নদী দখলদার শনাক্ত

মুক্ত করতে উদ্যোগ নিন

প্রকাশ | ২২ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশের নানাবিদ সমস্যার মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা হলো নদ-নদী, সরকারি জমি, বিল-জলাশয় দখল। সরকারি এসব সম্পত্তি দখলমুক্ত করতে সরকারকে বিভিন্ন সময়ে পদক্ষেপ নিতে দেখা গেলেও অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে এসব সম্পত্তি উদ্ধার করা যায়নি। বলার অপেক্ষা রাখে না, নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রকৃতি-পরিবেশ ক্রমেই বদলে যাচ্ছে। ফলে বাড়ছে নোনা পানির অনুপ্রবেশ, মরুকরণপ্রক্রিয়া, ভূগর্ভে পানির স্তর নেমে যাওয়া, বন্যা, নদীভাঙনসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। নদীভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় রীতিমতো ধস নেমেছে। ফলে নদী না বাঁচলে যে বাংলাদেশ বাঁচবে না- এ সত্যটি ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। বৃহস্পতিবার যায়যায়দিনে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সম্প্রতি নদী কমিশন সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে দেশে বিভিন্ন নদ-নদীতে ৪৯ হাজার ১৬২ জন দখল বসিয়েছে। পাশাপাশি দখলদারের হাত থেকে নদ-নদী উদ্ধারে কমিশন কাজ করছে বলেও কমিটিকে জানানো হয়েছে। নদী কমিশনের এ উদ্যোগকে আশাব্যঞ্জক হিসেবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর তুরাগ নদ রক্ষায় নির্দেশনা চেয়ে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট তুরাগসহ দেশের সব নদ-নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করা করে এগুলো সুরক্ষায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে আইনগত অভিভাবক ঘোষণা করে ১৭ দফা নির্দেশনা প্রদান করেন। আর এই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে নদীদূষণ, দখল, ভরাট ও নদীর জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। পাশাপাশি প্রতি জেলায় দখলদারদের নাম-ঠিকানা উন্মুক্ত স্থানে টাঙিয়ে দেয়ারও ঘোষণা দিয়েছিল নদী কমিশন। এবার সংসদীয় কমিটিও দখল হওয়া এসব নদী উদ্ধারে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরিকল্পনা গ্রহণ করে তার অগ্রগতি কমিটিকে জানানোর সুপারিশ করা হয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে কিনা, সে বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া আইনের পরিবর্তন-সংযোজনের প্রয়োজন আছে কিনা, তার খসড়া সুপারিশ ও দখল হওয়া নদীগুলোর ম্যাপসহ কমিটিতে উপস্থাপনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যে জানা যায়, দেশে প্রবহমান নদীর সংখ্যা ৪০৩টি। নদী রক্ষা কমিশন বলছে, প্রায় সব নদীই এখন দখল-দূষণের কবলে। নদী দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসকদের অধীনে এক বছরের ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নেওয়ার তথ্যও রয়েছে। কমিশন থেকে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকদের যথাযথ নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এর আগে জানা গিয়েছিল, দেশের ৫৯ জেলায় ৪৫ হাজার ১৪৮ দখলদারের মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তি, রাজনীতিক ও প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে। দখলদার তালিকায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সংখ্যাই বেশি। সবচেয়ে বেশি দখলদার চট্টগ্রাম বিভাগে। অন্যদিকে ঢাকার চারপাশের নদী দখলদারদের নাম চিহ্নিত করতে পারেনি কমিশন। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাজধানীর দখলদারদেরও চিহ্নিত করার কাজ অব্যাহত আছে। আমরা বলতে চাই, নদী জাতীয় সম্পদ; ফলে দখল করে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার প্রয়াস রুখে দিতে হবে জাতীয় স্বার্থেই। জানা যায়, দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে নদ-নদীকে অবৈধ দখলমুক্ত করতে নির্দেশ দেয়ার পর প্রশাসন থেকে সারা দেশেই বড় ধরনের উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। অন্যদিকে প্রভাবশালী মহলের দখলে থাকা স্থাপনা উচ্ছেদে বাধা পাচ্ছে প্রশাসন। অনেকে মামলা করে স্থাপনা উচ্ছেদ ঠেকিয়ে রাখছে, যা নদী দখলমুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক বলেই প্রতীয়মান হয়। এ পরিস্থিতির অবসানেও সংশ্লিষ্টদের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। উলেস্নখ্য, সবচেয়ে বেশি দখলের শিকার দেশের ৩৭ নদ-নদীতে তিন ধরনের দখল রয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে স্থায়ী আবাসন বা বাণিজ্যকেন্দ্র ছাড়াও সরকারি অপরিকল্পিত স্থাপনার মাধ্যমেও নদ-নদী দখলের শিকার হচ্ছে। অপরিকল্পিত স্থাপনা বলতে সাধারণত পরিকল্পনাহীন ও অবৈজ্ঞানিকভাবে নির্মিত আড়াআড়ি সড়ক, বাঁধ ও স্স্নুইসগেটকে বোঝানো হয়ে থাকে। এমন দখলের শিকার বৃহত্তর রাজশাহী ও পাবনা অঞ্চলের বড়াল নদী। গবেষকদের মতে, নগর সংলগ্ন নদ-নদীর দূষণ ও দখল নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। কিন্তু দখল-দূষণের থাবা প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বিস্তৃত। নদী দখল ও দূষণকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে কঠিন সাজা এবং বড় আকারের জরিমানা নির্ধারণ করতে বিশেষজ্ঞদের যে মতামত রয়েছে, সে বিষয়টিও সংশ্লিষ্টরা আমলে নিতে পারে। সর্বোপরি নদী রক্ষায় গৃহীত উদ্যোগগুলো আরও গতিশীল হোক, নদী দখলমুক্ত করতে আদালতের নির্দেশনার প্রতিফলন ঘটুক- এটাই প্রত্যাশা।