সড়কে মৃতু্যর মিছিল দেখতে চাই না

প্রকাশ | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ঢাকা
সড়কে মৃতু্যর ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। প্রতিদিনই মানুষের মন আক্রান্ত হচ্ছে বিষাদে। দেশের মানুষ এমন মৃতু্য দেখতে চায় না। কিন্তু সে দুর্ভাগ্য থেকে তারা রেহাই পাচ্ছে না কয়েক ব্যক্তির অশুভ জোটের কাছে দেশের পরিবহন খাত জিম্মি থাকার কারণে। রাজনীতির ক্ষেত্রে পরস্পরবিরোধী শিবিরের অংশ হলেও চাঁদাবাজির স্বার্থে তারা পরিবহন নিয়ন্ত্রণে ঐক্য গড়ে তুলেছেন নিজেদের মধ্যে। তাদের কারণেই পরিবহন নৈরাজ্যের ইতি ঘটছে না। সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সরকার যে আইন করেছে তা তৈরি হয়েছে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে। এই আইনের ব্যাপারে আপত্তি জানাচ্ছে পরিবহন চাঁদাবাজির কুশীলবরা। অদ্ভুত সব দাবি জানাচ্ছে তারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে। নতুন আইনে হালকা লাইসেন্স ব্যবহার করে ভারী গাড়ি চালালে শাস্তির যে ব্যবস্থা রয়েছে তাতে তারা আপত্তি জানাচ্ছে। তাদের আবদার যে কোনো ধরনের লাইসেন্স থাকলেই গাড়ি চালানোর অধিকার দিতে হবে। দুর্ঘটনায় গাড়ির যাত্রী ও পথচারীর জীবন গেলেও চালকের জামিনের বিধান থাকতে হবে। অভিযুক্ত হলে শাস্তির পরিমাণ কমাতে হবে। নতুন আইন করা হয়েছে সড়ক নৈরাজ্যের অবসান ঘটাতে। পরিবহন মালিক, চালক, পথচারী সবাইকে আইনের আওতায় আনতে। আইনের মূল উদ্দেশ্য থাকে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা। এ উদ্দেশ্যেই আইন ভঙ্গকারীদের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়। যেমন ইচ্ছা তেমন চলার স্বাধীনতা দিলে আইনের কোনো প্রয়োজন হয় না। পরিবহন খাতের অশুভ সিন্ডিকেটের হোতারা যথেচ্ছতার যে অধিকার দাবি করছে তা কোনো সভ্য দেশে, সভ্য সমাজে কল্পনা করাও কঠিন। পরিবহন সংশ্লিষ্ট চাঁদাবাজ জোটের কুশীলবদের দাবির কাছে সরকারের আত্মসমর্পণের কোনো সুযোগ থাকা উচিত নয়। নিজেদের সভ্য দেশ ও সমাজের অংশ হিসেবে ভাবতে চাইলে পরিবহন খাতে যথেচ্ছতার অধিকার দাবিকারী অশুভ জোটকে পরাস্ত করতে হবে। পরিবহন মালিক, চালক, পথচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবাইকে আইন মানতে হবে। জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর মধ্য যারা অঙ্গীকার করেছে যে ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে কাজ করবে, বাংলাদেশ তাদের অন্যতম। আমাদের দেশে কী কী কারণে এত বেশি সড়ক দুঘটনা ঘটে, কী কী পদক্ষেপ নিতে দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনা সম্ভব- এসবও বহুল আলোচিত বিষয়। অনেক গবেষণা হয়েছে, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ আছে। বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) এক গবেষণা অনুযায়ী, দেশে ৫৩ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য। চালকদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে ৩৭ শতাংশ। ত্রম্নটিপূর্ণ যানবাহন, ভুয়া লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালক ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো বন্ধ করা হলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কমতে পারে। সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসের লক্ষ্যে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের শাস্তি নিশ্চিত করা প্রথম কাজ। ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, হেলপারদের গাড়ি চালানো, ত্রম্নটিপূর্ণ যানবাহন চলাচল- এসব বন্ধ করতে হবে। শুধু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালককেই যেন লাইসেন্স দেওয়া হয়, সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে হবে। সরকারকে এটা উপলব্ধি করতে হবে যে এটা একটা গুরুতর জাতীয় সমস্যা। সরকারের পাশাপাশি পরিবহনমালিক, শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সচেষ্ট হতে হবে, যাত্রী সাধারণের সচেতনতাও বাড়াতে হবে। সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে এখনই ভাবতে হবে। অন্যথায় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটতেই থাকবে। হালকা যানবাহনের জন্য আলাদা লেন তৈরি করা যেমন জরুরি, তেমনি সড়ক-মহাসড়ক থেকে ফিটনেসবিহীন যানবাহন তুলে দিতে হবে। সবার আগে চালকদের নিয়ে ভাবা দরকার। লাইসেন্সবিহীন চালকদের হাতে কোনোভাবেই কোনো গাড়ি তুলে দেওয়া যাবে না। যানবাহন মালিক-শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিকতায় সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব বলে আমরা মনে করি।