জরুরি উদ্যোগ নিন

অবাসযোগ্য দ্বিতীয় নগরী ঢাকা

প্রকাশ | ১৬ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
রাজধানী ঢাকা বসবাসের অযোগ্যতার দিক থেকে দুই ধাপ অবনমন ঘটে দ্বিতীয় স্থানে এসেছে। প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী ‘দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট’ (ইআইইউ) বিশ্বের সবচেয়ে অযোগ্য ১০টি শহরের তালিকা প্রকাশ করেছে সম্প্রতি। এতে এক নম্বরে আছে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক (১৪০তম)। ১৪০টি শহর নিয়ে করা এ তালিকায় ঢাকার অবস্থান এবার ১৩৯তম। গত বছর এ তালিকায় ঢাকার অবস্থান ছিল চতুথর্। বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা, অপরাধ প্রবণতা, শিক্ষার হার এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির মান বিবেচনায় নিয়ে এই তালিকা প্রকাশ করেছে ইআইইউ। বৈশ্বিক সূচকে রাজধানীর ঢাকার এই অবস্থান নিদারুণ এক লজ্জার বৈ অন্য কিছু নয়। রাজধানী ঢাকা যানজট আর জলাবদ্ধতার শহর। অন্য যে কোনো দূষণের চেয়ে এগিয়ে আছে বায়ুদূষণ। বতর্মানে ঢাকার বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে সিসার গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে অন্তত ১০ গুণ বেশি। সালফারডাই অক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। শুধু বায়ুদূষণের কারণেই প্রতি বছর ১৫ হাজার মানুষ মারা যায়। রাজধানীর যানজটের কথা বলাই বাহুল্য। ভ‚মি ব্যবহারের যথাযথ নীতিমালা না মেনে নগরীতে বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে ওঠা অবকাঠামোর ৭৩ শতাংশই পুরোপুরি অপরিকল্পিত। জলাশয় ও নিম্নাঞ্চল ভরাট করে অপরিণামদশীর্ উন্নয়নের ফলে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে রাজধানীর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। শহরের বাসিন্দাদের নিবিের্ঘœ যাতায়াতের জন্য মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ সড়কের প্রয়োজন হলেও রাজধানীতে রয়েছে মাত্র ৮ শতাংশ। নদীগুলো বিষাক্ত হয়ে গেছে। পানিতে কমে দ্রবীভ‚ত অক্সিজেন। অথচ, রাজধানীর চারপাশের নদীগুলো নগরীর পরিবেশ ও জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূণর্ ভ‚মিকা রাখতে পারত। এটা অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, রাজধানীর সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে প্রায়ই জনদুভোর্গ চরম আকার ধারণ করে। এ সমস্যার সমাধানে সিটি গভনের্মন্ট ব্যবস্থা চালু করার বিষয়ে অনেক আলোচনা হলেও এ বিষয়ে অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। নদীভাঙনসহ নানা প্রাকৃতিক দুযোের্গ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনেকেই উদ্বাস্তু হয়ে একপযাের্য় রাজধানীতে এসে ভিড় করে। এসব উদ্বাস্তুর কারণেও নগরীর আইন-শৃঙ্খলা এবং নগরবাসীর সাবির্ক জীবনমানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তবে দীঘর্ সময় ধরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা না থাকলেও সামাজিক অস্থিরতা, জননিরাপত্তার অভাব এবং স্বাস্থ্যসেবার নিম্নমানের জন্য ঢাকা বসবাসের সবচেয়ে অযোগ্য শহরের তালিকায় পেয়েছে দ্বিতীয় স্থান। আমরা মনে করি, ঢাকা বিশ্বের ‘অবসবাসযোগ্য দ্বিতীয় নগরী’ হিসেবে স্থান পাওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। তথ্য অনুযায়ী, এবারের সমীক্ষায় বিশ্বের সবচেয়ে বাসযোগ্য নগরীর মযার্দা অজর্ন করেছে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা। এর জন্য ভিয়েনাকে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোনের্ক পেছনে ফেলতে হয়েছে। এর মাধ্যমে ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের বৈশ্বিক এই বাষির্ক সমীক্ষায় এই প্রথম ইউরোপের কোনো শহর প্রথম স্থান অজর্ন করলো। বাসযোগ্যতার দিক থেকে ভিয়েনা ও মেলবোনের্র পর শীষের্ থাকা অন্য শহরগুলো হচ্ছেÑ জাপানের ওসাকা, কানাডার ক্যালগেরি, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, কানাডার ভ্যনাক্যুভার, জাপানের টোকিও, কানাডার টরেন্টো, ডেনমাকের্র কোপেনহেগেন ও অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ২০১১ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে যে নতুন ধারা সংযোজিত হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করলে এ বিষয়ক অনেক সমস্যার সমাধান হবে। এ ছাড়া ১৯৯৫ সালের আইন আছে, ১৯৯৭ সালের রেগুলেশন আছে, ২০০০ সালের আইন আছে, ২০১০ সালের আইনের সংশোধনী আছে এবং ২০১১ সালের রাজনৈতিক অঙ্গীকারও আছে। বিশেষজ্ঞ মতে, ঢাকার মান বঁাচাতে সরকারের দৃঢ় অবস্থানে যাওয়ার কোনো বিকল্প থাকা উচিত নয়। সবোর্পরি বলতে চাই, ইকোনমিস্ট বলছে, অপরাধ প্রবণতা, সামাজিক অসন্তোষ এবং জঙ্গিবাদ এসব শহরে জীবনমান নিম্নমুখী করতে একটি বড় ধরনের প্রভাব রাখে। ফলে এসব নেতিবাচকতা যাতে ঢাকাকে স্পশর্ করতে না পারে সে ব্যাপারে কাযর্কর উদ্যোগ থাকা জরুরি। পাশাপাশি রাজধানীর অবকাঠামোগত উন্নয়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি রাজধানীবাসীর জীবনমানের উন্নয়নেও কতৃর্পক্ষকে দৃষ্টি দিতে হবে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে সামগ্রিকভাবে নগরবাসীর দুভোর্গ বাড়ে। কাজেই নগরবাসীর নিরাপত্তার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আরও মনোযোগী হতে হবে। নাগরিকদেরও সচেতন হওয়া আবশ্যক। ঢাকার বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রায়নসহ সুদূরপ্রসারী ও দীঘের্ময়াদি পরিকল্পনার কথাও ভাবতে হবে।