পাঠক মত

চলুন সবাই এগিয়ে আসি

প্রকাশ | ২০ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
পৃথিবীতে মানুষ কোনো না কোনো কিছুর প্রতি অনুরক্ত বা আসক্ত হয়ে পড়ছে। তার ভিতরে মাদক একটি ভয়ানক নেশা। এক কথায় বলতে গেলে সুস্থ ও সুন্দর সমাজ নিপাত করতে মাদকের বিকল্প কিছু নাই। মাদকাসক্তি বর্তমানে আমাদের তরুণ সমাজের সবচেয়ে বড় ব্যাধি। আজকের তরুণই আগামীর ভবিষ্যৎ আমাদের দেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত করার জন্য প্রয়োজন সুস্থ-শিক্ষিত ও মেধাবী তরুণ শক্তি। অথচ সেই তরুণ শক্তি দিন দিন ম্রিয়মাণ হয়ে পড়েছে। মাদকাসক্তের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ কাজ করে। তার মধ্যে উলেস্নখযোগ্য কয়েকটি হলো- পারিবারিক অশান্তি, সঙ্গদোষ, কৌতূহল, অনুকরণ, প্রেমে ব্যর্থতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, বেকারত্ব ও দারিদ্র্য মূল্যবোধের অবক্ষয় ইত্যাদি। মাদকাসক্ত তরুণরা নেশার খরচ জোগানোর জন্য চুরি- ছিনতাই-অপহরণ-খুন ও ধর্ষণের মতো নানারকম সমাজবিরোধী কাজে লিপ্ত হচ্ছে। মাদক সেবনের ফলে ব্যবহারকারীর রক্তচাপ বেড়ে যায়। লিভার-কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যৌনক্ষমতা হ্রাস পায় ক্যান্সার ও ব্রেন টিউমার এবং এইডসসহ নানান ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আর স্বভাবিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে বিসর্জন দিচ্ছে। অনেকে অকালে মৃতু্যবরণ করছে। তাই দেশকে ভয়াবহ মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পরিবারের সবার প্রতি সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য বজায় রাখতে হবে। তাই নেশা ছেড়ে কলম ধরি মাদকমুক্ত সমাজ গড়ি। আকাশ হোসেন করিম শিক্ষার্থী, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, ফরিদপুর ধর্ষিতা এবং আমাদের সমাজ বাস্তবতা বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে ধর্ষণ একটি নিত্য-নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকাশ্যে রাস্তায়, বিভিন্ন যানবাহনে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমনকি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও বাদ পড়ে না ধর্ষকের কু-প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার জায়গা হিসেবে। পত্রিকার পাতা খুললে কখনো কখনো গণধর্ষণ নামক পাশবিকতার চিত্রও কম দেখি না। আবার কখনো নির্মম এই দৃশ্য দেখেও দর্শকের ভূমিকা পালন করে এ থেকে আমোদ খুঁজে নেয়া মানুষও এ সমাজে রয়েছে। ধর্ষণকে মানুষের কাছে দর্শন উপযোগী করার জন্য ভিডিও ধারণ করে ওই মেয়েটিকে সারা জীবনের জন্য সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার মতো উন্মাদের অভাবও সমাজে নেই। কিন্তু একটি মেয়ে ধর্ষিতা হলে সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে যে সুবিচার পাওয়া উচিত তার কতটুকু পাচ্ছে সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। আমাদের সমাজব্যবস্থায় একজন ধর্ষকের অবস্থান এবং একজন ধর্ষিতার অবস্থান যদি বিবেচনা করা হয় তাহলে অন্ততপক্ষে একটি বিষয় পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে যে আমাদের সমাজ ধর্ষকের প্রতিই এখনো যতটা সহানুভূতিশীল ধর্ষিতার প্রতি ততটাও নয়। প্রতিদিন দেশের মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেই চলেছে। কিন্তু আমরা