পোশাক খাত

প্রকাশ | ১৪ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

যথাসময়ে রপ্তানির উদ্যোগ নিন
তৈরি পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে অজির্ত অথর্ বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্বের সিংহভাগই পূরণ করে থাকে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সম্ভাবনাময় এই খাত নানা সমস্যাসঙ্কুল পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে যাচ্ছে- এমন তথ্য প্রায়ই সামনে আসে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পোশাক খাতে অথার্য়নের বড় বাধা হলো বিলম্বে পোশাক রপ্তানি। গ্রাহকদের ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য সেবার মান বাড়লেও পুরোপুরি কমপ্ল্যায়েন্স মানার বিষয়টি বিশ্বব্যাপী উদ্বিগ্নের বিষয় হয়ে দঁাড়িয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তৈরি পোশাক খাতের ওপর। এ ছাড়া তৈরি পোশাক খাতের বিভিন্ন ঝুঁকি সম্পকের্ও বিআইবিএমের গবেষণা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটরিয়ামে রোববার অনুষ্ঠিত ‘ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনস ইন আরএমজি বাই ব্যাংকস : রিস্কস অ্যান্ড মিটিগেশন টেকনিকস’ শীষর্ক কমর্শালায় উঠে এসেছে এসব তথ্য। তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে দীঘর্সূত্রতার বিষয়টি বহুল আলোচিত। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ কারণে তৈরি পোশাক খাতে কাক্সিক্ষত অথার্য়ন হচ্ছে না। পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে ব্যাংকিং কাযর্ক্রমে গতিশীলতা আনয়নও জরুরি একটি বিষয়। এ ছাড়া ব্যাংক খাতের রপ্তানিকেন্দ্রিক জালিয়াতির বিষয়টিও নতুন নয়। কমর্শালায় বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিজিএমইএর মতো বিআইবিএমকেরও নতুন কোসর্ চালুর সুযোগ রয়েছে। যা বৈদেশিক বাণিজ্যে জালিয়াতি কমাতে গুরুত্বপূণর্ ভূমিকা রাখবে। তারা মনে করেন, পোশাক খাতের রপ্তানি সংক্রান্ত প্রক্রিয়া পুরোপুরি অটোমেশন হলে দীঘর্ মেয়াদি সুফল পাওয়া যাবে। এ জন্য তারা ব্যাংকিং কাযর্ক্রমে আন্তজাির্তক বাণিজ্য সেবা দক্ষতা অজর্ন এবং কমপ্ল্যায়েন্স পুরোপুরি পরিপালনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। বিশেষজ্ঞরা যখন তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বিলম্বের কারণ চিহ্নিত করে তার প্রতিকার সম্পকের্ পরামশর্ দিয়েছেন, তখন বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের আমলে নেয়ার প্রয়োজন আছে বলেই আমরা বিবেচনা করি। তথ্য মতে, কমর্শালায় বৈদেশিক বাণিজ্যে ঝুঁকি কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে নীতিগত সহায়তা প্রদানের বিষয়টিও উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞ মতে, পোশাক রপ্তানিতে ব্যাংকের সবচেয়ে বড় ঝুঁকির জায়গা সাব-কনট্রাক্ট। ফলে ব্যাংক কমর্কতাের্দরও কতর্ব্য হওয়া দরকার সাব-কনট্রাক্টের বিষয়ে সতকর্ থাকা। অন্যদিকে ঋণের নামে দেশ থেকে অথর্ পাচারের বিষয়টিও সামনে এসেছে। এসব অনিয়ম রোধে আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে সাবির্ক বিষয়ে ব্যাংকের কড়া নজরদারি থাকতে হবে। বৈদেশিক বাণিজ্য ঝুঁকিমুক্ত রাখতে হলে যথাযথ প্রশিক্ষণেরও বিকল্প থাকতে পারে না। পাশাপাশি পোশাক রপ্তানিকারকদেরও নিজস্ব দক্ষ জনবল গড়ে তোলা অপরিহাযর্ বলে আলোচনায় উঠে এসেছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের আরও উদ্যোগী হওয়ার প্রয়োজন অস্বীকার করা যায় না। তথ্য অনুযায়ী, ৬৫ শতাংশ পোশাক নিদির্ষ্ট সময়ে রপ্তানি সম্ভব হয় না। এর জন্য পোশাক খাতের দক্ষ শ্রমিকের অভাব অন্যতম প্রতিবন্ধক। এ ছাড়া দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, পরিবহন সংকটসহ নানা কারণই চিহ্নিত করা হয়েছে। পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করেন, এ খাতের বাণিজ্য অনেকটা বিশ্বাসের ওপর নিভর্রশীল। নিয়ম-কানুনের মধ্যে থেকে অনেক সময় সব কিছু করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬৬% ব্যাংকারের ধারণা পোশাক খাতের অথার্য়নে বড় বাধা বিলম্ব রপ্তানি। আবার রপ্তানিকারকরা সঠিক কাগজপত্র উপস্থাপন না করার কারণে অথার্য়নে জটিলতা তৈরি হয় বলে মনে করেন ৫৩ শতাংশ ব্যাংকার। আমরা মনে করি, এই তথ্য পোশাক খাতের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করে তা প্রতিকারের উদ্যোগ নেয়া অপরিহাযর্। সবোর্পরি বলতে চাই, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অথর্বছরের প্রথম ৮ মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ৮.৬৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সুতরাং রাজস্ব জোগানের অন্যতম এই খাত নিয়ে হেলাফেলার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে হঁাটছে। এর আগে ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ’ শীষর্ক সেমিনারে জানা গিয়েছিল, সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৭ সাল পযর্ন্ত বাংলাদেশ ইইউতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। এরপর শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে মানবাধিকার, শ্রম অধিকার, পরিবেশ এবং সুশাসন বিষয়ে ২৭টি কনভেনশন বাস্তবায়ন করতে হবে, যা আন্তজাির্তক পযের্বক্ষকের মাধ্যমে পরীক্ষিত হতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, পোশাক খাতের সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার ও খাত সংশ্লিষ্টরা যথাযথ উদ্যোগ নিশ্চিত করবে।