বৃদ্ধ 'বাবা-মা'কে অবহেলা নয়

প্রকাশ | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

মাইশা শওকত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
'বৃদ্ধ বাবা-মাকে অবহেলা নয়' সময় ও নদীর স্রোত যেভাবে প্রবাহমান, সেভাবে বয়সও যেন তার নিজস্ব গতিতে চলমান। কেউ চাইলেই তা থেমে যাবে না। একটি মানুষ যথাক্রমে তার শৈশব, কৈশোর, যৌবনকাল অতিক্রম করার পর ধীরে ধীরে বার্ধক্যে পদার্পণ করেন। এই বার্ধক্যে পদার্পণ করা ব্যক্তিকেই বলা হয় প্রবীণ বা ইংরেজিতে 'সিনিয়র সিটিজেন'। জীববিজ্ঞানের আলোকে একটি মানুষ ঠিক কত বছর বয়সে প্রবীণ হবেন তা সঠিকভাবে বলা যায় না কারণ একেকজন মানুষের শারীরিক গঠন, কর্মদক্ষতা, প্রতিরোধ ক্ষমতার মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। তবে যদি দেশভিত্তিক আলোচনায় যাই তাহলে বলতে হবে একেক দেশের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী প্রবীণের সংজ্ঞা একেক রকম। সত্যি কথা বলতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বৃদ্ধ হওয়ার পর পারিবারিক বা সামাজিকভাবে সেই মানুষটির গুরুত্ব অনেকখানি কমে যায়। যৌবনে যে মানুষটির নির্দেশে একটি পরিবার পরিচালিত হতো, বৃদ্ধ বয়সে এসে তিনি নিজেই সেই পরিবারের বোঝা হয়ে দাঁড়ান। 'ভালোবাসা নিম্নমুখী'- হয়তো বা এটাই প্রকৃতি প্রদত্ত নিয়ম। তাই বৃদ্ধ বাবা মাকে সেভাবে যত্ন অনেকেই করেন না। হয়তো বা সময়ের অভাব কিংবা সংসারের টানাপড়েনে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের প্রতি খেয়াল রাখা হয় না অথচ তারাই শেকড়। ইদানীংকালে বৃদ্ধদের জন্য বাংলাদেশে বেশ কিছু বৃদ্ধাশ্রমের দেখা মিলছে। পরিবার কর্তৃক অবহেলিত বৃদ্ধদের বা প্রবীণদের যারা নিরলসভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বৃদ্ধাশ্রমে তারা অনেক মহান। কিন্তু তারপরেও কোনো বাবা-মাকে বৃদ্ধ হলে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে হবে এটা ভাবতেই কষ্ট হয়। সন্তানদের বিবেকবোধ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে যে তারা তাদের বৃদ্ধ 'বাবা মাকে ভরণপোষণ করতে পারবে না? তাদের কী কখনো মনে হয় না এই 'বাবা মা' তাদের ছোটবেলায় কত আদর-যত্ন করেছেন! নিরন্তর তাদের মঙ্গল কামনায় দিন কাটিয়েছেন! 'বাবা মা' তাদের শত কষ্টের মধ্যেও তাদের সন্তানকে কখনো দূরে ঠেলে দেন না। অথচ ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! মানুষ বড়ই অদ্ভুত জাতি। একই দেহে যখন তারা 'মা-বাবা' তখন তারা মহৎ কিন্তু যখন তারা সন্তান তখন তারা দুর্জন। তবে এটি সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বাংলাদেশের ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে সবার উচিত তাদের বৃদ্ধ 'বাবা-মা'কে তাদের নিজেদের সন্তানের মতো আগলে রাখা।