ডিজিটাল বিপস্নব ও চতুর্থ শিল্পবিপস্নব একে অন্যের পরিপূরক

স্বাধীনতার পর একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে 'সোনার বাংলা' হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরবর্তী প্রজন্মকে 'গেস্নাবাল ভিলেজ'-এর সঙ্গে যুক্ত করার বিষয়টি ছিল তার চিন্তায়ও। তাই তিনি ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধন করেছিলেন। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন, এ দেশের মানুষকে উন্নত জীবন দেওয়ার, বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে বাঁচার। নতুন জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি, প্রচারমাধ্যম, ব্যবসা-বাণিজ্য, কল-কারখানা, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও কৃষি সব ক্ষেত্রে কারিগরি ও ডিজিটাল শিক্ষার ধ্যান-ধারণায় একটি জ্ঞানভিত্তিক জাতি ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিশন ২০২১, ২০৩০, ২০৪১ ঘোষণা করেছেন। দিয়েছেন একটি ফ্রেমওয়ার্ক, যার নামও ডেল্টা পস্ন্যান। নানা অকল্যাণ পরিহার করে প্রযুক্তিবান্ধব জাতি হিসেবে বিশ্বে জায়গা করে নেব আমরা। বাস্তবায়ন হবে শতবর্ষব্যাপী ডেল্টা পস্ন্যান। পূরণ হবে জাতির জনকের স্বপ্ন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি উন্নত বাংলাদেশ।

প্রকাশ | ২১ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
বর্তমান বিশ্ব হচ্ছে জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প-সংস্কৃতি চর্চা ও বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার এক অবারিত ক্ষেত্র। যে দেশ যত দ্রম্নত এসব বিষয়ে সুষ্ঠু পরিকল্পনা অনুযায়ী আত্মনিয়োগ ও গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞানার্জন করে সফল হতে পারে সে দেশ তত বেশি উন্নত রাষ্ট্র এবং বিশ্বদরবারে উন্নত ও মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সে লক্ষ্যে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। যার স্থপতি হিসেবে রয়েছেন তার ছেলে প্রখ্যাত তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সজীব ওয়াজেদ জয়। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দেয়, ২০২১ সালের মধ্যে স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তিতে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ে তুলবে। এরপর ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পরই মূলত 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত ১০ বছরে শিক্ষাসহ সব খাতেই এর তুমুল উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে। তাই এটা এখন আর স্বপ্ন নয়- বাস্তব। 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' বাস্তবায়ন তথা 'গেস্নাবাল ভিলেজ'-এর অংশ হতে 'বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি' শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকারও সেভাবেই গড়ে তুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্কুল থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। গড়ে তোলা হয়েছে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ও। বাংলাদেশ জনবহুল অথচ ছোট্ট একটি দেশ। এ দেশে রয়েছে ৮০ মিলিয়ন (৮ কোটি) যুবক, যাদের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। বিপুল এ যুবসমাজকে আধুনিক জ্ঞান ও দক্ষতা এবং প্রযুক্তিনির্ভর উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে গড়ে তোলা সম্ভব হলে বিশ্বে উন্নত দেশ হিসেবে জায়গা করে নেবে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, এ ৮ কোটি ১৫ থেকে ৩৫ বছরের যুবকই আমাদের বিশাল সম্পদ। তাদের প্রযুক্তিবান্ধব করেই আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন গবেষণা ও প্রযুক্তিনির্ভর মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা। এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। 'ডিজিটাল বাংলাদেশ'-এ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা পাল্টে যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির বিপস্নবের মাধ্যমে এ দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে 'শহড়ষিবফমব বপড়হড়সু'-এর যুগে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক বুনিয়াদ শক্ত করে তুলবে। ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। প্রশাসনিক অবকাঠামোতেও গতিশীল ও দুর্নীতি কমে আসবে। বাংলাদেশ আজ প্রযুক্তি খাতে বিস্ময়কর অগ্রগতি অর্জন করেছে। দেশের সব প্রান্তে পৌঁছে গেছে ফোরজি ইন্টারনেট প্রযুক্তি, যা যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করার পাশাপাশি আমাদের শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। যোগাযোগমাধ্যম আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে দেশের প্রথম নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলো এটি ব্যবহার করছে। এতে প্রতি বছরে প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হচ্ছে। আমরা জানি, প্রথম শিল্পবিপস্নবের ফলে যান্ত্রিকীকরণের সূচনা হয়। কৃষি থেকে শুরু করে খনি শিল্পের অগ্রগতি সাধন হয়। আর ১৮৭০ সালে বিদু্যৎ আবিষ্কৃত হয়, তখন পৃথিবী আলোকিত হয়ে প্রবেশ করে দ্বিতীয় বিপস্নবে। তৃতীয় শিল্পবিপস্নবটি ছিল ডিজিটাল বিপস্নব। ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেটের উদ্ভাবনের মাধ্যমেই এর বিস্তার ঘটে। বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির এ বিস্তারই মূলত বিশ্বজগৎকে মানুষের হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। এখন অপেক্ষা চতুর্থ শিল্পবিপস্নবের। বোদ্ধাদের ভাষ্য, চতুর্থ শিল্পবিপস্নবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ইন্টারনেট অব থিংসের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। তাই এ শিল্পবিপস্নব থেকে লাভবান হওয়ার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত এবং উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। প্রযুক্তির উৎকর্ষ কাজে লাগিয়ে পরিবর্তিত-পরিবর্ধিত হবে শিল্প-অর্থনীতির নানা ক্ষেত্র। মানুষের জীবনকে এক ধাপেই শতবর্ষ এগিয়ে নিয়ে যাবে। এ অবস্থায় উন্নত বিশ্বের সঙ্গে আমাদেরও ওই বিপস্নবে মানিয়ে নেওয়ার জন্য এসব পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ চতুর্থ শিল্পবিপস্নব মোকাবিলায় শুধু একাডেমিক শিক্ষায় শিক্ষা অর্জন করলেই হবে না, শিক্ষার্থীদের হতে হবে অন্যান্য বিষয়ে দক্ষ। যেমন- ইন্টার পার্সনাল ও অ্যানালাইটিক্যাল স্কিল বাড়াতে হবে। কারণ ওই সময়ে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই যথেষ্ট নয়। চতুর্থ শিল্পবিপস্নব নিয়ে দেশে প্রচুর সেমিনার আর গোলটেবিল বৈঠক হচ্ছে। সবারই একই মত, এই বিপস্নব মোকাবিলায় অনেক কাজ করতে হবে। এটুআই, এআই, আইওটি, বিগ ডেটা, বস্নকচেইনের মতো জনপ্রিয় শব্দ নিয়ে কথা বলা হচ্ছে সেখানে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ নেই। আর কেবল পরিকল্পনা করলেই তো হবে না, অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের মানবসম্পদকেও যথাযথভাবে প্রস্তুত করতে হবে এই পরিবর্তনের জন্য। তবে আশার কথা, সম্প্রতি 'ন্যাশনাল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স স্ট্র্যাটেজি' নিয়ে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। সারাবিশ্বে প্রযুক্তিগত এই পরিবর্তনের কারণে আগামী ১০ বছরে অনেক পেশা হারিয়ে যেতে পারে, সঙ্গে অবশ্য যোগ হবে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র। পিডাবিস্নউসি জানাচ্ছে, স্বয়ংক্রিয়করণ প্রযুক্তির জন্য ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ৮০ কোটি বর্তমান চাকরি হারিয়ে যাবে। স্বভাবতই আমাদের মতো শ্রমনির্ভর অর্থনীতির দেশগুলো বিপদে পড়বে। তাই আমাদের এখন থেকেই জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপস্নবের দ্বারপ্রান্তে এসে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' বিনির্মাণের লক্ষ্যে যোগ্য মানবসম্পদ গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের দক্ষ করে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের কম রিসোর্স (গবেষণার প্রয়োজনীয় সম্পদ ও সরঞ্জাম) রয়েছে তারা দেশের অন্যান্য বড় কিংবা দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ভাগাভাগির (শেয়ার) মাধ্যমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। চালিয়ে যেতে পারেন তাদের গবেষণাকর্মও। এতে উভয়পক্ষই লাভবান হবেন। এ ছাড়া নিজেদের সীমিত সম্পদের মধ্যেই শিক্ষা কার্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তির সম্মিলন কীভাবে ঘটানো যায়, তা ভেবে দেখতে হবে। মোদ্দাকথা, আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য যোগ্য ও দক্ষ নাগরিক হিসেবে বিপুল এ তরুণদের বা শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে যা করণীয় সবই করতে হবে। কারণ আসন্ন চতুর্থ শিল্পবিপস্নব হবে জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিক্ষা, যোগাযোগ, পরিবহণ, শিল্পকারখানা, রোবোটিক সাইন্স, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও গবেষণা ইত্যাদি সব কাজে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ও ইন্টারনেট এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সমন্বয়ে গড়ে উঠবে একটি ডিজিটাল বিশ্ব। