বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর বিশ্বস্বীকৃতি

বাঙালি জাতির জন্য অহঙ্কারের

প্রকাশ | ২৯ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বের ১৯৫টি দেশে পালিত হতে যাচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। সরকার আগামী বছরের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত সময়কে 'মুজিববর্ষ' ঘোষণা করে ব্যাপক পরিসরে উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে মুজিববর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেসকো। সোমবার ইউনেসকোর সদর দপ্তরে সংস্থার ৪০তম সাধারণ পরিষদের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে সর্বসম্মতভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে মুজিববর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। ফলে বছরব্যাপী নানা আয়োজনে মুজিববর্ষ উদযাপিত হবে বিশ্বের ১৯৫টি দেশে। আর ইউনেসকো এই আয়োজনে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে বিশ্বনেতা বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন আরও ব্যাপক পরিসরে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হলো। বাঙালি জাতির জন্য এ আয়োজন অত্যন্ত গৌরবের। তথ্য অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার গণভবনে ইউনেসকোর সঙ্গে মুজিববর্ষ একযোগে পালনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার সাহায্যে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার পর প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দেন। পরিকল্পনা মোতাবেক, আগামী বছরের ১৭ মার্চ বিকাল ৪টায় জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। এ আয়োজনে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের ফ্লাইপাস্ট, ১০০ শিল্পীর অংশগ্রহণে যন্ত্রসংগীত, বাংলা এবং ইংরেজিতে থিম সং পরিবেশন, ৫৫ মিনিটের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং লেজার শো থাকবে। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর বড় কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ছোট কন্যা শেখ রেহানার হাতে 'শ্রদ্ধা স্মারক' তুলে দেওয়া হবে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন। পাশাপাশি কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন। বলাই বাহুল্য, বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীনতা। আর এই স্বাধীনতা এসেছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। 'স্বাধীনতা' বাঙালির জাতির আনন্দ-বেদনার মহাকাব্য রচনা করেছে। স্বাধীনতা অর্জন করতে গিয়ে একাত্তরে বাঙালি জাতিকে বিসর্জন দিতে হয়েছে অনেককিছু। লাখো মা-বোনের সম্ভ্রম এবং অজস্র রক্তপাতের মধ্যদিয়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা। এ ছাড়া মাত্র নয় মাসে স্বাধীনতা অর্জনও বিশ্বের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। বাঙালি জাতি গর্বিত যে, এই দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো একজন অকুতোভয়, ইতিহাস সৃষ্টিকারী, দূরদর্শী নেতার জন্ম হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শুধু স্বাধীনতা এসেছে এমন নয়- তিনি সদ্য স্বাধীন দেশে দ্রম্নততম সময়ে সংবিধান রচনার পাশাপাশি গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। সারাজীবন শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির মাধ্যমে জনগণের কল্যাণে কাজ করেছেন, যা সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগও ইউনেসকোর মূল প্রতিপাদ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বলেছিলেন, 'শিক্ষাই সর্বশ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ।' যা এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। এর আগে ইউনেসকোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ক্যাটাগরিতে স্থান পায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে প্যারিসে ২০৬তম ইউনেসকোর নির্বাহী বোর্ডসভায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ইউনেসকোর সঙ্গে যৌথভাবে উদযাপনের প্রস্তাব সভার ৪০তম অধিবেশনে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়। প্রস্তাবে দুই সদস্য রাষ্ট্রের লিখিত সমর্থনের প্রয়োজনে ভারত, জাপান, কিউবা, নেপাল ও পোল্যান্ড লিখিত সমর্থন দেয়। ইউনেসকোর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর এই সমর্থনও যৌক্তিক। কেননা, বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালি জাতির নেতা নন, বিশ্বের নামি নেতাদেরও একজন। ফলে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত এই বিশ্বনেতার জন্মশতবার্ষিকী বিশ্বজুড়ে একযোগে নানান আয়োজনের মধ্যদিয়ে পালিত হবে, এ তথ্য আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের এবং আনন্দের এক বার্তা। এভাবেই বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন, চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আমরা এ আয়োজনের সার্বিক সফলতা প্রত্যাশা করছি।