সামাজিকভাবে কয়জন ধর্ষককে বয়কট করতে পেরেছি? আমরা শুধু পেরেছি ধর্ষিতার পেছনে পড়ে তার জীবনের অতীত ইতিহাসের খেরোখাতা থেকে কাজের অকাজের কিছু তথ্য বের করে ধর্ষিত হওয়ার জন্য সমানভাবে নারীকে দায় দিয়ে হেনস্তা করতে। যাতে দিন শেষে নিজে ধর্ষিত হওয়ার পেছনে নিজেকেই দোষ কাঁধে নিয়ে আত্মহত্যার মতো নির্মম মৃতু্যর স্বাদ গ্রহণ করতে অনেকে বাধ্য হয়। অথচ ধর্ষক তখনও বুক ফুলিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় এবং কারও কারও পাশবিক বাহ্বার ফুলঝুরিতে অভিষিক্তও হয়। একটি ধর্ষণের পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। কিন্তু অপরাধ তো অপরাধ হিসেবেই বিবেচিত হওয়া উচিত। কারণ যে কোনো কিছুর বদলা হিসেবেও ধর্ষণ শুধু নয়- কোনো অপরাধকেই সমর্থন করা যায় না। সে ক্ষেত্রে ধর্ষণ এমন একটি অপরাধ যেটি একটি মেয়ের শারীরিক ও মানসিকভাবে চরম ক্ষতি সাধন করে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে ঘটে যাওয়া হাজারটা ধর্ষন্ডের ঘটনায় কতজন ধর্ষককে শাস্তির আওতায় আনা গেছে সেটিই এখন আমাদের জিজ্ঞাসা। আইনের ফাঁক-ফোকর গলিয়ে হাজারো ধর্ষক পার পেয়ে গেলেও ধর্ষিতা মেয়েটির হাহুতাশ মাখা অভিশাপ আর চোখের জল লুকিয়ে রাখার ব্যর্থ চেষ্টাগুলো কীভাবে থামানো যাবে সে বিষয়ে কি কেউ কখনো ভেবে দেখেছেন? যেখানে হাজারটা ধর্ষণের ঘটনার মধ্যে শতজনকেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে আমরা দেখতে পাই না, যেখানে হাজারটা মামলা দিনের পর দিন ঝুলে থেকে একসময় তা বিস্মৃতির অন্তরালে চলে যায় সেখানে বিচারব্যবস্থার নাজেহাল অবস্থাকেই আমাদের মলিন মুখে মেনে নিতে হচ্ছে দিনের পর দিন। একটি মেয়ে যখন ধর্ষণের শিকার হয় তখন থেকেই তার জীবনে সূচনা হয় দুর্বিষহ যন্ত্রণার অধ্যায়। যা তার পুরো জীবনকেই তছনছ করে দেয়। সমাজের মানুষের কটূক্তি সহ্য করা, নিজের ভালোবাসার মানুষটির কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়া, এমনকি পরিবার থেকেও প্রয়োজনীয় মানসিক সহায়তা না পাওয়া যে কত বড় যন্ত্রণার তা সে করুন তিক্ততায় উপলব্ধি করতে থাকে। স্বপ্ন ভরা জীবনের শুরু হয়েও যেন হঠাৎ করেই থমকে যায়। সমাজের সুশীল বলে পরিচিত ব্যক্তিরাও ধর্ষিতার হয়ে কিছু করে সম্মানিত বোধ করেন না। নিজের করুন এই দিনগুলোতে ভিতরের কথাগুলো অকপটে শুনতে পারে এমন সঙ্গ দেয়ার মতোও তার কেউ থাকে না। ফলে দেখে মানুষ মনে হলেও ভিতরে ভিতরে দিন দিন তারা মরা লাশে পরিণত হয়। অন্যদিকে একজন ধর্ষককে কখনই এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না। তাই একজন ধর্ষণের শিকার নারী যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে সুবিচার লাভ করতে সক্ষম হলেও সামাজিকভাবে কখনই সুবিচার লাভে সক্ষম হয় না। দেশের হাজার হাজার সুবিচার প্রত্যাশী ধর্ষণের শিকার এই নারীদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারকে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যাতে তারা স্বাবলম্বী হয়ে নিজের সক্ষমতার পরিচয় দিয়ে নিজের এবং দেশের উন্নয়নে অংশ নিতে পারে। সামাজিকভাবে ধর্ষণের শিকার নারীদের প্রতি মানবিক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতে হবে। যাতে তারা তাদের পেছনের তিক্ত অভিজ্ঞতা খুব সহজে ভুলে যেতে সক্ষম হয়। তাহলেই বোধ করি একজন ধর্ষিতা সুবিচার পাবে। ফরহাদ আলী শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়