ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পাট

অগ্রগতি ধরে রাখতে হবে

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
একটি দেশের সার্বিক সমৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে রপ্তানি আয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর রপ্তানি আয় বাড়াতে সরকারি উদ্যোগ, পাট পণ্যের বৈচিত্র্যায়ন, মানসম্পন্ন কাঁচামালের সহজলভ্যতা ও শক্ত ব্যবস্থাপনার কারণে দীর্ঘদিন ধুঁকতে থাকা পাট খাত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে- এমন খবর যখন সামনে আসছে, তখন তা অত্যন্ত ইতিবাচক বলেই প্রতীয়মান হয়। জানা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এ খাতের রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ইতিবাচক। বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই সুখকর। আমরা বলতে চাই, দীর্ঘদিন ধুঁকতে থাকা পাট খাত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে- এই বিষয়টিকে আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। তথ্য মতে, জুলাই থেকে অক্টোবর মাসে ৩১ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের পাটপণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া একই সময়ের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি। সঙ্গত কারণেই এটি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের মধ্যদিয়ে পাটের অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে। এ ছাড়া আমরা এটাও উলেস্নখ করতে চাই, বিশ্ববাজারের চাহিদা অনুযায়ী বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনে সক্ষমতার অভাবকে এই খাতের মূল সমস্যা বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা- ফলে সক্ষমতার অভাব কিংবা যে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা চিহ্নিত করে এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। বাংলাদেশ জুট গুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি বলেছেন, পাটপণ্যের ইতিবাচক ধারায় আসার কারণ হলো আন্তর্জাতিক বাজারে পাট সুতার দাম বাড়া ও ডলারের ভ্যালুয়েশন। এই দুটো কারণেই পাট খাতে কিছুটা প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। তবে শঙ্কা এখনো না কাটার বিষয়টিও আলোচনায় আসছে। এ ছাড়া তার ভাষ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে পাটের দাম বাড়তে থাকলে ক্রেতারা কম কেনেন। ফলে চাপের মুখে পড়েন দেশের রপ্তানিকারকরা। পাট খাতে সামান্য প্রবৃদ্ধি হলেও ভালো নেই রপ্তানিকারকরা। সরকারের সার্বিক ব্যবস্থাপনা এখনো অপ্রতুল বলেও জানা যাচ্ছে। আর দেশের বাজারে যারা পাটপণ্য সরবরাহ করেন তারাও ভালো নেই। পলিথিনের সহজলভ্যতার কারণে পাটের দিকে মানুষের আগ্রহ কম এমনটিও সামনে এসেছে। আমরা মনে করি, পলিথিনের বিষয়টা যেমন ভাবতে হবে, তেমনি অপ্রতুল ব্যবস্থাপনার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। প্রসঙ্গত, পাট খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় পোশাক খাত থেকে হলেও পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির গুরুত্ব অনেক বেশি। কেননা পোশাক খাত থেকে অর্জিত রপ্তানি আয়ের বড় অংশ চলে যায় কাঁচামাল আমদানিসহ কনসালটেন্সি ফি ও অন্যান্য সেবাবাবদ। অন্যদিকে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি আয়ের পুরো অংশই দেশে থেকে যায়। ফলে এ বিষয়ে সরকার ও পাট খাতের সঙ্গে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে- যা আমলে নিতে হবে। পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদন যেহেতু শ্রমঘন তাই এ খাত কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও বড় ভূমিকা রাখতে পারে- তাই এই বিষয়গুলো অনুধাবন করা জরুরি। সর্বোপরি বলতে চাই, পাটশিল্পের রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে- এই বিষয়টি আমলে নিয়ে অগ্রগতির ধারা বজায় রাখতে হবে। স্মরণ করা যেতে পারে, দেশের এক সময়ের রপ্তানি আয়ের মূল ভরসা ছিল পাট। কিন্তু গত চার দশকে তা কমে গেছে। কিন্তু সম্প্রতি যখন এই খাতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি পরিলক্ষিত হচ্ছে, তখন তা আশাব্যঞ্জক। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।