অনশনে পাটকল শ্রমিকরা

যৌক্তিক সমাধানই প্রত্যাশিত

প্রকাশ | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
শ্রমিকদের অসন্তোষ বা কোনো দাবি-দাওয়াকে সামনে রেখে অনশন বা আন্দোলনের মতো ঘটনা ঘটলে কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধসহ ১১ দফা দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের আমরণ অনশন অব্যাহত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ করা দরকার, অনশন করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মারাও গেছেন খুলনা পস্নাটিনাম জুটমিলের একজন শ্রমিক। আর খবরে উঠে আসা তথ্য মতে. ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়েছেন। আমরা মনে করি, সামগ্রিক এই পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে গ্রহণযোগ্য সমাধানে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হতে হবে। জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির সিদ্ধান্ত বাতিল, কাঁচা পাট কিনতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, অবসরে যাওয়া শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধসহ ১১ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত তাদের এ কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী জুট মিলসের সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি। এ ছাড়া খুলনার খালিশপুর (সাবেক পিপলস) জুটমিলের শ্রমিকরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার থেকে ১১ দফা দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন খুলনা অঞ্চলের ৯টিসহ দেশের অন্যান্য স্থানের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা। ১১ দফা দাবি আদায়ে টানা তৃতীয় দিনের মতো পাটকল শ্রমিকদের আমরণ অনশন চলছে বলেও জানা গেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এর আগেও বিভিন্ন দাবিতে পাটকল শ্রমিকরা রাস্তায় নেমেছেন। তখন মজুরি কমিশন-২০১৫ বাস্তবায়ন, বকেয়া পরিশোধ, বেতন-ভাতা পরিশোধ, গ্র্যাচুয়েটি, পিএফ ফান্ডের টাকা প্রদান, বদলি শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ, অবসর শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া পরিশোধসহ ৯ দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পাটকল শ্রমিকদের অবরোধের বিষয়টি সামনে এসেছিল। আমরা বলতে চাই, এবার আমরণ অনশনের যে বিষয়টি সামনে এলো তা আমলে নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতির গ্রহণযোগ্য সমাধান নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। কেননা এটা বিবেচনায় নেওয়া দরকার, শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হওয়া কিংবা অনশনের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ার বিষয়টি কাম্য নয়। এটি একটি আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে স্পষ্ট করে যার সমাধান করা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। শ্রমিক অসন্তোষ হলে এক সময়ের প্রধান অর্থকরী ফসল পাটের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হবে, এটা হতে পারে না। সঙ্গত কারণে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্যোগী হওয়া আবশ্যক। আমরা মনে করি, শ্রমিকদের দাবির বিষয়গুলোকে পর্যবেক্ষণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে মনে রাখা দরকার, সারাবিশ্বে আমাদের পাট ও পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর লোকসানের বিষয়টি আমলে নিতে হবে। কেননা লোকসান হতে থাকলে পাটের ভবিষ্যৎ শঙ্কার মুখে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হবে যা কাম্য হতে পারে না। সংশ্লিষ্টদের ভেবে দেখা দরকার, বেসরকারি পাটকলগুলো ভালো করলেও রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোতে কেন লোকসানের ধারাবাহিকতা বজায় থাকছে; এ বিষয়টিও এর আগে আলোচনায় এসেছে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধসহ ১১ দফা দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের আমরণ অনশনের যে বিষয়টি সামনে আসছে তা যথাযথভাবে আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক। একই সঙ্গে এটাও মনে রাখা দরকার, পাটের উর্বর ভূমি বাংলাদেশ। ফলে পাটকে এগিয়ে নিতে করণীয় নির্ধারণ এবং এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। আমরা মনে করি, পাটের উৎপাদন ও বাজার সৃষ্টিতে যেমন সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে তেমনিভাবে শ্রমিকদের দাবির বিষয়ও বিবেচনা করতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।