বিনা মূল্যে বই বিতরণে দৃষ্টান্ত

প্রকাশ | ১৭ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে বৈশ্বিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চেয়ে যেমন এগিয়ে আছে, তেমনি কোনো কোনো ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার ঘটনাও আছে। দেশের অগ্রগতির তথ্য আমাদের আশান্বিত করে ঠিকই, আবার পিছিয়ে পড়লে আমরা বেদনাহত হই। তবে একটি বিষয় সর্বজনস্বীকৃত যে, বর্তমান সরকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনা মূল্যে বই বিতরণ করে অনন্য নজির স্থাপন করেছে। বিনা মূল্যের বই বিতরণে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। সারা বিশ্ব যা কখনো ভাবতেও পারেনি, বাংলাদেশ তা করে দেখিয়েছে। গত এক দশক ধরে একই দৃষ্টান্ত দেখিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। বলার অপেক্ষা রাখে না এ ঘটনা বিশ্বেও বিরল। তথ্য অনুযায়ী, সরকার যখন ২০১০ সালে বিনা মূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে তখন শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল আড়াই কোটির মতো। আর ২০২০ সালে সারা দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের (মাদ্রাসা, কারিগরিসহ) সোয়া ৪ কোটির বেশি শিক্ষার্থীকে বিনা মূল্যে প্রায় ৩৫ কোটি ৪০ লাখ বই বিতরণ করা হবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) তথ্য মতে, শিক্ষার্থীর এই সংখ্যা বিশ্বের অনেক দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। আসন্ন শিক্ষাবর্ষে এই বই বিতরণ করা হলে ১১ বছরে বই বিতরণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৩৩১ কোটি ৪৭ লাখ ৮৩ হাজার। বই দিতে এখন প্রতিবছর সরকারের খরচ হচ্ছে এক হাজার কোটি টাকার বেশি। ২০২০ সালের খরচ প্রায় ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা। বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন সাফল্যের শীর্ষে রয়েছে শিক্ষা। পাশাপাশি শিক্ষার মান নিয়েও রয়েছে নানান প্রশ্ন। শিক্ষা খাতে দুর্নীতির বিষয়টিও বহুল আলোচিত। যদিও সরকার দুর্নীতি প্রতিরোধ সোচ্চার এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানা যায়। তবে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, সবাইকে একসঙ্গে বিনা মূল্যে বই দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য যেমন কমছে, তেমনি শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বাড়ছে। আবার ঝরেপড়াও কমছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক- দুই স্তরে বিনা মূল্যের বই দেওয়া শুরুর ১১ বছরের মাথায় দেড় কোটির বেশি শিক্ষার্থী বেড়েছে। এখন যদি মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় তাহলে আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা আরও দ্রম্নত অগ্রসর হতে পারব; আর এ আশাবাদ বিশেষজ্ঞদের। অতীতে আমরা বিনা মূল্যে বিতরণের বই কালোবাজারে বিক্রি, বইয়ের সঙ্গে নোট বই কিনতে অভিভাবকদের বাধ্য করার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি। মাধ্যমিক স্তরের বিভিন্ন শ্রেণির বই বছরের পর বছর সময়মতো শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছেন প্রকাশকরা। অন্যদিকে পাঠ্যপুস্তকের মান নিয়েও সংশয় ছিল। অস্পষ্ট ছাপা, নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার করা হতো এসব পাঠ্যপুস্তকে। কিন্তু বর্তমানে যে ঝকঝকে ছাপা রঙিন বইগুলো শিক্ষার্থীর হাতে দেয়া হচ্ছে তাতে শিক্ষার্থীদের বই পাঠের আনন্দ বহুগুণ বেড়ে যাচ্ছে। সদিচ্ছা থাকলে এসব অন্তরায় দূর করা যায়, সেটা প্রমাণ করেছে সরকার। আবার এটাও স্বীকার করতে হবে যে, বিনা মূল্যে বিতরণের বই এখনো শতভাগ নির্ভুল নয়। বইয়ের তথ্যবিভ্রান্তির নানান ঘটনাসহ যথাসময়ে বই ছাপা নিয়ে অনিয়মের ঘটনা এবছরও সামনে এসেছে। প্রত্যাশা থাকবে, জাতির মেধা বিকাশের এ ধারায় সরকার তথা দেশের নীতি-নির্ধারকরা শতভাগ শুদ্ধতার ব্যাপারে আপসহীন নীতিই গ্রহণ করবে। উলেস্নখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার শিক্ষাকে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে অভিহিত করেছেন। শিক্ষা যে দারিদ্র্যমুক্তির কার্যকর অস্ত্র তা প্রমাণিত হয়েছে শিক্ষা বিস্তারের সঙ্গে পালস্না দিয়ে দারিদ্র্যমুক্তির ঘটনায়। বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণসহ শিক্ষা খাতে বাজেটের এক উলেস্নখযোগ্য বিনিয়োগ যে জাতির জন্য সত্যিকার অর্থেই লাভজনক তা বাস্তবতার নিরিখেই প্রমাণিত হয়েছে। সুশিক্ষিত জাতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের এই পদক্ষেপ বিশ্ব সমাজেরও প্রশংসা অর্জন করেছে। শিক্ষাবিদসহ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে এনেছে। যা দেশের পুরো শিক্ষাব্যবস্থায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আমাদের প্রত্যাশা, এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সংশ্লিষ্টরা আরও আন্তরিক হবেন। পাশাপাশি শিক্ষা হোক আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত। শিক্ষার মান নিশ্চিতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিক- এটাই প্রত্যাশা।