পাঠক মত

প্রতিটি তরুণ হোক সম্পদ

প্রকাশ | ২২ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
জনসংখ্যা একটি দেশের মূল উপাদান। জনসংখ্যা ছাড়া কোনো দেশের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। জনসংখ্যাকে একটি রাষ্ট্রের হৃদপিন্ড বলা হয়। একটি দেশ কীভাবে উন্নয়নশীল দেশ থেকে ধীরে ধীরে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হবে তা নির্ভর করে ওই দেশের জনসংখ্যার মেধা ও কার্যাবলির উপরে। বিশ্বের সামনে অমূর্ত ভাব ও নিজ দেশের উন্নয়ন এবং ক্রমোন্নতি বাস্তবায়নের জন্য নাগরিকের অবদান অনস্বীকার্য। যুদ্ধবিধ্বস্ত ক্ষত-বিক্ষত বাংলাদেশের ক্রমোন্নয়ে ভাঙ্গাগড়ার মধ্যদিয়ে এগিয়ে চলায় নাগরিকদের ভূমিকা তুলনাহীন। ক্রমেই ধীরে ধীরে দেশের রূপ পরিবর্তন হয়ে আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হয়েছি। বিশ্বের কাছে জানান দিয়েছি আমরা আর পিছিয়ে নেই, এগিয়ে চলেছি মোদের বাঙালি বৈশিষ্ট্যেই তথা স্বকীয়যোগ্যতায়। এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে সবার ঐক্য প্রচেষ্টায় বিশেষ করে তরুণ ও যুব জনবলের জন্য। যাদের তারুণ্যের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে মাতৃভাষা বাংলাকে পাওয়া ও মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনও সম্ভব হয়েছে। তাই তরুণরা দেশের জন্য কখনোই অভিশাপ নয় বরং তারা দেশের অস্তিত্ব ও মূল সম্পদ। আমাদের দেশ স্বল্প আয়তনের একটি দেশ। অল্প আয়তনের তুলনায় অতিরিক্ত জনসংখ্যা আমাদের প্রধান সমস্যা। তবে জনসংখ্যাকে কোনোভাবেই অস্বীকার করার অবকাশ নেই, কারণ তারাই দেশের মূল উপাদান। তবে অর্থনৈতিক দিক থেকে তাকালে এই বর্ধিত জনসংখ্যাই দেশের জন্য বড়ই চিন্তার বিষয়। তবে জনসংখ্যার সিংহভাগই তরুণ ও যুবক। যারা জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম। কিন্তু একথাও সত্য যে, সম্প্রতি এই তরুণ ও যুবকরাই দেশের জন্য বড়ই উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কারণটি হয়তো বুদ্ধিসম্পূর্ণ কারোরই অজানা থাকার কথা নয়। সম্প্রতি দেশে চলমান রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা সৃজনে তরুণ ও যুবসমাজের ভূমিকা অনেক। তারা দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ফেলতে মুখ্য ভূমিকা রাখছে প্রতিনিয়ত। অন্যদিকে প্রতিবছর চাকরিপ্রার্থী তরুণ যুবকের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। তারা চাকরি বাজারে হাজিরা দিচ্ছে। সেখানে একজনের বিপরীতে হাজারেরও বেশিসংখ্যক প্রার্থী যারা একে অপরের প্রতিপক্ষ। অনেক সময় নিজের ইচ্ছা, চাহিদা ও রুচিসম্মত চাকরি না পেয়ে তারা হতাশায় নিমজ্জিত হয়। দূষতে থাকে নিজেকে কখনো বা নিজের ভাগ্যকে এমনকি রাষ্ট্রকেও। বর্তমানে আমাদের দেশের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর পড়ালেখার মূল উদ্দেশ্য চাকরি। গতানুগতিক ধারার পড়ালেখার পেছনে সময় ব্যয় করায় আমাদের মূল লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। গবেষণামুখী পড়ালেখা আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। যে পড়ালেখা দেশের কল্যাণ বয়ে আনবে তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে একেবারে নেই বললে ভুল হবে না। আজ তরুণ প্রজন্ম পড়ালেখার মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ভুলে একমাত্র চাকরিকেই লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছে। কিন্তু বেলা শেষে অধিকাংশই দেশের প্রতি পুরোপুরি তৃপ্ত হতে পারে না, কারণ পদসংখ্যা খুবই সীমিত। ফলে পরিবারের আকাশছোঁয়া আশার পাশাপাশি নিজের ব্যর্থতায় হতাশ হয়ে মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে কখনো তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় অথবা মাদকের হিংস্র জালে আকটে পড়ে। বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পরিবার, সমাজ এমনকি দেশের ক্ষতি করতেও দ্বিধা করে না। তরুণ জনবলের এরূপ অবস্থান দেশের জন্য বড়ই উদ্বেগের বিষয়। বর্তমান আমাদের দেশে চলমান সামাজিক অস্থিরতার অনেকাংশের স্রষ্টা এই তরুণ জনবল। চুরি, ডাকাতি, হানাহানি, মারামারি, ধর্ষণ, হত্যা সব ক্ষেত্রেই তাদের পদচারণা। কিন্তু তরুণদের কাছ থেকে দেশ কখনোই এমন আশা করে না। কারণ তারাই রাষ্ট্রের প্রাণ, রাষ্ট্রের বড় সম্পদ। একজন তরুণ পারে রাষ্ট্রকে বিশ্বের দরবারে সম্মানিত করতে। তরুণদের জয়জয়কারই রাষ্ট্রের একমাত্র চাওয়া। তাই তরুণ জনবলকে কাজে লাগাতে রাষ্ট্রের যেমন দায়িত্ব রয়েছে তেমনি পারিবারিক ও ব্যক্তিগতভাবে আমাদের উপরও দায়িত্ব বর্তায়। রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে একটি হলো শিক্ষা ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন আনা। শিক্ষার্থীদের জীবনমুখী শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া। কেননা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হলে তারা আউটসোর্সিংসহ বিভিন্ন বৈদেশিক কর্মসংস্থানে কাজ করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সক্ষম হবে। যেটা ইতোমধ্যে কিছুটা হলেও সম্প্রসারিত হয়েছে, তবে আশানুরূপ নয়। জীবনমুখী শিক্ষার মাধ্যমে তাদের স্বনির্ভর হওয়ার দিক্ষা দেয়াও প্রয়োজন। যেন অন্যের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেই উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে এবং অন্যকে সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে দেশের কল্যাণ সাধন করতে পারে। রাষ্ট্র কর্তৃক তরুণ জনবলদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে তারা হয়ে উঠবে দেশের সম্পদ ও সম্মান। তার জন্য প্রয়োজন সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ ও পর্যাপ্ত গবেষণা। একজন নাগরিককে সুনাগরিকে পরিণত করতে দেশের পাশাপাশি পারিবারিক দায়িত্বই বেশি। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পরিবারকে সুনাগরিক তৈরির কারখানায় বলা হয়। কেননা সন্তান জন্ম নেয়ার পর পরিবারের পরিবেশ ও সংস্কৃতি থেকে সে সর্বপ্রথম শিক্ষা লাভ করে। পরিবার থেকে পাওয়া শিক্ষা ও দৃষ্টিভঙ্গি অনেক সময় তার স্বভাব ও কর্মকান্ডে প্রভাব ফেলে। সুতরাং পরিবারকে অস্বীকার না করে, প্রতিটি পরিবারকে হতে হবে সহনশীল ও বিবেকবান। যাতে পরিবারের শিক্ষিত সদস্য তার লক্ষ্য, পছন্দ ও দেশের কল্যাণে কাজ করতে পারে সে সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ না করে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার অনুপ্রেরণা প্রদান পরিবারের প্রধান দায়িত্বও বটে। দেশকে এগিয়ে নিতে পরিবারের পরোক্ষ ভূমিকার পাশাপাশি শিক্ষিত তরুণদের মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। নিজেকে কখনো ছোট্ট না ভেবে জীবনমুখী শিক্ষা নিয়ে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। সরকারের দায়িত্বের ওপর দোষারোপ না করে আত্মকেন্দ্রিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। দেশের বোঝাতে পরিণত না হয়ে নিজেকে দেশের মূল্যবান জনসম্পদে পরিণত করতে হবে। সর্বদা দেশের মঙ্গলে নিমিত্তে নিবেদিত প্রাণ হতে হবে। তরুণদেরই প্রমাণ করতে হবে তারা দেশের অভিশাপ নয় বরং তারা দেশের অস্তিত্ব, সম্মান ও সম্পদ। আল-মাহমুদ শিক্ষার্থী, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