ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশ ৮৮তম

প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে

প্রকাশ | ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বের ১১৭টি দেশের মধ্যে ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ৮৮তম। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ করা দরকার, গতবারের চেয়ে উন্নতি করলেও বৈশ্বিক অবস্থানে দুই ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। গতবার স্কোর ছিল ২৬ দশমিক ১, এবার কমে হয়েছে ২৫ দশমিক ৮। আর ২০০০ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৩৬। সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে 'বিশ্ব ক্ষুধা সূচক ২০১৯' প্রকাশ করা হয়। তথ্য মতে, দক্ষিণ এশীয় অন্যান্য দেশের মধ্যে ভারত ১০২, পাকিস্তান ৯৪, নেপাল ৭৩, মিয়ানমার ৬৯ এবং শ্রীলংকা ৬৬তম অবস্থানে রয়েছে। এ ছাড়া এবারের ক্ষুধা সূচক অনুযায়ী ৪৭টি দেশের অবস্থা মারাত্মক বলেও জানা গেছে। বলা দরকার, কৃষিমন্ত্রী বলেছেন- কৃষিজমি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়া, জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও দুর্যোগসহিষ্ণু শস্যের জাত উদ্ভাবনেও শীর্ষে বাংলাদেশ। এ ছাড়া বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশ সার্বিকভাবে উন্নতির দিকেই রয়েছে। পুষ্টিহীনতা, খর্বাকৃতি শিশু ও শিশুমৃতু্য হার হ্রাস পেয়েছে বাংলাদেশে। সন্দেহাতীতভাবেই এই বিষয়গুলো ইতিবাচক। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের এটাও আমলে নেওয়া সমীচীন যে, গতবারের চেয়ে উন্নতি করলেও বৈশ্বিক অবস্থানে দুই ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। সঙ্গত কারণেই পরিস্থিতি আমলে নিয়ে আগামীতে আরও বেশি উন্নয়নে সংশ্লিষ্টরা কাজ করুক এমনটি প্রত্যাশিত। উলেস্নখ্য, কোনো দেশের জনগণ কতটা খাদ্যাভাব অর্থাৎ খিদে পেটে থাকে, তা তুলে ধরা হয় বিশ্ব ক্ষুধা সূচক বা গেস্নাবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে (জিএইচআই)। এই সূচক নির্ধারণ করা হয় ০ থেকে ১০০ পয়েন্টের মাপকাঠিতে। এই মাপকাঠিতে ০ সবচেয়ে ভালো স্কোর, আর ১০০ হচ্ছে সবচেয়ে খারাপ। ১০-এর কম স্কোর পাওয়ার অর্থ খিদের সমস্যা কম। ২০ থেকে ৩৪ দশমিক ৯ স্কোরের অর্থ তীব্র খিদে, ৩৫ থেকে ৪৯ দশমিক ৯ অর্থ ভীতিকর খিদে আর ৫০ বা তার বেশি স্কোর বলতে বোঝায় চরমভাবে খিদেপীড়িত দেশ। আমরা বলতে চাই, যেহেতু জিএইচআই তৈরি হয়েছে চারটি মাপকাঠিতে। অপুষ্টি, ৫ বছরের কম বয়সিদের মধ্যে কম ওজনের শিশু, ৫ বছরের কম বয়সিদের মধ্যে কম উচ্চতার শিশু এবং ৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের মৃতু্যহার। ফলে এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। আর যখন ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট বলছে, বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে ধারাবাহিকভাবে- সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা জারি রাখা। আমরা বলতে চাই, খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ- এমন বিষয় যখন আলোচনায় আসছে তখন উৎপাদন আরও কীভাবে বাড়ানো যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। মনে রাখা দরকার, খাদ্যশস্য উৎপাদন এবং সংরক্ষণে যদি আরও বেশি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় তবে তা ইতিবাচক ফল দেবে। এ ছাড়া মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। এটাও বিবেচনায় নিতে হবে যে, শুধু ভাতে পেট ভরে বটে, তবে পুষ্টি ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত হয় না। সঙ্গত কারণেই পুষ্টিহীনতা রোধে সরকারকে আরও বেশি সুপরিকল্পতি পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যেসব অঞ্চল বা এলাকার জনগণ সর্বাধিক কিংবা তুলনামূলকভাবে অধিক পরিমাণে অপুষ্টিতে ভুগছে, সে সব এলাকায় পুষ্টির অভাবের কারণ নির্ণয় করে এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিতে হবে। কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্যদিয়ে পুষ্টির অভাব হ্রাস করতে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই আমরা মনে করি। এ কথাও বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হলে বাংলাদেশে ক্ষুধা ও অপুষ্টি সমস্যার সমাধানে অনেকটা সহায়ক হবে বলেই আশা করা যায় এবং বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ক্রমাগত এগিয়ে যাবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, ক্ষুধা সূচক আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই একই সঙ্গে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। গতবারের চেয়ে উন্নতি করলেও বৈশ্বিক অবস্থানে দুই ধাপ পেছানোর বিষয়টিসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে সর্বাত্মক উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।