শিশুর মানসিক বিকাশ অর্জনে চাই সুষ্ঠু পারিবারিক পরিবেশ

প্রকাশ | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

আয়ান নুহা আলামিন শিক্ষার্থী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ
পরিবার সমাজজীবনে এমন একটি স্থান দখল করে আছে, যেখানে একটি শিশু জন্মগ্রহণ করে এবং মৃতু্য অবধি সেখানেই অতিবাহিত করে। সমাজবিজ্ঞানের ভাষায় পরিবার হলো এমন একটি সংগঠন, যেখানে বিভিন্ন সামাজিক প্রয়োজন বা চাহিদা মেটাতে বাবা-মা কিংবা পরিবারের কর্তারা বিভিন্ন প্রকার কাজ সম্পন্ন করে থাকে। একটি শিশুর জন্য বিদ্যা অর্জনের প্রথম ধাপই হলো পরিবার। পরিবারই তার শিক্ষার প্রথম হাতেখড়ি। তাই শিশুর মানসিক বিকাশ গঠনে পরিবারের অন্যতম দায়িত্ব হলো শিশুকে ধর্মীয় শিক্ষা, চরিত্রবান ও আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। শিশুর মধ্যে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ জাগ্রত করা, তাদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করা ইত্যাদি। শুধু তাই নয়, শিশুরা যাতে ন্যায়-অন্যায়,সমাজের কাঙ্ক্ষিত-অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে পারে সে সম্পর্কেও সচেতন হতে হবে। আর এর জন্যই পরিবারকে বলা হয় শিশুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু একটি পরিবার, বিশেষ করে বাবা-মা শিশুর সুষ্ঠু বিকাশ গঠনে বর্তমানে কতটুকু দায়িত্ব পালন করছে সেটা এখন প্রশ্নবৃদ্ধ। যেই জায়গায় পরিবারে বাবা-মা তাদের শিশুকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার শিক্ষা দেওয়ার কথা আজ সেই জায়গায় তাদের মধ্যেই প্রতিনিয়ত লেগে থাকে বিভিন্ন ঝগড়াঝাটি, কলহ বিবাদ ইত্যাদি। আর এসব কিছুই একটি শিশুর মনে চরম আকারে দাগ কেটে। পরিবার যদি শিশুকে সুনির্দিষ্টভাবে সমাজ কাঙ্ক্ষিত পন্থায় গড়ে তুলতে না পারে তাহলে তার মধ্যে সুষ্ঠু ব্যক্তিত্বের বিকাশ গটানো কখনোই সম্ভব নয়। ফলে সে অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠে। তেমনি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা গত কিছু দিন আগে আমাদের শহরে হয়েছে। স্কুলে পড়ুয়া ছাত্রটা গত এক মাস আগেই আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যা করার আগে মা-বাবাকে চিরকুটে লিখে গেছে, 'আম্মা-আব্বু তোমরা মিলেমিশে থেকো, আর কোনো দিন ঝগড়া করবে না, আমার ভাইবোনকে মেরো না।' কি এমন অপরাধ ছিল ছেলেটার? যার জন্য একটি জীবন্ত ছেলেকে লাশ হতে হলো। সে তার বাবা-মায়ের ঝগড়াঝাটি, কলহ, বিরোধকে সহ্য করতে পারেনি। বাবা-মায়ের ঝগড়া, একে-অন্যকে অশ্রদ্ধা, অসহনশীলতা তার কোমল হৃদয়ে আঘাত করেছে। ফলে সে বেছে নিয়েছে মৃতু্যর পথ। আচ্ছা, আমাদের সমাজে যাদের বাবা-মা আছে, তারা কি কখনো ভাবে যে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করলে, স্বামীর সঙ্গে কলহে লিপ্ত হলে তা আমার সন্তানের মনে কোনো প্রভাব ফেলছে কি না? আমাদের সন্তানরা আমাদের ঝগড়া, আমাদের বিভেদ, বিরোধ, কলহকে কি নিছক ঝগড়া হিসেবেই দেখে, নাকি এসব তার মনে কোনো দাগ কাটছে? চাইল্ড সাইকোলজি নিয়ে যারা পড়েছেন, তারা হয়তো জানেন, শিশুর সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হলে তাদের মানসিক বিকাশের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি;?কিন্তু আমাদের অধিকাংশ পরিবারগুলোতে বাবা-মায়ের ঝগড়া-বিবাদ, কলহ দেখে বাচ্চাদের মানসিক বিকাশ চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। তারা খুব ছোটোবেলাতেই পিছিয়ে পড়ে এবং নেগেটিভ চিন্তাভাবনা নিয়ে বড় হয়- যা তাদের জীবনকে হতাশ করে তোলে। আপনি ভাবছেন, আপনাদের ঝগড়া-বিবাদ দেখে আপনার সন্তান ভয় পাচ্ছে। আপনাকে আরো সমীহ, আরো শ্রদ্ধার চোখে দেখতে দেখছে, তাই না? মোটেও নয়। সে ভেতরে ভেতরে কুঁকড়ে যাচ্ছে, ভেঙে পড়ছে। আপনাদের ঝগড়া তাকে অনেকখানি পিছিয়ে দিচ্ছে। সে ভাবছে জীবন সম্ভবত এরকমই, ঝগড়াময়। আপনাদের এই বিবাদ দেখে সে একটা সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনের কথা ভাবতে পারে না। স্বপ্ন দেখতে পারে না একটা সুন্দর জীবনের। আর এসব থেকেই তারা মাঝে মাঝে আত্মহত্যাও করে ফেলে। গত ২-৪ দিন আগে যেমন একজন করল। ভাবুন তো, আপনার কাছে সন্তানের চেয়ে কি ঝগড়াই বেশি ভালো? দয়া করে সাংসারিক বিরোধ, কলহগুলো থেকে সন্তানকে দূরে রাখুন। তাদের একটু ভালো থাকতে দিন। তাদের সুন্দর মনে নেতিবাচক ধারণা জন্মাতে দেবেন না। সন্তান আপনার। তার পূর্ণ বিকাশের ব্যাপারে খেয়াল রাখার দায়িত্বও আপনার। আর এর জন্য অন্তত সন্তানের মঙ্গলের জন্য হলেও আপনারা পারিবারিক ঝগড়া-বিবাদ, কলহ বিরোধ থেকে দূরে থাকুন। সংসার জীবনে স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন? মনে রাখবেন, আপনাদের সুষ্ঠু সুন্দর চলাফেরা এবং পারিবারিক পরিবেশই শিশুর সুষ্ঠু ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অপরিহার্য। এ জন্য সন্তানদের ন্যায্য দাবিগুলো পূরণ করুন, আপনাদের মধ্যে যাতে ঝগড়া-ঝাটি, বিরোধ, বিবাহ বিচ্ছেদ ইত্যাদি না ঘটে সেদিকে যত্নবান হোন এবং শিশু যাতে অশান্তিপ্রবণ পরিবার ও অপরাধী পরিবারে বড় না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখুন। তাহলেই আপনার শিশু সমাজ কাঙ্ক্ষিত সদস্যে পরিণত হয়ে আদর্শ মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠবে।