সন্ত্রাসবাদ সূচকে ছয় ধাপ অগ্রগতি

এ ধারা অব্যাহত থাক

প্রকাশ | ৩০ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অগ্রগতি সবচেয়ে বেশি। সম্প্রতি এ তথ্য প্রকাশ করেছে, সিডনিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস (আইইপি)। সংস্থাটির বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচক-২০১৯ অনুযায়ী, ২০১৮ সালের চেয়ে এ বছর ছয় ধাপ এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। আর ২০১৭ সালে এই অগ্রগতি ছিল চার ধাপ। অর্থাৎ সন্ত্রাসবাদ দমনে ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বিশ্বের নানান দেশ জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকিতে আক্রান্ত। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সন্ত্রাসবাদ দমনে সোচ্চার হয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ছয় ধাপ অগ্রগতি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। আর এ ঘটনাটিকে সরকারের অন্যতম একটি সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করা যায়। বলাই বাহুল্য- স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান আইইপি মানুষের ভালো থাকা ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে ইতিবাচক ও অর্জনযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার পক্ষে কাজ করে। ফলে সংস্থাটির এই প্রতিবেদন আমাদের দেশের জন্য ইতিবাচক। তথ্য মতে, এ বছর ২৩টি গুণগত ও পরিমাণগত নির্দেশকের ভিত্তিতে বিশ্বের ১৬৩টি দেশের সন্ত্রাসবাদ পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি হয়েছে এই সূচক। এসব দেশের জনসংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৯৯ দশমিক ৭ শতাংশ বলে প্রতিবেদনে উলেস্নখ করেছে সংস্থাটি। বিশ্লেষকরা এসব দেশকে শূন্য থেকে ১০ স্কোরের মধ্যে তালিকাবদ্ধ করেছেন। ৮-এর বেশি থেকে ১০ স্কোর পর্যন্ত পাওয়া দেশগুলোয় সন্ত্রাসবাদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি; আর ৬-এর বেশি থেকে ৮-এর মধ্যে থাকা দেশগুলো সন্ত্রাসবাদের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ৪-এর বেশি থেকে ৬-এর মধ্যে স্কোর রয়েছে যে সব দেশের, সেগুলোয় মাঝারি মাত্রার সন্ত্রাসবাদ রয়েছে। ২-এর বেশি থেকে ৪ পর্যন্ত স্কোর পাওয়া দেশগুলোয় সন্ত্রাসবাদের উপস্থিতি কম। শূন্যর বেশি থেকে ২ পর্যন্ত স্কোর পাওয়া দেশগুলোয় সন্ত্রাসবাদ খুবই কম পর্যায়ে রয়েছে। এই পর্যালোচনায় ৫ দশমিক ২০৮ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ ১৬৩টি দেশের মধ্যে ৩১তম অবস্থানে রয়েছে। এতে স্পষ্ট যে, ছয় ধাপ অগ্রগতি হলেও বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদের মাঝারি মাত্রার বলয়ে আছে। ফলে ধারাবাহিকভাবে আমাদের অগ্রগতি হলেও এতে আত্মতৃপ্তিতে ভোগার সুযোগ খুবই কম। অস্বীকার করা যাবে না যে, এখনো আমাদের দেশে নানানভাবে জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা তাদের কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছে। বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে জঙ্গি আটকের ঘটনাগুলো এই জলন্ত দৃষ্টান্ত। একই সঙ্গে এটাও স্বীকার করতে হবে, সরকার তথা প্রশাসনের কঠোরতার কারণেই জঙ্গিরা মাথা উঁচু করতে পারছে না। আবার, সুযোগ পেলে এরা যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে না এমন নিশ্চয়তাও দেয়া যায় না। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকার তথা প্রশাসনের জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের কারণেই দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদ কমেছে। আইইপির প্রতিবেদনে তালেবানকে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরপরই রয়েছে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। আইএসের খোরাসান শাখা ও বোকো হারাম রয়েছে শীর্ষ চার প্রাণঘাতী জঙ্গি সংগঠনের মধ্যে যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে। আমরা বলতে চাই, যেহেতু প্রতিবেদন অনুযায়ী আমাদের দেশ এখনো ঝুঁকির মাঝারি বলয়ে অবস্থান করছে সেহেতু বিষয়টিকে কিছুতেই হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। জানা যাচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ায় সাত দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। এমনকি নেপালও এগিয়ে রয়েছে আমাদের থেকে। এই অঞ্চলে আফগানিস্তান বাদে বাকি ছয় দেশ গত বছর সন্ত্রাসবাদ পরিস্থিতিতে উন্নতি করেছে। এই ছয় দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি বাংলাদেশের। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ৩১টি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারায় সাতজন, যা আগের বছরের তুলনায় ৭০ শতাংশ কম। ২০১৭ সালে আইএসসহ যে আটটি সংগঠন সক্রিয় ছিল, সেগুলোর মধ্যে পাঁচটিই ২০১৮ সালে এসে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। এ বিষয়টি আশাবাদের। আমরা প্রত্যাশা করব, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকার তথা প্রশাসনের এই কঠোরতা অব্যাহত থাকবে। এই দেশ ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য বসবাস উপযোগী করতে হলে সন্ত্রাসবাদ শক্ত হাতে দমন করার বিকল্প থাকাও উচিত নয়। দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদের মূলোৎপাটন হোক- দেশবাসী এটাই প্রত্যাশা করে।