পাতাল রেল নির্মাণের উদ্যোগ

যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হোক

প্রকাশ | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
রাজধানীবাসীর যোগাযোগব্যবস্থা সহজতর করা এবং যানজট নিরসনের লক্ষ্যে সরকার ২৩৮ কিলোমিটার পাতাল রেল (সাবওয়ে বা আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল) নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যে 'ঢাকা শহরে সাবওয়ে (আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো) নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা (প্রথম সংশোধন)' প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে সেতু বিভাগ। প্রকল্পের আওতায় ৯০ কিলোমিটার অংশের প্রাথমিক নকশা প্রণয়ন করা হবে। সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সরকার খরচ করবে ৩২১ কোটি ৮৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। রাজধানীতে পাতাল রেল নির্মাণে সরকারের উদ্যোগকে ইতিমধ্যে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তথ্য অনুযায়ী, সেতু বিভাগ বলছে, ঢাকা শহরে বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্বও প্রায় ৭ হাজার ৯৫০ জন। রাজধানীতে মোট সড়কের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ২৮৬ কিলোমিটার, সড়কের ঘনত্ব ৯ দশমিক ১ শতাংশ। অথচ মেট্রোপলিটন শহরে সড়কের আদর্শ মান ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। এখানে ফাঁকা জায়গা ৩ দশমিক ০৯ শতাংশ অথচ আদর্শ মান ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। ঢাকা শহরে যানজটের কারণে প্রতি বছর প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যেই সেতু বিভাগ পাতাল রেল নির্মাণের এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সার্বিক বিবেচনায়, এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তা রাজধানীবাসীর জন্য স্বস্তিকর হবে এমনটিই আশা বিশ্লেষকদের। আমরা জানি, রাজধানীতে ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার এলিভেটেড মেট্রোরেল লাইন নির্মাণকাজ চলমান। সম্প্রতি এর সঙ্গে ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে এবং ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দুটি প্রকল্পও অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। নতুন এই লাইনের বড় অংশই মাটির নিচ দিয়ে যাবে। এর বাস্তবায়ন কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ফলে, পাতাল রেল নির্মাণের এই পরিকল্পনাকে সঙ্গত কারণেই ইতিবাচক। প্রকল্প সূত্র থেকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, মূল অনুমোদিত প্রকল্পে পাতাল রেল বা সাবওয়ে নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে চারটি রুট চিহ্নিত ছিল, যার আনুমানিক দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০ কিলোমিটার। পরে পরামর্শক মোট ২৩৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সাবওয়ে নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার সুপারিশ করায় সরকার এই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। উলেস্নখ করা যেতে পারে, রাজধানীতে যেখানে ১০০ বাসে ঘণ্টায় ১০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারে, সেখানে সাবওয়েতে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল সম্ভব। কিন্তু বিদ্যমান সড়কের ওপর মেট্রো বা সাবওয়ে নির্মাণ করা হলে সড়কের কিছু অংশ দখলের ফলে যানজট কমার ক্ষেত্রে তেমন প্রভাব ফেলবে না এবং নির্মাণকাজ চলার সময় ব্যাপক যানজট সৃষ্টির আশঙ্কাও রয়েছে। আমরা মনে করি, বিশেষজ্ঞ আলোচনায় উঠে আসা এ বিষয়গুলোকেও সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় নেয়া অপরিহার্য। যানজট নিরসনের লক্ষ্যে গৃহীত প্রকল্প, সাময়িকভাবেও যদি যানজট বাড়িয়ে দেয় তা হবে অত্যন্ত অস্বস্তির। মাটির নিচে সাবওয়ে বা আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো নির্মাণ করা হলে ভূমির উপরিভাগ যাতায়াতকারী জনসংখ্যা কমবে এবং যানজটও অনেকাংশে কমবে, এমন আশাবাদ রয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের। আমরাও এটি মনে করি। পাশাপাশি এটাও বলতে হবে যে, আমাদের দেশে মেগা প্রকল্পগুলোর কাজে ধীরগতি, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না করে প্রকল্পের মেয়াদ এবং অর্থ বাড়িয়ে নেয়ার নজির রয়েছে। প্রকল্পে বারবার সংশোধনীর ক্ষেত্র প্রস্তুত হয় এবং এ সুযোগে অতিরিক্ত ব্যয় নির্ধারণের মাধ্যমে অর্থ পকেটস্থ করার সুযোগ তৈরি হয়। ফলে দুর্নীতির প্রসার ঘটে। সংশ্লিষ্টদেরও বিষয়টি অজানা নয়। মনে রাখতে হবে, জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় কোনো প্রকল্প অনুমোদন দেয়ার পর তা নির্দিষ্ট মেয়াদকালের মধ্যে শেষ করা না গেলে রাষ্ট্র আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত তো হয়ই, উপরন্তু দাতা সংস্থাগুলোর অর্থের সঠিক ব্যবহারও নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। এর ফলে তাদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিরও অবকাশ থেকে যায়, যা মোটেই কাম্য নয়। অতএব প্রকল্প অনুমোদনের আগেই তা যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বাস্তবায়নে জবাবদিহিতার বিষয়টি নিশ্চিত করা উচিত। সর্বোপরি, পাতাল রেলের মতো এমন একটি জনগুরুত্বসম্পন্ন কাজের ক্ষেত্রে যেন কোনো অনিয়ম না ঘটে সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবশ্যই সুদৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখা আবশ্যক, একটি প্রকল্পের সুফল তখনই সর্বসাধারণের উপকারে আসতে পারে, যখন যেটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়।