মহান বিজয় দিবস

স্বাধীনতা হয়ে উঠুক আরও অর্থবহ

প্রকাশ | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাঙালির গৌরবময় বিজয় দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ শেষে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণ করেছিল পাকহানাদার বাহিনী। চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্যদিয়ে অভু্যদয় ঘটে বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। বিজয়ের অনুভূতি সবসময়ই আনন্দের। তবে একই সঙ্গে দিনটি বেদনারও, বিশেষ করে যারা স্বজন হারিয়েছেন তাদের জন্য। অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের ফসল আমাদের স্বাধীনতা। আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের; যেসব নারী ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, তাদের। এ দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার তথা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সফল নেতৃত্ব দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ দেশের আপামর জনতাকে তিনি স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে তুলেছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন একই লক্ষ্যে অবিচল একদল রাজনৈতিক নেতা। তাদের সবাইকেই আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল একরাশ স্বপ্ন বুকে নিয়ে। ৪৮ বছরের এ পথপরিক্রমায় সে স্বপ্নের কতটা পূরণ হয়েছে, আজ সে হিসাব মেলাতে চাইবে সবাই। এর মধ্যে আমাদের অনেক চড়াই-উতরাই মোকাবিলা করতে হয়েছে। রাজনীতি এগিয়েছে অমসৃণ পথে। গণতান্ত্রিকব্যবস্থা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায়। জনবহুল ও সীমিত সম্পদের এ দেশকে স্বয়ম্ভর করে তোলার কাজও সহজ ছিল না। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের কঠিন দিনগুলোয় রাষ্ট্রের প্রশাসনযন্ত্র চালু করতে হয়েছিল। স্বাধীন দেশের উপযোগী একটি সংবিধানও প্রণয়ন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রয়োজন ছিল গণতান্ত্রিক ও মুক্ত পরিবেশে নিরবচ্ছিন্ন যাত্রার। সদ্য স্বাধীন দেশের নেতৃত্বের এ বিষয়ে অঙ্গীকারের অভাব ছিল না। দুর্ভাগ্যজনক, পরবর্তী সময়ে এ ক্ষেত্রে মারাত্মক বিচু্যতি ঘটে, সপরিবারে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, পরে যার খেসারত দিতে হয় গোটা জাতিকে। একদল মানুষ বারবার দেশকে পিছিয়ে নেয়ার অপচেষ্টা করেছে। এখনো সে চেষ্টা নানাভাবে অব্যাহত। এরপরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, উন্নয়ন ঘটেছে প্রায় প্রতিটি খাতে। বাস্তবতা হলো- দেশে এখনো দারিদ্র্য প্রকট। গণতন্ত্র, বাক-স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা পেলেও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হতে পারেনি আজও। গণতন্ত্রকে সর্বস্তরে পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে অঙ্গীকারের অভাব পীড়াদায়ক। রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর বিভক্তি; এর পাশাপাশি জাতীয় প্রশ্নে অনৈক্য আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে বড় বাধা হয়ে রয়েছে। দেশে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিগুলো এখনো তৎপর। আশার কথা, যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছে এবং বেশ কটি রায় কার্যকরও হয়েছে। সমগ্র বিচার সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে তা এ ধরনের অপশক্তির তৎপরতা রোধে সহায়ক হবে, আশা করা যায়। এতে আইনের শাসন জোরদার করার পথও সুগম হবে। এ বছর বিজয়ের আগের দেশের প্রায় ১১ হাজার রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশের তালিকাও প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে। সরকারের এ উদ্যোগ অত্যন্ত ইতিবাচক। প্রত্যাশা থাকবে, আইন অনুযায়ী এদেরও বিচারের মুখোমুখি করা হবে। এ বছর আগেই উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার শর্ত পূরণ করেছে বাংলাদেশ। তবে অর্থনৈতিকভাবে আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত মূল্যবোধ রক্ষায় হতে হবে যত্নবান। স্বাধীনতাকে আরও অর্থবহ করে তুলতে হবে। যে কোনো জাতির শক্তির প্রধান উৎস ঐক্য। দেশের সামগ্রিক অগ্রগতির জন্যও প্রয়োজন এটি। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের পেছনে কাজ করেছিল মত-পথ-জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার যুদ্ধে অংশগ্রহণ। যে কারণে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত শক্তিশালী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে মাত্র নয় মাসে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্বাধীনতার পর আমরা সেই ঐক্য ধরে রাখতে পারিনি। গুরুত্বহীন বিষয়েও রাজনৈতিক বিভক্তি দেশে গণতন্ত্রের ভিত সুদৃঢ় করার পথে বড় অন্তরায় হয়ে রয়েছে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের নেতৃত্বকে। সেই সঙ্গে জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোয় অভিন্ন নীতি অনুসরণ অপরিহার্য। আগামী দিনগুলোতে দেশের সমৃদ্ধির স্বার্থে সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণই আমরা প্রত্যাশা করব। সর্বোপরি, আমাদের রয়েছে অসীম সম্ভাবনা। ফলে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সব সমস্যা মোকাবেলায় সচেষ্ট হলে আমাদের অগ্রগতি ঘটবে দ্রম্নত। বিভেদ ভুলে আমরা সে পথেই অগ্রসর হবো- এই হোক আমাদের বিজয় দিবসের অঙ্গীকার।