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, কিশোর অপরাধীদের মধ্যে এখন তিনটি শ্রেণি রয়েছে। এর মধ্যে বস্তিবাসী ও নিম্ন আয়ের পরিবারের কিশোররা দারিদ্র্যের কারণে, মফস্বল থেকে বড় শহরে আসা কিশোররা সমাজে টিকে থাকার জন্য এবং উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে অপরাধে জড়াচ্ছে। সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে কিশোর অপরাধীর সংখ্যা দিন দিন উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। পরিবার ও সরকার প্রত্যেকেরই উচিত নিজের অবস্থান থেকে জরুরি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে এ প্রবণতা ঠেকানো, তা না হলে অপরাধপ্রবণ তরুণসমাজ দেশের জন্য আত্মঘাতী হয়ে উঠবে। দেশের দুই কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, সেখানে থাকা কিশোরদের ২০ শতাংশ খুনের মামলার আর ২৪ শতাংশ নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার আসামি। নারী ও শিশু নির্যাতন মামলাগুলোর বেশির ভাগই ধর্ষণের অভিযোগে করা। বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে থাকা এসব কিশোরের মধ্যে দরিদ্র পরিবারের সন্তান যেমন আছে, তেমনি আছে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানও। বিভিন্ন গবেষণায় এসেছে, ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সীরা অপরাধে বেশি জড়াচ্ছে। দেশজুড়ে নগরকেন্দ্রিক গ্যাং কালচার ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। মাদক নেশায় জড়িয়ে পড়া থেকে শুরু করে চুরি, ছিনুাই, ইভ টিজিং, মাদক ব্যবসা, এমনকি নিজেদের অভ্যন্তরীণ বা অন্য গ্যাং গ্রম্নপের সঙ্গে তুচ্ছ বিরোধকে কেন্দ্র করে খুন-খারাবি থেকেও পিছপা হচ্ছে না কিশোর অপরাধীরা। এর পেছনের অন্যতম কারণ রাজনৈতিক 'বড় ভাই'দের প্রশ্রয়। একসময় ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বড় শহরকেন্দ্রিক থাকলেও বর্তমানে গ্যাং কালচার ছড়িয়ে পড়েছে ছিমছাম, নীরব জেলা-উপজেলা শহরগুলোতেও। বেপরোয়া গ্যাং সদস্যরা যে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীতে পরিণত হয় তার অতি সাম্প্র্রতিক উদাহরণ বরগুনা শহরে প্রকাশ্য কুপিয়ে রিফাত শরীফকে হত্যা। তাকে কুপিয়ে হত্যাকারী নয়ন বন্ডসহ অন্যরাও ০০৭ নামে একটি গ্যাংয়ের সদস্য। এমনকি যাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় সেই রিফাত শরীফও একসময় হত্যাকারীদেরই গ্যাং সঙ্গী। বস্তুত, পরিবার ও সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং রাজনৈতিক নেুা ও স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর উদ্যোগ ছাড়া গ্যাং কালচার রোধ সম্ভব হবে না। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই এগিয়ে আসতে হবে পিতামাতাকে। সন্তান কী করে, কার সঙ্গে মেশে কোথায় সময় কাটায়- এ কয়টি বিষয়ে পর্যাপ্ত মনিটর করতে পারলেই গ্যাংয়ের মতো বাজে কালচারে সন্তানের জড়িয়ে পড়া রোধ করা সম্ভব। এর বাইরে ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষাও নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। ছাত্র ও ঝরেপড়া সব কিশোর সন্তানের গতিবিধি সম্পর্কেই পিতামাতা, অভিভাবক ও আত্মীয়স্বজনদের বাড়তি পর্যবেক্ষণ থাকলে মাদক সেবন, অন্যায়-অপরাধ ও জঙ্গিবাদের মতো ভয়ানক কাজে জড়ানো রোধ করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া অভিভাবকহীন ও পথশিশুদের বিষয়ে থানাকেন্দ্রিক পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। সচেতনুা তৈরি ও সতর্কতা অবলম্বনই পারে কিশোরদের বাজে সংস্কৃতি এড়িয়ে পরিবারের তথা দেশের সম্পদে রূপান্তর করতে। শামীম মিয়া শিক্ষার্থী, জুমারবাড়ী আদর্শ কলেজ সাঘাটা, গাইবান্ধা