মূল্যস্ফীতি

প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
নিত্যপণ্যের বাজার যদি স্থিতিশীল না হয়, তবে তা কতটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রসঙ্গত বলা দরকার যে, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে, অস্থিরতা বিরাজ করছে দ্রব্যমূল্যের বাজারে। শাকসবজি ও মসলাজাতীয় ইত্যাদি দ্রব্যের মূল্য অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরে কিছুটা বেড়েছে। আর এ কারণে নভেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৫ ভাগ- যা গত অক্টোবরে ছিল ৫ দশমিক ৪৭ ভাগ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে শূন্য দশমিক ৫৮ ভাগ। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, ২০১৮ সালের নভেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৩৭ ভাগ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়েছে। এতে বাড়তি মূল্যস্ফীতির পরিমাণ শূন্য দশমিক ৬৮ ভাগ। মূলত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) তথ্যের ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির এ তথ্য জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। আমরা বলতে চাই, যেভাবে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে আসছে এবং বাজারে অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে তা আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প থাকতে পারে না। কেননা, এ কথা ভুলে যাওয়া যাবে না যে, বাজারে অস্থিরতা দেখা দিলে সাধারণ মানুষ এর প্রভাবে দিশাহারা হয়ে পড়ে। জীবনযাপনের স্বাভাবিকতা বিপর্যস্ত হয়। সঙ্গত কারণেই অস্থিরতা বিরাজ করছে দ্রব্যমূল্যের বাজারে- এমন খবরকে সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। বিষয়টি আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এটাও বলা দরকার, নভেম্বরের মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধির বিষয়টি খুবই পরিষ্কার, যা মন্ত্রীও বলেছেন। এ ছাড়া উলেস্নখ্য যে, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি দুর্বিষহ করে তুলেছে ঢাকাসহ সারা দেশের ভোক্তা-ক্রেতাদের। সরকারের নানা পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও দাম কমছে না পেঁয়াজের। এমনকি জরুরি ভিত্তিতে কয়েকটি দেশ থেকে উড়োজাহাজে করে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে; তবুও দাম নাগালের বাইরে। ফলে এবার পেঁয়াজের দামের কারণে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। আর এ কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ার কারণ হিসেবে প্রধানত পেঁয়াজকেই দায়ী করছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। এ ছাড়া তিনি বলেছেন 'পাঁচ-সাত বছর ধরে দেখে আসছি, যে মাসে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি বাড়ে, ওই মাসে অটো খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কমে। আবার যে মাসে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বাড়ে, ওই মাসে খাদ্যে কমে। সরকারের যে লক্ষ্য, সেটা যেন স্থির থাকে, সে অনুযায়ী বিবিএস কাজ করছে কি না?' আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এ কথা ভুলে যাওয়া যাবে না যে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তা সামগ্রিকভাবে সুখকর ফল বয়ে আনবে না। যদিও এমন বিষয়ও সামনে এসেছে যে, নতুন পেঁয়াজ নামার পর বাজার স্থির হবে। কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ উঠলেই মূল্যস্ফীতির হার কমে যাবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজন সঠিক তথ্যের প্রবাহ এবং দক্ষ বাজার ব্যবস্থাপনা, যাতে করে মধ্যস্বত্বভোগীরা চাহিদা-জোগানের সাময়িক ভারসাম্যহীনতার সুযোগ না নিতে পারে। আর বাজার অস্থিরতার সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করাও জরুরি। সঠিক গবেষণার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যশস্য উৎপাদনের সঠিক তথ্যও সংগ্রহে রাখতে হবে ও সে অনুযায়ী দ্রম্নত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কেননা, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রেক্ষাপটে ক্রয়ক্ষমতা সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে রাখার গুরুত্ব অপরিসীম এবং এর জন্য প্রয়োজন সঠিক সময়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির বিষয়টি আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।