মানব উন্নয়ন সূচকে অগ্রগতি

ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক

প্রকাশ | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
জাতিসংঘ ঘোষিত বৈশ্বিক মানব উন্নয়ন সূচকে এক ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালের জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এ বছরের মানব উন্নয়ন সূচকে ১৮৯ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৫তম। ২০১৮ সালের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গড় আয়সহ বিভিন্ন সূচকের আলোকে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। গত বুধবার রাজধানীর পরিকল্পনা কমিশনে ইউএনডিপি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। গত বছরের মতো এবারও জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকের শীর্ষে আছে নরওয়ে। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও মালদ্বীপ। পিছিয়ে আছে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও নেপাল। ২০১৮ সালে যেখানে তিন ধাপ এগিয়েছিল বাংলাদেশ সেখানে এ বছর এক ধাপ অগ্রগতি হয়েছে। সূত্র অনুযায়ী, নানান বৈষম্যের কারণে বাংলাদেশে মানব উন্নয়নে আশানুরূপ অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলেছেন, 'সরকারের প্রণোদনার ভর্তুকি প্রকৃত লোকের কাছে না পৌঁছানোয় বৈষম্য বাড়ছে। এটি এক সমস্যা। আমাদের মূল লক্ষ্য দেশজ উপায়ে উন্নয়ন।' প্রতিবেদন প্রকাশকালে বিশ্লেষকদের বক্তব্যে আরও উঠে এসেছে যে, বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাব্যবস্থার কারণে বৈষম্য বাড়ছে। যেমন : ও লেভেল, এ লেভেল পাস করা তরুণ-তরুণীরা অন্যদের তুলনায় কিছুটা এগিয়ে থাকছেন। ব্যাংক, পোশাক কারখানা- এসব অর্থনৈতিক শক্তিগুলো কিছু লোকের হাতে রয়েছে। তারা নীতিনির্ধারণেও প্রভাব ফেলেন। এ ছাড়া উন্নয়ন ব্যয়ে অসাধুতার কারণেও বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সমাজে বৈষম্য প্রকট হলে সেখানে সামগ্রিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বিষয়টি নিঃসন্দেহে চিন্তা জাগানিয়া। বিশেষজ্ঞরা সুপারিশ করেছেন, 'দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে চতুর্থ শিল্প বিপস্নবের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এ জন্য শিক্ষা ও শ্রমবাজারে ব্যাপক সংস্কার করতে হবে। বৈষম্য কমাতে একদিকে যেমন সরকারি সেবা বাড়াতে হবে, আবার সরকারি বিনিয়োগও চাই।' উলেস্নখ্য, উচ্চ প্রবৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও মানব উন্নয়নে বাংলাদেশের এই পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে বৈষম্যকে। বলা হয়েছে, উন্নয়নের কাঠামোগত কারণেও বৈষম্য বাড়ছে। আর বিশ্লেষণে যেহেতু মানব উন্নয়নে 'বৈষম্যকে অন্তরায় হিসেবে দেখা হচ্ছে, সেহেতু সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার বৈষম্য বিলোপে যথাযথ উদ্যোগ নিশ্চিত করা। মধ্যম আয়ের দেশের প্রাথমিক স্বীকৃতি আসার পর মানব উন্নয়ন সূচকে তিন ধাপ এগিয়ে এসেছিল বাংলাদেশ। এটিকে বড় অর্জন হিসেবে দেখা হলেও চলতি বছরের সূচক দেশবাসীকে হতাশ করেছে বলা যায়। মাথাপিছু জাতীয় আয়, মানবসম্পদের অবস্থান এবং অর্থনীতির ঝুঁকিগ্রস্ততা- এই তিন সূচক বিবেচিত হয় মধ্যম আয়ের ক্ষেত্রে। এই তিন সূচকেই বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। সরকারও ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। মানবসম্পদ সূচকে বিবেচনা করা হয় দেশের মোট জনসমষ্টির কত ভাগ পুষ্টিহীনতার শিকার, শিশু মৃতু্যর হার কত, মাধ্যমিক স্কুলে কতজন লেখাপড়ার সুযোগ পায় এবং বয়স্ক সাক্ষরতার হার কত ইত্যাদি। উলিস্নখিত সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বৈষম্যের কারণেই যে আমরা পিছিয়ে পড়ছি, তা আবারও জাতিসংঘের এই সূচকের মাধ্যমে সামনে এসেছে। ফলে এদিকেই সংশ্লিষ্টদের নজর দেয়া অপরিহার্য। যদিও আমরা মনে করি, জাতিসংঘের এই স্বীকৃতি প্রমাণ করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং এই অর্জন ধরে রাখার জন্য গুরুত্ব দেয়ার কোনো বিকল্প নেই। বলাই বাহুল্য, শেখ হাসিনার সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরই নানান খাতের উন্নয়নের চিত্র আমাদের সামনে এসেছে। আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে বিশ্বের ২৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হিসেবে গড়ে তোলার কথাও বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। উলেস্নখ করা প্রয়োজন যে, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৭ দশমিক ছয় মিলিয়ন হচ্ছে তরুণ সমাজ। যাদের বয়স ১০ থেকে ২৪ বছর। পরিকল্পিতভাবে এই সংখ্যক যুবকের আত্মোন্নয়ন ও দেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত এবং উজ্জীবিত করতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে এর অনেক বড় প্রভাব পড়বে। মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞদের দক্ষতাকেও কাজে লাগাতে হবে। এই লক্ষ্যে প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থাপনা, জনসংযুক্তি, মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প উন্নয়নকে আরও প্রাধান্য দেয়া প্রয়োজন। সর্বোপরি বলতে চাই, মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে যেহেতু বৈষম্যের কথাটি বারংবার উচ্চারিত হয়ে আসছে, সেহেতু এ অবস্থা থেকে উত্তরণ খুবই প্রয়োজন।