পেঁয়াজ ও চালের উচ্চমূল্য

কখনো চিনির মূল্য, কখনো আদা-রসুনের মূল্য, কখনো বা ধান-চালের মূল্য ইত্যাদি যেন যোগসাজশে পালাক্রমে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন। এসব অস্বাভাবিক ঘটনার নানা কারণ থাকে। যেমন ঘোলা পানিতে রাজনৈতিক মাছ শিকার করা কিংবা কাদা ছোড়াছুড়ি অথবা বেকায়কায় ফেলে পকেট লুটে নেওয়া। সে জন্য দেখা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে যখন পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে একটি সমস্যা চলমান রয়েছে ঠিক সেই সময়ই লবণের সংকটের কথা ছড়িয়ে দেয়া হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পাশাপাশি চালের মূল্য নিয়েও গুজব ছড়াতে থাকে এক শ্রেণির অসুস্থমানসিকতার লোকজন।

প্রকাশ | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

ড. মো. হুমায়ুন কবীর
কোনো কোনো পণ্যের মূল্য মাঝেমধ্যে এমন লাগামছাড়া হয়ে পড়ে- যার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না অনেক সময়। যেমন সাম্প্রতিক সময়ে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে দেশে যা চলছে তা কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। কেজিপ্রতি ২০০, ২৫০ টাকা এমনকি কোথাও কোথাও তারও বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেছে। অথচ উৎপাদন মৌসুমে এ পণ্যটির মূল্য থাকে সময় ভেদে ১০, ২০ টাকা। বাঙালি মুসলমানদের জন্য ধর্মীয় দৃষ্টিতে একদিকে পবিত্র রমজান অপরদিকে অনেকের চোখে রসনা বিলাসের মাসে ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে অনেক সময় কোনো কোনো নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটতে দেখা যায়। কিন্তু এ সময়ে এসে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির তেমন যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই। \হকখনো চিনির মূল্য, কখনো আদা-রসুনের মূল্য, কখনো বা ধান-চালের মূল্য ইত্যাদি যেন যোগসাজশে পালাক্রমে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন। এসব অস্বাভাবিক ঘটনার নানা কারণ থাকে। যেমন ঘোলা পানিতে রাজনৈতিক মাছ শিকার করা কিংবা কাদা ছোড়াছুড়ি অথবা বেকায়কায় ফেলে পকেট লুটে নেওয়া। সে জন্য দেখা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে যখন পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে একটি সমস্যা চলমান রয়েছে ঠিক সেই সময়ই লবণের সংকটের কথা ছড়িয়ে দেয়া হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পাশাপাশি চালের মূল্য নিয়েও গুজব ছড়াতে থাকে এক শ্রেণির অসুস্থমানসিকতার লোকজন। \হতবে এসব গুজব খুব অল্পসময়েই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। কারণ পেঁয়াজ একটি জরুরি গুরুত্বপূর্ণ নিত্য ভোগ্যপণ্য হলেও এর কিছু অংশ এখনো আমদানি নির্ভর। সে ক্ষেত্রে আমরা এখনো পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারিনি। এটাও আমাদের মতো কৃষিনির্ভর দেশের জন্য একটি ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের কৃষি আবহাওয়ায় পেঁয়াজ উৎপাদনের সব অনুকূল পরিবেশ থাকার পরও আমদানিনির্ভরতা না কমাতে এমন পরিস্থিতিরি মধ্যে পড়তে হয়েছে। তবে এটি ঠিক যে, এবারে অফ মৌসুমে পেঁয়াজ নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হলো তা আরেক নতুন অভিজ্ঞতার জন্ম দিয়েছে। ভবিষ্যতে এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে হয়তো এমন সমস্যা সহজেই সমাধান সম্ভব হবে। \হপেঁয়াজ না হয় একটি আমদানিনির্ভর পণ্য। কিন্তু ধান-চাল তো এখন আর আমদানি নির্ভর নয়। বরং গত মৌসুমেও ধান-চাল রাখতে না পারার কারণে কৃষক নামেমাত্র মূল্যে ধান-চাল বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে- যার রেশ এখনো কেটে উঠতে পারেনি। তার ওপর মৌসুম শেষ হতে না হতেই আবার চালের বাজার অস্থির হয়ে যাওয়া একবারেই অস্বাভাবিক। এটি নিঃসন্দেহে কারসাজি- যা বন্ধ করতে না পারলে সবাইকেই মূল্য দিতে হবে। কারণ এমনিতে গত বছরের প্রচুর খাদ্য এখনো মজুদ রয়েছে কৃষকের ঘরে এবং সরকারি গুদামে তার ওপর ইতোমধ্যে নতুন ধান কাটা শুরু হয়েছে ব্যাপকভাবে। সেখানে ধান-চালের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কোনো কারণই থাকতে পারে না। \হযেমন ধরা যাক, লবণের মূল্যবৃদ্ধির গুজব সুষ্টি করার কথা। আমরা জানি, লবণ একটি বাণিজ্যিক নিত্যপণ্য হলেও এটি একটি কৃষি পণ্যও। কারণ সমুদ্র উপকূলের জমিতে সমুদ্রের জোয়ার-ভাটার লবণাক্ত পানি ধরে লবণের চাষ করা হয়ে থাকে। জমিতে ধরে রেখে পরে ফ্যাক্টরিতে তা রিফাইন করে বিভিন্ন জাত ও রকমারি পদে গ্রেডিং করা হয়ে থাকে। যেমনটি করা হয় আখ থেকে চিনি, গুড়, চা গাছের পাতা থেকে ম্যানুফ্যাকচারিং করে বাণিজ্যিক নানা গ্রেডিংয়ের চা তৈরি করা হয়ে থাকে। সে জন্য এসব পণ্য একদিকে যেমন বাণিজ্যিক অপরদিকে কৃষিভিত্তিক। কাজেই এগুলোর সঙ্গে সরাসরি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের কৃষক ও মধ্যস্বত্বভোগী ব্যক্তিবর্গ জড়িত থাকে। তাই এগুলোর যে কোনো সুবিধা-অসুবিধা সবধরনের মানুষকে প্রভাবিত করে। \হআশার কথা, সরকার এবং সরকারের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এসব নিয়ে কাজ করছে যার ফলাফল আশাব্যঞ্জক। যেমন পেঁয়াজের বিষয়টি এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসে গেছে। কারণ মুড়ি পেঁয়াজের উৎপাদন ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। অপরদিকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য একক দেশ হিসেবে ভারতের দিকে না তাকিয়ে থেকে বিশ্বের আরো অনেক দেশ থেকে এমনকি বিমানে পেঁয়াজ আনা হয়েছে এবং হচ্ছে। তা ছাড়া নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ধান-চালসহ অন্যান্য কারসাজি বন্ধ করা হয়েছে। আর লবণের মূল্যের সঙ্গে মজুদের বিষয়টি নিয়ে গুজবও সরকারি হস্তক্ষেপে আপাতত বন্ধ হয়েছে। সে জন্য এসব বিষয়ে ভবিষ্যতে যাতে অন্য কোনো ষড়যন্ত্রের বীজ বুনতে না পারে সেদিকে সবাইকেই সজাগ থাকা প্রয়োজন। \হ ড. মো. হুমায়ুন কবীর: কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শনফযঁসধুঁহ০৮@মসধরষ.পড়স