কপ-২৫ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য

সময়োপযোগী ও তাৎপর্যপূর্ণ

প্রকাশ | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, 'আমরা যদি আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হই, তাহলে তারা ক্ষমা করবে না।' স্পেনের ফেরিয়া দ্যা মাদ্রিদে (আইএফইএমএ) 'অ্যাকশন ফর সারভাইভাল: ভালনারেবল নেশনস কপ-২৫ লিডার্স সামিট'-এর উদ্বোধনী বক্তব্যে সোমবার তিনি এ কথা বলেন। তিনি উদ্বেগের সঙ্গে বলেন, প্রতি মুহূর্তে আমাদের নিষ্ক্রিয়তা পৃথিবীর প্রতিটি জীবিত মানুষকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।' বলার অপেক্ষা রাখে না, পরিবর্তিত জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হচ্ছে বিশ্বের মানুষ। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবস্থা সবচেয়ে করুণ। 'জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বের জন্য একটি কঠিন বাস্তবতা'- উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, এটি এখন মানুষের জীবন ও পরিবেশ, বাস্তুশাস্ত্র এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতি করেছে। আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর এই উপলব্ধি অত্যন্ত বাস্তবসম্মত। তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হিসেবে অতিমাত্রায় কার্বণ নিঃসরণকে দায়ী করা হলেও বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এখনো কার্বণ নিঃসরণ হ্রাসে কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। কপ-২৫ সম্মেলনে উত্থাপিত তথ্য থেকেও বিষয়টি স্পষ্ট। জানা যায়, ১৯৯২ সালে আর্থ সামিটের পর থেকে গ্রিন হাউস গ্যাস হ্রাসে খুব বেশি অগ্রগতি অর্জিত হয়নি। এর নির্গমণ এখনো বেড়ে চলেছে। এই প্রবণতা পৃথিবীকে ক্রমেই অস্থিতিশীল করে তুলেছে। আর এ পরিস্থিতি যে অত্যন্ত আতঙ্কজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে তা বলাই বাহুল্য। বাস্তবতা হলো, গ্রিন হাউস ইফেক্টের কারণে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর পক্ষে এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সহজ নয়। নির্দিষ্ট ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের মতো দেশগুলো। এটি 'অবিচার' আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন 'অবশ্যই বিশ্ব সম্প্রদায়কে বিষয়টি স্বীকার করতে হবে।' সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ২০০৯ সালে মালেতে ফোরামের প্রথম সভার পর বৈশ্বিক জলবায়ু দৃশ্যপটের যথেষ্ট পরিবর্তন হয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে এ ক্ষেত্রে ইউএনএফসিসিসির প্রক্রিয়ার অগ্রগতি খুব ধীর এবং অপর্যাপ্ত। বিশেষত আমাদের মতো দুর্বল দেশগুলোতে জাতীয়ভাবে গ্রহণ করা অভিযোজনমূলক উদ্যোগে সহায়তা করার জন্য খুব কমই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, 'বিভিন্ন উদ্দেশ্যে গঠন করা তহবিলগুলোতে পর্যাপ্ত মূলধনের অভাব রয়েছে। সরাসরি এবং সহজে তহবিল পাওয়ার জন্য যেসব শর্ত এবং মানদন্ড রয়েছে, বেশির ভাগই সে সব সক্ষম দেশগুলোর পক্ষেই যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বেশি দায়ী দেশগুলোর ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে চরম উদাসীনতার কথাও তিনি বক্তব্যে তুলে ধরেন। এ ছাড়া এই উদাসীনতার জবাব চাইতে আমাদের দ্বিধা করা উচিত নয়- বলেও তিনি উলেস্নখ করেন। উলেস্নখ করা যেতে পারে, বাংলাদেশই বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ক্ষুদ্র সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও জলবায়ু ঝুঁকি তহবিল গঠন করে ঝুঁকি মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছে। আর এ বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় বক্তব্য যুগান্তকারী বলেই আমরা বিবেচনা করি। তিনি বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি, এর প্রভাব এবং মোকাবিলার সক্ষমতা অভাবের ওপর ভিত্তি করে দুর্বল দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার একটি মানদন্ড নির্ধারণ করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নিয়মিত সমর্থন এবং আলাদাভাবে উন্নয়ন তহবিল রাখতে চাই বলেও তিনি উলেস্নখ করেন। বাংলাদেশে আশ্রিত ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নানাভাবে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। পাশাপাশি একটি নতুন সিভিএফ এবং ভি-২০ ট্রাস্ট তহবিল গঠন এবং জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষ দূত নিয়োগ সম্ভব হলে সেটি বড় সাফল্য হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। স্মর্তব্য যে, ব্যাপক হারে অভিবাসনেও জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে, এটা এখন সর্বজনস্বীকৃত। সংঘাতের চেয়ে আবহাওয়াজনিত দুর্যোগের কারণে এরই মধ্যে অনেক মানুষ স্থানচু্যত হয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং মরুকরণের মতো ধীরগতির প্রভাবের দিকেও বিশ্বের নজর দেয়া উচিত। এ ছাড়া স্থান হারানো মানুষের পুনর্বাসন এবং সুরক্ষা দিতে কার্যকর কর্মকৌশল তৈরির জন্য আলোচনার যে প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তাও অত্যন্ত যৌক্তিক। আমরা এমন যুগোপযোগী বক্তব্য দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানাই। প্রত্যাশা থাকবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের যৌক্তিকতা বিশ্বনেতারা আমলে নেবেন এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। বিশ্বনেতাদের সমন্বিত ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য একটি নির্মল পৃথিবী গড়ে উঠুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।