বাড়ছে যৌন হয়রানি

উদ্বেগজনক এ প্রবণতা রোধ জরুরি

প্রকাশ | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আমাদের দেশে ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সের মধ্যেই যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রায় ৬০ শতাংশ কিশোরী। অন্যদিকে প্রায় ৯৮ শতাংশ নারী ও কন্যাশিশু জনসম্মুখে একাধিকবার যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। নারী নিগ্রহের উদ্বেগজনক এ তথ্য উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম আয়োজিত 'যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সমন্বিত আইন এখন সময়ের দাবি' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, যত দিন যাচ্ছে ততই আমাদের দেশে কন্যাশিশু, ছেলেশিশু ও প্রতিবন্ধী নারীসহ সব বয়সের নারী নির্যাতনের মাত্রা বাড়ছে। নির্যাতনের ধরন ও মাত্রা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। গণমাধ্যমগুলোর খবর এবং বিভিন্ন সংস্থার জরিপ কিংবা গবেষণা প্রতিবেদনের দিকে তাকালে বিষয়টি স্পষ্ট হতে পারে। একটি দেশের অবস্থা যে ভবিষ্যতের জন্য এক ধরনের অশনিসংকেত তা বলাই বাহুল্য। তথ্য অনুযায়ী, গবেষণা প্রতিনিধি দলের কাছে দেশের ৫৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ নারী জানিয়েছেন তারা ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সের মধ্যেই যৌন হয়রানির অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। আর পাবলিক পেস্নসে ৯৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ নারী বিভিন্নভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। গবেষণায় ১২ থেকে ৩৫ বছর বয়সি ৩৯২ জন নারী অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ নারী ছয় বছর বয়সের আগেই এবং ১৫ দশমিক ২৬ শতাংশ নারী ১০ বছরের আগেই জীবনে প্রথম যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। এদের মধ্যে ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ নারী নিকটাত্মীয় মাধ্যমে, ২৬ দশমিক ১৭ শতাংশ পরিচিত ব্যক্তি এবং ৬৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ নারী অপরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। নারী নির্যাতনের এ চিত্র একটি দেশের জন্য লজ্জার বৈ অন্য কিছু হতে পারে না। তা ছাড়া কোনো সভ্য দেশে এহেন অবস্থা কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। আমরা লক্ষ্য করেছি, প্রায় প্রতিনিয়তই গণমাধ্যমে যৌন নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হয়ে আসছে। কন্যাশিশু ধর্ষণ ও হত্যা, ছেলেশিশু বলাৎকার, নারী ধর্ষণ এবং ধর্ষণ শেষে হত্যার মতো ঘটনাও দিন দিন বাড়ছে। অথচ, নারীর ওপর সহিংসতা ও নির্যাতন রোধে আমাদের আইন রয়েছে। অন্যদিকে ২০০৯ সালে হাইকোর্টের নির্দেশনামূলক নীতিমালায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কর্মস্থলে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়। বাস্তবতা হলো- যৌন হয়রানি পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত। যানবাহনে-জনপরিসরে, এমনকি গৃহের অভ্যন্তরেও যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হাইকোর্টের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে নির্দেশনা বিদ্যমান বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে এখন আর যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি সমন্বিত আইন প্রণয়ন করার দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আমরা জানি, নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছে সরকার। অস্বীকারও করা যাবে না, সমাজে নারীর অবস্থান আগের তুলনায় পিছিয়ে আছে। তাহলে যেখানে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে নারীর প্রতি এই নির্যাতন কেন রোধ করা যাচ্ছে না তা অবশ্যই গবেষণার দাবি রাখে। এটা বিভিন্ন আলোচনায় উঠে এসেছে- ধর্ষণ, যৌন নির্যাতনসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ করার জন্য কঠোর আইনই যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ। পরিতাপের হলেও সত্য যে, ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের খবর যত বেশি পাওয়া যায়, এসব অপরাধের দায়ে অপরাধীদের শাস্তির দৃষ্টান্ত তার চেয়ে অনেক কম। ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংস অপরাধের রাশ টেনে ধরার জন্য প্রথম কর্তব্য এসব অপরাধের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগে গতি সঞ্চার করা। একটার পর একটা ধর্ষণের খবরের সমান্তরালে যদি একটার পর একটা শাস্তির খবরও নিশ্চিত করা যায়, তাহলে ধর্ষণপ্রবণতা হ্রাস পাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। সর্বোপরি বলতে চাই, পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে নারীর সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শুধু আইনের শাসনই যথেষ্ট নয়, সামাজিক শক্তিরও প্রবল সমর্থন প্রয়োজন। এ জন্য সামাজিক শক্তিগুলোকেও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নারী নির্যাতনের প্রতি জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে শুধু সরকারকে নয়, গোটা সমাজকেও। সম্মিলিত প্রচেষ্টা জারি রাখা গেলে সামাজিক এ ব্যাধি থেকে আমরা মুক্ত হতে পারব বলেই প্রত্যাশা করি।