দুর্নীতি নির্মূলের অঙ্গীকার

সফল বাস্তবায়ন জরুরি

প্রকাশ | ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে বাংলাদেশ এখনো মুক্ত হতে পারেনি। বাংলাদেশ এক সময় দুর্নীতির জন্য পর পর পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। দুর্নীতির সেই কলঙ্কতিলক মোচন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি এটা যেমন সত্য, একইভাবে সত্য যে, আমরা সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে পারিনি। যার কারণে আমাদের আশানুরূপ উন্নতি হয়নি। এটা আমাদের জাতীয় ব্যর্থতা। অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ দেশে-বিদেশে যেখানেই থাকুক না কেন, তা ভোগ করতে দেবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, জনগণের সম্পদ অবৈধভাবে দখল করে যারা সুখে রয়েছেন, তাদের বলতে চাই- দুদক সে ব্যবস্থা রাখবে না। তারা যেখানেই থাকুক না কেন, দুদক তাদের পেছনে রয়েছে। তার কথায় আমরা আশাবাদী হতে পারি। বাংলাদেশে প্রতি বছর দুর্নীতির মাধ্যমে কী পরিমাণ অর্থ আয়-রোজগার করা হয়, সেটার আসলে সঠিক কোনো তথ্য-উপাত্ত কারো কাছে নেই। তবে দুর্নীতি নিয়ে যেসব সরকারি-বেসরকারি সংস্থা কাজ করে, তাদের ধারণা এই সংখ্যা লাখ কোটি টাকার কম নয়। দুর্নীতিবিরোধী বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, বাংলাদেশে দুর্নীতিকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হচ্ছে সেবা খাতের দুর্নীতি, ঘুষ হিসেবে যেটি বর্ণনা করা যায়। এর ফলে যারা সেবা নিচ্ছেন, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আর কর্মকর্তারা ঘুষ নিয়ে অর্থ সম্পত্তির মালিক হচ্ছেন। এরকম দুর্নীতির তথ্য বিশ্বের কোনো দেশেই থাকে না। আরেকটি দুর্নীতি হলো রুই-কাতলা দুর্নীতি বা বড় ধরনের দুর্নীতি, যার মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রীয় কেনাকাটা থেকে শুরু করে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, বাজেট বাস্তবায়ন ইত্যাদির মাধ্যমে যে দুর্নীতি হয়। সেখানে অনেক পক্ষ থাকে, যার মধ্যে রাজনৈতিক নেতারা, সরকারি আমলা, ব্যবসায়ীরা জড়িত থাকে। উলেস্নখ্য, সর্বশেষ ২০১৮ সালের সূচকে দুর্নীতির দিক থেকে শীর্ষ ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩তম। এর দ্বারা এটাই প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হয় যে, বাংলাদেশে দুর্নীতিজনিত পরিস্থিতি সুখকর নয়, বিপজ্জনক। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ব্যাপারে তার রয়েছে জিরো টলারেন্স নীতি। ইতোমধ্যে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যেতে পারত। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতি বড় বাধা। দুর্নীতির কারণেই আমরা পিছিয়ে রয়েছি। বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুর্নীতিতে এমনভাবে জড়িয়ে পড়েছেন, তাদের বেতন দ্বিগুণ করেও কোনো লাভ হয়নি। তাদের অতি লোভী মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। সরকারি কোনো কাজের জন্য ১০ জায়গায় ধরনা দিতে হয়। ঘুষ দিতে হয় প্রতিটি টেবিলে। এই চিত্র হতাশাজনক। তবে এখন যে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসছে এটা তো নতুন কিছু নয়। দুর্নীতি বাংলাদেশে আগেও ছিল এখনো আছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বেঁচে থাকার জন্য মানুষের কত টাকা প্রয়োজন। দেশের সবাই যদি অবৈধভাবে কোটিপতি হতে চায় তা হলে এটা একটা বিপজ্জনক বার্তা। দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব হলে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাশালী ও গর্বিত দেশ। আমাদের সেদিকেই অগ্রসর হওয়া জরুরি এবং এর কোনো বিকল্প নেই।