এগিয়ে চলছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষক ও কমর্কতাের্দর দুবর্লতা ও ত্রæটিগুলো শনাক্ত করার জন্য প্রায় ৩৬টি কমর্শালার মাধ্যমে তাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে যোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ফলে ধীরে ধীরে বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ইতোমধ্যে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ বেশ কিছু বিদেশি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ গবেষণা প্রকল্পও শুরু হয়েছে।

প্রকাশ | ১৭ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

মো. বশিরুল ইসলাম
আধুনিক কৃষি শিক্ষার মাধ্যমে এ দেশের কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউটের রূপান্তর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। সেই ১৯৩৮ থেকে পথচলা এ প্রতিষ্ঠানটি আজ পযর্ন্ত নিরবচ্ছিন্ন গতিতে সৃষ্টি করে চলছে একের পর এক অমর কাব্য। বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত এটি সেই বিরলতম প্রতিষ্ঠানটি, যা একটি জাতির দুভির্ক্ষ পীড়িত মানুষের অন্নদান, কৃষিশিক্ষা পথিকৃতের ভ‚মিকা পালন করেছে। তবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় তথা অবকাঠামোগতভাবে উন্নত, একাডেমিকভাবে আধুনিক ও গবেষণাবান্ধব করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একজন দক্ষ, সৎ একাডেমিশিয়ান ও সবোর্পরি নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিক উপাচাযের্র ভ‚মিকা অনস্বীকাযর্। কারণ একজন উপাচাযর্ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণপুরুষ যার সুদক্ষ নেতৃত্বে একটি বিশ্ববিদ্যালয় সামনের দিকে এগিয়ে চলে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে তেমনি এক উপাচাযর্ হলেন অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ। যার কোনো উপমা চলে না। শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামোসহ সব বিষয়ে সেন্টার অব এক্সিলেন্স করে গড়ে তুলতে দক্ষ হাতে পরিচালনা করে চলছেন উপাচাযর্ অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ। তিনি বিশ্বাস করেন ‘শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হবে উন্নত আধুনিকতম বিশ^বিদ্যালয়, এ প্রজন্মের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ’। উপাচাযর্ হিসেবে ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কমর্যজ্ঞ বাস্তবায়নের কাজ করে চলছেন। ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ একাধারে প্রথিতযশা গবেষক, শিক্ষাব্যক্তিত্ব, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও কলাম লেখক। তিনি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এগ্রিকালচারাল বোটানি বিভাগের অধ্যাপক। বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউট বতর্মান শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৭৯ সালে বিএসসিএজি (অনাসর্) ও ১৯৮২ সালে এমএসসিএজি, যুক্তরাজ্য থেকে ১৯৮৭ সালে এমফিল এবং পরে ২০০৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অজর্ন করেন। অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ ভুট্টা, গম, ধান, ডাল ও তৈল ফসলের ওপর বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, ইউরোপিয়ান কমিশন, ইউএস এইড, বাংলাদেশ সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ০৭টি বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছেন। আন্তজাির্তক জানাের্ল তার ৪০টি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বিভিন্ন সাময়িকীতে অনেক প্রবন্ধ লিখেছেন। তার অপ্রকাশিত বহু গবেষণা কমর্ রয়েছে। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংগঠনিক কমর্কাÐের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। বতর্মানে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের কাযির্নবার্হী সদস্যসহ প্রায় ১৬টি পেশাজীবী সংগঠনের দায়িত্ব পালন করছেন। ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ সততা বলতে আথির্কভাবে শতভাগ সৎ থেকে নিজের সমগ্র প্রজ্ঞা, মেধা, যোগ্যতা, সামথর্্য ও যোগাযোগের সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের দায়িত্ব ও কতের্ব্যর শতভাগ পালন করার চেষ্টা করাকেই বোঝেন। ছাত্রজীবন থেকে আজ পযর্ন্ত তিনি তার পরিচিত জনের মধ্যে একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান মানুষ হিসেবে পরিচিত। তিনি বিশ্বাস করেন কাজে। অফুরন্ত দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ শক্তিমান এ মানুষটির আজন্ম ইচ্ছা এ দেশটিকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা রূপে গড়ে তোলার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ২০৪১ সালের একটি উন্নত ও আত্মমযার্দাশীল বাংলাদেশ বিনিমাের্ণর লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছেন উপাচাযর্। সে স্বপ্নের বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে যোগদান করার পরই ফিশারিজ অ্যান্ড একোয়াকালচার অনুষদ এবং এগ্রিবিজনেস ম্যানেজমেন্ট অনুষদ থেকে কৃষি অথর্নীতি ডিগ্রি চালু করেন। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সমথের্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার্ঙ্গীণ উন্নয়নে একনেকে ৩৫২ কোটি ৬৮ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন লাভ করে। প্রকল্পটি শেষ হলে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসবে এ বিশ্ববিদ্যালয়। আধুনিক ‘ড. ওয়াজেদ মিয়া কেন্দ্রীয় গবেষণাগার স্থাপিত হয়েছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রায় শ’খানেক আন্তজাির্তক পযাের্য়র গবেষণা চলছে। প্রতি বছরই বিদেশি ছাত্র সংখ্যা বাড়ছে। পুরো ক্যাম্পাস ওয়াইফাইয়ের আওতায় আনা হচ্ছে। অত্যাধুনিক ই-লাইব্রেরি গড়ে তোলা হয়েছে। ই-বুক সিস্টেমে চলে যাচ্ছে পুরো গ্রন্থাগার। এখন সবাই বই বা গবেষণা পত্রিকা পড়ার জন্য খুব সহজেই ওই সব অনলাইনে প্রবেশ ও ডাউনলোড করতে পারে। লাইব্রেরিটি ই-লাইব্রেরিতে পরিণত হওয়ায় যুগের চাহিদাও পূরণ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় গবেষণার প্রজনন ক্ষেত্র। গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞান সৃষ্টি, উদ্ভাবনী চিন্তাচেতনার বিকাশ প্রধানত বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করেই আবতির্ত হয়। উপাচাযর্ দায়িত্ব গ্রহণের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা মানকে বিশ্ব পযার্য় নেওয়ার জন্য কাজ করে চলছেন অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ। তার নেতৃত্বে অন্য সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি মানসম্মত গবেষণা হচ্ছে এখন। শিক্ষকরা দেশের নানা সমস্যা সমাধানের জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জলবায়ু পরিবতর্ন ও নিরাপদ খাদ্য চাষের উপায় নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। ঢাকা শহরকে সবুজে আচ্ছাদিত করার জন্য ছাদ বাগান নিয়ে চলছে ব্যাপক গবেষণা। সুন্দরবনের সব ধরনের প্রাণীর জেনেটিক বার কোড নিণর্য় ও বিভিন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবনসহ আন্তজাির্তক মানের মৌলিক ও ফলিত গবেষণা করছেন শিক্ষক ও শিক্ষাথীর্রা। এমএস এবং পিএইচডি শিক্ষাথীর্রা গবেষণা করছে এবং শিক্ষকরা তাদের তত্ত¡াবধায়কের দায়িত্ব পালন করছে। শিক্ষকদের ব্যক্তিগতভাবে পরিচালিত প্রকল্পে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে অথর্ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেই গবেষণা কমর্কাÐের কয়েকটি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং বাকিগুলো সমাপ্তির পথে রয়েছে। পাইপলাইনে আরও কতকগুলো গবেষণা কমর্পরিচালনার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। উচ্চশিক্ষা গ্রহণে শিক্ষকদের বাইরে যাচ্ছেন এবং ডিগ্রি নিয়ে ফিরে আসছেন, ফলে একাডেমিক পরিবেশ ক্রমান্বয়ে উন্নত হচ্ছে। অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ সবসময় ছাত্রদের উচ্চশিক্ষার জন্য উদ্বুদ্ধ করে থাকেন। শিক্ষাথীর্রা অন্যায় কাজে না জড়িয়ে যাতে সৃজনশীল কমর্কাÐের সঙ্গে সবসময় নিয়োজিত থাকে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখেন। পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষাথীের্দর মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা ও সংস্কৃতিচচার্রও আগ্রহ বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা চলছেন। সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মহান ভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, মুজিবনগর দিবস, বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে নানা অনুষ্ঠানে আয়োজন হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক দিক। শিক্ষক ও কমর্কতাের্দর দুবর্লতা ও ত্রæটিগুলো শনাক্ত করার জন্য প্রায় ৩৬টি কমর্শালার মাধ্যমে তাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে যোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ফলে ধীরে ধীরে বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ইতোমধ্যে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ বেশ কিছু বিদেশি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ গবেষণা প্রকল্পও শুরু হয়েছে। কথাবাতার্ চলছে আরও কিছু নতুন চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে। উপাচাযের্র অফিস, বাংলো সব জায়গায় যেন সরকারি অথর্ কম খরচ হয়, সেদিকে তিনি সবর্দা সচেষ্ট। এভাবে দিনের পর দিন আথির্ক, একাডেমিক ও অবকাঠামোগত পরিবতর্ন আনয়নের পাশাপাশি উপাচাযর্ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও নতুনত্ব নিয়ে এসেছেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, উন্নত সাংস্কৃতিক পরিচয় ছাড়া কোনো জাতির স্বকীয়তা অজর্ন সম্ভব হয় না। মো. বশিরুল ইসলাম: জনসংযোগ কমর্কতার্ (দায়িত্বপ্রাপ্ত) জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তর, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়