২.৫৫ কিলোমিটার দৃশ্যমান পদ্মা সেতু

যথাসময়ে কাজ শেষ করতে হবে

প্রকাশ | ২৮ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
পদ্মা সেতু আর স্বপ্নে আটকে নেই। এর নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ২২ ও ২৩ নম্বর পিলারে স্থায়ীভাবে ১৭তম স্প্যান '৪-ডি' বসানোর মাধ্যমে দৃশ্যমান হয়েছে ২ হাজার ৫৫০ মিটার (২.৫৫ কিলোমিটার)। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার যে, ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল থেকে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার এ স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে- আর ২৪টি স্প্যান বসিয়ে ৩.৬ কিলোমিটার দৃশ্যমান হলো। উলেস্নখ্য, ১৬তম স্প্যান বসানোর মাত্র সাতদিনের মাথায় বসেছে এ স্প্যানটি। মঙ্গলবার দুপুর ২টা ১৫ মিনিটের দিকে স্প্যান বসানো শেষ হয়। যখন এমনটি জানা যাচ্ছে যে, কাজের গতিকে স্বাভাবিক রাখতে, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে চেষ্টার কমতি নেই দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের- তখন তা ইতিবাচক বলেই প্রতীয়মান হয়। আমরা চাই যথাযথ সময়ের মধ্যই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হোক। তথ্য মতে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে শরীয়তপুরের জাজিরাপ্রান্তে ধূসর রঙের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটিকে তিন হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার 'তিয়ান ই' ভাসমান ক্রেন বহন করে এনে ২২ ও ২৩ নম্বর পিলারের ওপর বসিয়ে দেয়। এর আগে সকাল ১০টায় স্প্যানবহনকারী ভাসমান ক্রেনটি রওনা করে ১০টা ৩৭ মিনিটে নির্ধারিত পিলারের সামনে এসে পৌঁছায়। প্রকৌশল সূত্র বলছে, নোঙর সমস্যার কারণে স্প্যানটি বসাতে একটু সময় লাগে। কুয়াশার কারণে নির্দিষ্ট সিডিউলের কিছুটা পরেই কাজ শুরু করেন প্রকৌশলীরা। এ ছাড়া নোঙর করে পজিশনিং করে ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে স্প্যানটিকে তোলা হয় পিলারের উচ্চতায়। রাখা হয় দুই পিলারের বেয়ারিংয়ের উপর। স্প্যান বসানোর জন্য উপযোগী সময় থাকায় এবং সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সফলভাবে হওয়ায় প্রকৌশলীরা অল্প সময়ের মধ্যেই স্প্যান বসাতে সক্ষম হন। আমরা মনে করি, যেভাবে এগিয়ে চলেছে পদ্মা সেতুর কাজ, তাতে করে সূচনা হতে চলেছে নতুন সম্ভাবনার দ্বার। ফলে এখন সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে সেতুর কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হবে এমনটি কাম্য। প্রসঙ্গত বলা দরকার যে, এই সেতু বাস্তবায়িত হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ বিশেষভাবে উপকৃত হবে। একইসঙ্গে এটাও বলা দরকার, পরোক্ষভাবে সারাদেশের মানুষই উপকৃত হবে। এ ছাড়া পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হলে ফরিদপুর, শরীয়তপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী অঞ্চলে নতুন করে শিল্পায়ন হবে। ইতোমধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়, বিশেষ করে মহাসড়কের পাশে বিভিন্ন রকম শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগও লক্ষ্য করা গেছে, এমনটিও পত্রপত্রিকায় উঠে এসেছে। পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হওয়ার মধ্য দিয়ে তা দেশের জিডিপিতে অবদান রাখবে এটিও আলোচনায় এসেছে। সঙ্গত কারণেই যথাসময়ে এই সেতুর কাজ শেষ হবে এটি বহুল প্রত্যাশিত। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে। কিন্তু এ সেতু নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগ এবং প্রাকযোগ্যতা যাচাই নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক প্রকল্পটিতে অর্থায়ন স্থগিত করে। এরপর এমন আশঙ্কা সামনে এসেছিল, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। কিন্তু সব আশঙ্কা অমূলক প্রমাণ করে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। আমরা মনে করি, নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সামলে নিজেদের চেষ্টায় সেতু দৃশ্যমান হচ্ছে- এই বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক। যথা সময়ে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হোক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।