'গুজব'-এ মাতোয়ারা দেশ

এ প্রবণতা থেকে বের হওয়া জরুরি

প্রকাশ | ২১ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, হঠাৎ করেই সারাদেশে এক ধরনের 'গুজব' ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। ধর্মীয় অবমাননা থেকে শুরু করে পণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রের নানান ঘটনা নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যমে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমেই বেশিরভাগ গুজব ছড়িয়ে পড়ছে। অপরদিকে গুজবের সত্য-মিথ্যা যাচাই না করে দেশের মানুষও যারপরনাই ঘটিয়ে ফেলছেন নানান অপ্রীতিকর ঘটনা। অতীতে গুজবের সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের আগে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘটে গেছে সংঘর্ষ-রক্তপাত এমনকি সাম্প্রদায়িক হামলার মতো মর্মন্তুদ ঘটনাপ্রবাহ। দেশের বাজারে প্রায় একমাস ধরে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে চলছে মাতামাতি। আর এর রেশ কাটতে না কাটতেই এবার লবণের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা চলেছে। এ নিয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকেই লবণের দাম বৃদ্ধির গুজব ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। বিভিন্ন এলাকায় লবণ নিয়ে 'তুলকালাম কান্ড' ঘটে বলে গণমাধ্যমের খবরেও বলা হয়েছে। তথ্য মতে, এ ঘটনায় সারাদেশে লবণ কেনার ধুম পড়ে এবং বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শুধু 'লবণ' সংক্রান্ত গুজবই নয়, সার্বিকভাবে বাংলাদেশ যেন গুজবের কারখানায় পরিণত হয়েছে। এ পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগের বলেই প্রতীয়মান হয়। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে লবণের দাম বৃদ্ধির গুজবে একদিনেই ভোগ্যপণ্যের দোকান থেকে হাজার হাজার কেজি লবণ বিক্রি হয়ে যায়। আর এ সুযোগে দোকানিরাও লবণের দাম বাড়িয়ে দেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়, চাহিদার চেয়ে ছয়গুণ বেশি লবণ জমা আছে। এরপরও লবণ কেনার হিড়িক থামানো যায়নি। কোথাও কোথাও বেশি দামে লবণ বিক্রির অভিযোগে দোকানিকে জরিমানাও করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ধরনের গুজব কেন ছড়ানো হচ্ছে? সার্বিক বিবেচনায় মনে হওয়া অমূলক নয় যে, জনমনে 'আতঙ্ক এবং জনবিশৃঙ্খলা সৃষ্টির' জন্যই গুজব ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। আমরা বলতে চাই, গুজব ছড়ানোর বিষয়টি অত্যন্ত গর্হিত এবং 'অপরাধ' হিসেবে শনাক্ত করলেও অতু্যক্তি হয় না। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সাধারণ মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হ্রাস হলে 'গুজব' ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে যেহেতু মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়নি বলে বারবার আশ্বস্ত করা হচ্ছে, সুতরাং গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে কোনো ধরনের নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা কেউ করছে কিনা; যদি তেমন আশঙ্কা থাকে, তাহলে অবশ্যই সেই ষড়যন্ত্রের বিচার হওয়া উচিত। এ ছাড়া যেহেতু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, সেহেতু সামাজিক যোগড়াযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের নজরদারি আরও বাড়ানো জরুরি। মনে রাখা দরকার, গুজব ছড়িয়ে জনগণকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তোলা এক ধরনের 'নীলনকশা'; ফলে রাষ্ট্রেরই কর্তব্য হওয়া দরকার অতিদ্রম্নত তা খতিয়ে দেখে কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চিত করা। আমরা বলতে চাই, গুজব ছড়ানো সব সময়ের জন্যই অশুভ ইঙ্গিতবাহী। শুভশক্তির কোনো ব্যক্তি বা পক্ষ এ কাজ করতে পারে না। সঙ্গত কারণেই গুজব রটনাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া জরুরি। সরকারের পক্ষ থেকে যদিও গুজবে কান না দিতে দেশের মানুষকে অনুরোধ করা হয়েছে। অপরদিকে গুজব জাতীয় কোনো কিছু ফেসবুকে শেয়ার বা পোস্ট দেয়া হলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও ঘোষণা রয়েছে। এরপরও আমরা মনে করি, সরকার ও প্রশাসনের পাশাপাশি শুভবুদ্ধিসম্পন্ন প্রত্যেক নাগরিককে গুজব যাতে না ছড়ায় তার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। বড় কথা, কোনো খবর শোনামাত্রই যাচাই-বাছাই ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেওয়া সুবিবেচনার পরিচয় হতে পারে না। সর্বোপরি, 'কান নিয়েছে চিলে'- এমন কথায় বিশ্বাস না করে নিজের কানে হাত দিয়ে দেখা শ্রেয়। তবে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইতিপূর্বে এরূপ গুজবে গ্রেপ্তারের ঘটনাও আছে। এটি ইতিবাচক। আমরা আশা করি, এসব দেখে ভবিষ্যতে অন্যরা সাবধান ও সচেতন হবে।