বেড়েছে যৌন নির্যাতন ও হয়রানি

কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রকাশ | ০১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দিনে দিনে বাড়ছে যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনা। এর ফলে দেশের সচেতন মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। চলতি বছরে যৌন নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে ৭৮ দশমিক ০৭ শতাংশ। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক ছাত্রীকে চলন্ত বাসে যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। তবে নিজের প্রচেষ্টায় বেঁচে গেছেন ওই ছাত্রী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্রী। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত জড়িতদের আটক করতে পারেনি পুলিশ। এর আগে গত ১১ এপ্রিল বিকালে ক্লাস শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাসায় ফেরার পথে নগরের রিয়াজুদ্দিন বাজার এলাকায় চলন্ত বাসে যৌন হয়রানির শিকার হন অর্থনীতি বিভাগের আরেক ছাত্রী। আত্মরক্ষার্থে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী হাতে থাকা মোবাইল দিয়ে হেলপারকে আঘাত করে চলন্ত বাস থেকেই লাফ দেন। পরে এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে নগরীর কোতয়ালি থানায় মামলা করা হয়। অন্য এক খবরে প্রকাশ, রাজশাহীর নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের গেটের সামনে এক কলেজছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করায় সহপাঠী ছাত্রকে মারধর করেছে ছাত্রীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। একাধিক ঘটনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়. সমাজে আগের তুলনায় বেড়েছে যৌন হয়রানি ও নির্যাতন। অন্যান্য অপরাধের তুলনায় যৌন নির্যাতন হয়রানি বা সহিংসতার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি মানবাধিকার কর্মীদের উদ্বিগ্ন করছে। সামাজিক অস্থিরতা ও বিচারহীনতার কারণেই যৌন সহিংসতা নির্যাতন ও হয়রানি বাড়ছে। অপরাধ করে নিষ্কৃতি পাওয়ার একটি সংস্কৃতি দেশে চালু রয়েছে। যদিও সরকার এ ব্যাপারে বেশ কঠোর। এর পাশাপাশি সামাজিক অবক্ষয়ও একটা কারণ। মনে রাখতে হবে সমাজে নারীর অগ্রগতি হয়েছে এটা যেমন সত্য- একইভাবে সত্য পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির এখনো পরিবর্তন হয়নি। যার কারণে নারী ঘরে-বাইরে নির্যাতিত হচ্ছে। সমাজ পরিবর্তন মানে সামাজিক কাঠামো ও সমাজের মানুষের কার্যাবলি ও আচরণের পরিবর্তন। তাদের মানসিকতার পরিবর্তন। বিশৃঙ্খল অপরাধপ্রবণ অবক্ষয়গ্রস্ত সমাজে বসবাস করে উন্নত রুচি ও সংস্কৃতির অধিকারী হওয়া যায় না। এমন সমাজে হত্যা, সন্ত্রাস যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনা বন্ধ করা সহজ কাজ নয়। আমরা চাই, পরিকল্পিত ও বিন্যস্ত সমাজ। নীতিবোধ ও চারিত্রিক মূল্যবোধ সমাজ গঠনের প্রধান শক্তি, যা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। কোনোভাবেই আমাদের সমাজ যেন আলোর দিকে অগ্রসর হতে পারছে না। কূপমন্ডূকতা যেমন আমাদের সমাজকে দিন দিন গ্রাস করছে, তেমনি নারীর ক্ষেত্রেও যেন সমাজ দিন দিন আরও নিষ্ঠুর হয়ে উঠছে। নিষ্ঠুরতার বলি হচ্ছে নারী। কোনোভাবেই তা রোধ করা যাচ্ছে না। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও নারীরা নির্যাতন হয়রানি ও ধর্ষণের শিকার হতে থাকবে- এটা যেখানে সমর্থনযোগ্য নয়, সেখানে দেখা যাচ্ছে শুধু মফস্বল বা গ্রামে নয়, রাজধানী ঢাকাতেই নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের হার ৭০ শতাংশ বেড়েছে। এ বিষয়টি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক এবং সার্বিক অর্থেই আশঙ্কারও বটে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের ভয়াবহ চিত্র ভয়ঙ্করভাবে উদ্বেগজনক। মানুষ অতিমাত্রায় প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় যান্ত্রিক হয়ে গেছে। ফলে মানবিক মূল্যবোধ লোপ পেয়েছে। অন্যায়টাকেই তারা স্বাভাবিক মনে করছে। সামাজিক সুস্থতা আনয়নের পাশাপাশি নতুন সমাজ নির্মাণের জন্য এ ধরনের অবক্ষয়কে প্রতিরোধ করতে হবে এবং যে কোনো মূল্যে। এ জন্য ব্যাপকভাবে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন এবং এর কোনো বিকল্প নেই।