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়- দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতেও প্রকৌশল শিক্ষার গুণগত মান ও দক্ষতা বাড়াতে হবে। নজর দিতে হবে ইংরেজি শিক্ষার প্রতিও। কারণ আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ'-এ ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই মাতৃভাষা বাংলার পাশাপাশি পাঠ্যপুস্তক ও সিলেবাস প্রণয়নে ইংরেজি শিক্ষার বিষয়টিও দেখতে হবে। তবে অন্যান্য বিষয়ও থাকতে পারে। তবে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর বিষয়গুলোকে। কারণ বিশ্ব এখন চতুর্থ শিল্পবিপস্নব বা ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভিউলেশনের দ্বারপ্রান্তে। এ জন্য বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলো প্রস্তুতি শুরু করেছে। কেননা এ বিপস্নব শিল্পের নয়- এ বিপস্নব হবে মূলত প্রযুক্তির বিপস্নব। কয়েক বছরে বেশ স্বল্পসময়েই বাংলাদেশ শিক্ষা খাতে তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। 'তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা নয়, শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার' স্স্নোগানে প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও প্রচলিত ধারার শিখন-শেখানো পদ্ধতির পরিবর্তে তথ্যপ্রযুক্তির সংযোগ ঘটানো হয়েছে, যা প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি)বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের চিন্তারই ফসল। তথ্যমতে, দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রায় ৩৫ হাজার মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট মডেম ও স্পিকার স্থাপন করা হয়েছে। এ শ্রেণিকক্ষকেই বলা হচ্ছে 'মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম'। ইন্টারনেট ব্যবহার আর সফটওয়্যার অটোমেশন করে হওয়া 'ডিজিটালাইজেশন' কিন্তু তৃতীয় শিল্পবিপস্নবের অংশ, যা নিয়ে এখন অনেক হইচই বাংলাদেশে। এর সঙ্গে চতুর্থ শিল্পবিপস্নবের প্রধান নিয়ামক মেশিনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বিভিন্ন সার্ভিস অটোমাইজেশনের মধ্যে কিন্তু বিস্তর ফারাক। উলেস্নখ্য, ওয়ালটনের কারখানায় 'কম্প্রেসর অ্যাসেম্বলি' করতে ব্যবহার করা হচ্ছে বেশ কিছু রোবটিক প্রযুক্তি। স্মার্ট ফ্রিজ আর স্মার্ট টিভি বানানোর কাজও দেশেই করছে ওয়ালটন। এটুআই 'রুপালি' প্রযুক্তির মাধ্যমে 'প্যাটার্ন অ্যানালাইসিস' আর 'আইওটি' ব্যবহার করে মৎস্যচাষিদের দিচ্ছে অটোমাইজড পরামর্শসেবা। 'ফসলি' নামেও ডিজিটাল কৃষিসেবা দিচ্ছে এটুআই। এপেক্স গ্রম্নপ বিনিয়োগ করছে 'গ্রে ডেটা সায়েন্স' কোম্পানিতে। আমাদের টেক্সটাইল কারখানায় লেজার কাটিং প্রযুক্তিতেও এখন চলে এসেছে অটোমাইজেশন। 'বিকাশ'-এর মাধ্যমে অনেকখানি বদলে গেছে এ দেশের মোবাইল-ব্যাংকিং সিস্টেম। প্রান্তিক লোকজন কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা ছাড়াই সহজে বিভিন্ন জায়গায় অর্থ লেনদেন করতে পারছেন। বিকাশে প্রতিদিন এখন লেনদেন হচ্ছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। রকেট, নগদ, আইপে-ও নগদ কাজ করছে এখন এই সেক্টরে। আইসিডিডিআরবিতে 'কারা' নামের টেলি-অফথালমোলজি প্রযুক্তি দিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি শনাক্তের একটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি চালু করা হয়েছে সম্প্রতি। 'বন্ডস্টাইন' টানা চার বছরের মতো সফলভাবে মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানোর জন্য আইওটি ডিভাইসের মাধ্যমে স্মার্ট ট্র্যাকিং ব্যবহার করে আসছে। বর্তমানে জাতিসংঘের ই-গভর্নমেন্ট উন্নয়ন সূচকে ১১৫ নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয় ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী পাঁচ বছরে এ সূচকে ৫০ ধাপ এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা। স্বাধীনতার পর একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে 'সোনার বাংলা' হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরবর্তী প্রজন্মকে 'গেস্নাবাল ভিলেজ'-এর সঙ্গে যুক্ত করার বিষয়টি ছিল তার চিন্তায়ও। তাই তিনি ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধন করেছিলেন। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন, এ দেশের মানুষকে উন্নত জীবন দেওয়ার, বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে বাঁচার। নতুন জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি, প্রচারমাধ্যম, ব্যবসা-বাণিজ্য, কল-কারখানা, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও কৃষি সব ক্ষেত্রে কারিগরি ও ডিজিটাল শিক্ষার ধ্যান-ধারণায় একটি জ্ঞানভিত্তিক জাতি ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিশন ২০২১, ২০৩০, ২০৪১ ঘোষণা করেছেন। দিয়েছেন একটি ফ্রেমওয়ার্ক, যার নামও ডেল্টা পস্ন্যান। নানা অকল্যাণ পরিহার করে প্রযুক্তিবান্ধব জাতি হিসেবে বিশ্বে জায়গা করে নেব আমরা। বাস্তবায়ন হবে শতবর্ষব্যাপী ডেল্টা পস্ন্যান। পূরণ হবে জাতির জনকের স্বপ্ন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি উন্নত বাংলাদেশ। ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ: লেখক, কলামিস্ট ও গবেষক