দূষিত বায়ুর শহর ঢাকা

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হোক

প্রকাশ | ২৩ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বের বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজু্যয়ালের প্রতিবেদনে বিশ্বের দূষিত বায়ুর দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের যে অবস্থানের কথা বলা হয়েছে, তা সত্যিই উদ্বেগজনক। সংস্থাটি বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় শীর্ষ স্থানটি ছয়টি শহরের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। কোনো দিন বা সময়ে ঢাকা, আবার কখনো দিলিস্ন। করাচি, কলকাতা ও লাহোরও পিছিয়ে নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না, বৈশ্বিক নানান পর্যবেক্ষণে আমাদের দেশের সাফল্য উঠে এলে আমরা আশাবাদী হই, আবার নেতিবাচক ঘটনা জানলে বেদনাও জাগে। এর আগে জানা গেছে, বায়ুদূষণের ঝুঁকিতে বিশ্বের পাঁচটি দেশের মধ্যে একটি বাংলাদেশ। বায়ুদূষণজনিত কারণে মৃতু্যর সংখ্যার দিক থেকেও বাংলাদেশ পঞ্চম। ২০১৭ সালে দেশে বায়ুদূষণের কারণে মারা গেছে ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ। আতঙ্কের বিষয় হলো- এর কারণে শিশু ও গর্ভবতী নারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। এ তথ্য সামগ্রিকভাবে জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত আতঙ্কের বলেই প্রতীয়মান হয়। শুক্রবার গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ইটভাটা, অবকাঠামো নির্মাণ, যানবাহন ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া ও ধুলার কারণে ঢাকায় দূষণের মাত্রা অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। বলাই বাহুল্য, ঢাকা শহরের বায়ুর মান এক মাস ধরেই অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে। তবে তা সময়ে সময়ে বদলাচ্ছে। কখনো অস্বাস্থ্যকর, কখনো বা খুবই অস্বাস্থ্যকর, আবার কখনো মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে রাজধানীর বায়ু। তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে শহরের বাতাসে ভাসমান ভারী বস্তুকণা পিএম ২.৫ ও পিএম ১০-এর পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিকে অত্যন্ত ভয়াবহ আখ্যা দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বায়ুদূষণের কারণে হৃদরোগ, শ্বাসকষ্টজনিত জটিল সমস্যা, ফুসফুসে সংক্রমণ ও ক্যান্সারের মতো রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্বের যেসব শহরে বায়ুদূষণ কমছে, সেখানে কঠোর আইন করার কারণেই তা সম্ভব হয়েছে। সেখানে আইন বাস্তবায়নে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় আনা হয়েছে। অথচ আমাদের দেশে এখনো বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইনটাই হয়নি। বিশ্লেষকরা আরও মনে করেন, ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ শহরের বায়ুদূষণের উৎসগুলো সবারই জানা। ফলে স্বল্পমেয়াদি উদ্যোগেই তা দূর করা সম্ভব। এটা অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, শীতকালে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নির্মাণকাজের জন্য ধুলা বেড়ে যায়। এ বছর মেট্রো রেলের মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় প্রচুর ধুলা বের হচ্ছে। কিন্তু এসব নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই। তাহলে বায়ুদূষণ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে- বিশেষজ্ঞদের এ প্রশ্ন অমূলক মনে হয় না। পরিবেশ অধিদপ্তরের বাতাসের মান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ১৯৭ দিন রাজধানীবাসী দূষিত বাতাসে ডুবে ছিল। আগের বছরগুলোতে রাজধানীর বাতাস বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১২০ থেকে ১৬০ দিন দূষিত থাকত। অর্থাৎ ঢাকার বায়ুদূষণ সময়ের বিবেচনায়ও বিপজ্জনক হারে বাড়ছে। আর বায়ুদূষণের কারণে দেশের মানুষের মধ্যে রোগবালাই বাড়ছে। বিশেষ করে গরিব পরিবারগুলো এবং শিশু ও বৃদ্ধরা এসব বায়ুদূষণের সবচেয়ে বড় শিকারে পরিণত হচ্ছে, যা দেশে ক্রমেই বায়ুদূষণজনিত একটি মানবিক বিপর্যয় তৈরি করছে। সুতরাং আমরা মনে করি, ভয়াবহ এ পরিস্থিতি থেকে রাজধানীবাসীকে মুক্ত করতে আশু উদ্যোগ নেয়া অপরিহার্য। বাস্তবতা হলো, সরকারি সংস্থাগুলোকে এখনো বায়ুদূষণ রোধে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য নিয়ে মানুষের আশঙ্কা বহুলাংশে বেড়ে যাচ্ছে। আমরা বলতে চাই, বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই। এ ব্যাপারে যত দ্রম্নত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে তা ততই জনস্বাস্থ্যের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। সরকার তথা সংশ্লিষ্টরা দ্রম্নততার সঙ্গে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।