গ্যাসলাইন বিস্ফোরণে নিহত ৭

পুনরাবৃত্তি রোধে সতর্কতা জরুরি

প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
চট্টগ্রামের পাথরঘাটা এলাকায় গ্যাসের পাইপলাইন বিস্ফোরণে দেয়াল ধসে ৭ জন নিহত এবং ১০ জন দগ্ধ হয়েছেন। রোববার সকালে নগরীর পাথরঘাটা এলাকার ব্রিকফিল্ড রোডের ধনা বড়ুয়ার পাঁচতলা ভবনের নিচতলায় ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। খুব কাছাকাছি সময়ে রান্নার চুলার গ্যাস বিস্ফোরণ, সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহতের বেশ কয়েকটি ঘটনার খবর আমরা জানতে পেরেছি, যা খুবই মর্মান্তিক। বাসা বাড়িতে গ্যাস সংযোগে বা গ্যাসের চুলার ব্যবহারে অসাবধানতা ও অসচেতনতা, গ্যাসের সিলিন্ডার পরীক্ষা না করা এবং সরবরাহকৃত গ্যাসলাইনের ত্রম্নটির কারণে কত বড় বিপদ এবং মর্মান্তিক পরিণতি ডেকে আনতে পারে তার দৃষ্টান্ত এই ঘটনাগুলো। রোববার সকালে চট্টগ্রামের পাথারঘাটায় ওই ভয়াবহ বিস্ফোরণে পার্শ্ববর্তী ভবনের দেয়াল ধসে পড়ে। আর এর কারণ হিসেবে গ্যাসলাইনের ত্রম্নটি শনাক্ত করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। অপরদিকে তাদের সমর্থন করেছেন বিস্ফোরক অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও। তবে, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) কর্মকর্তারা গ্যাসলাইনে ত্রম্নটির বিষয়টি নাকচ করে সেপটিক ট্যাংকের বিস্ফোরণ হতে পারে বলে দাবি করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণের বিকট শব্দ আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অনুভূত হয়। তখন ওই ভবনের নিচতলার দেয়াল ও সীমানাপ্রাচীর ধসে রাস্তার ওপর পড়লে পথচারীও হতাহত হন। বড়ুয়া বিল্ডিংয়ের পাশাপাশি উল্টো দিকের জসীম বিল্ডিংয়ের নিচতলার দোকান ও আশপাশের কয়েকটি ভবনও বিস্ফোরণের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন সমন্বিতভাবে, মহানগর পুলিশ ও কেজিডিসিএলের পক্ষ থেকে মোট তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। খবরে জানা যায়, বিস্ফোরণে আহত ১৭ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে এদের মধ্যে ৭ জনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। নিহতদের মধ্যে দুজন নারী, একজন শিশু ও চারজন পুরুষ রয়েছেন। আর আহত ১০ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে গ্যাসলাইন বিস্ফোরণে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। বাসাবাড়ি, দোকানপাট ও যানবাহনেও ইদানীং সিলিন্ডার গ্যাসে বিস্ফোরণের মাত্রাও বাড়ছে। এতেও অনেকে হতাহত হচ্ছেন। এ পরিস্থিতি সত্যিই বিপজ্জনক। এর ঝুঁকি কমাতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য। গ্যাস বিস্ফোরণ ও অগ্নি দুর্ঘটনার কারণগুলো এখন আর অজানা নয়। কিন্তু আমরা সে সম্পর্কে ক্রমাগত অবহেলা করছি কিনা সে বিষয়টি ভেবে দেখার সময় এসেছে। আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে গ্যাস বিতরণ ও সিলিন্ডার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে, তেমনি যারা গ্যাস ব্যবহার করছেন তাদের অসচেতনতাও এ ক্ষেত্রে বহুলাংশে দায়ী। গ্যাসের পুরাতন পাইপ লাইনে ক্ষয়, পুরাতন কিংবা নতুন পাইপলাইনে ময়লা-আবর্জনা জমে লিকেজ-ছিদ্র ইত্যাদি তৈরি হওয়া, নানা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সংস্কার-উন্নয়ন কাজের সময় পাইপ ফেটে যাওয়া কিংবা পাইপের সংযোগ দুর্বল ও ঢিলা হয়ে যাওয়ার কারণেও এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আবার গ্যাস বিতরণ লাইন রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, অযত্ন-অবহেলা এবং সময়মতো কেন্দ্রীয় অফিস থেকে আঞ্চলিক অফিসগুলোতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহে বিলম্বের কারণেও নাগরিকদের জন্য তা বিপদ ডেকে আনছে বলেই প্রতীয়মান হয়। ফলে এ পরিস্থিতির অবসানই কাম্য। সর্বোপরি বলতে চাই, গ্যাস বিস্ফোরিত হয়ে যে হতাহতের ঘটনা ঘটে তা অত্যন্ত মারাত্মক। কেননা, এতই আকস্মিকভাবে এ দুর্ঘটনা ঘটে যে, তা থেকে সাধারণত পরিত্রাণ পাওয়া যায় না। আর অগ্নিদগ্ধে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এ ক্ষেত্রে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধকেই গুরুত্ব দিতে হবে। যথারীতি গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন নিয়মিত সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। গ্যাস কোম্পানিগুলোর অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করে গ্রাহক সেবার মানোন্নয়ন ঘটানোও জরুরি। পাশাপাশি ব্যবহার করতে হবে উন্নতমানের চুলা ও ফিটিংস। সিলিন্ডার ব্যবহারেও সতর্কতা প্রয়োজন। চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক ঘটনায় কর্তৃপক্ষগুলোর বক্তব্য দায় এড়ানো বলেই প্রতীয়মান হয়। যদিও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন থেকে বিস্ফোরণের কারণ স্পষ্ট হবে, তারপর সংশ্লিষ্টরা কি এই দুর্ঘটনায় তাদের দায় এড়াতে পারেন? প্রত্যাশা থাকবে, গ্যাস বিস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে সংশ্লিষ্ট সবাই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন।