দেশের সমৃদ্ধ অর্থনীতির পূর্বাভাস

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সামর্থ্য অর্জন জরুরি

প্রকাশ | ০৫ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আগামী ৫ বছরে অর্থাৎ ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ৩০ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের তালিকায় নাম লেখাবে। পাশাপাশি এই সময়ের মধ্যে ছাড়িয়ে যাবে দক্ষিণ এশিয়ার মালয়েশিয়া, হংকং ও সিঙ্গাপুরের মতো শক্তিশালী দেশকেও। সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবিল (ডবিস্নউইএলটি)-২০২০ এমন পূর্বাভাসই দিয়েছে। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর ডবিস্নউইএলটির এই সমীক্ষা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর)। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে ৪১তম অবস্থানে রেখেছিল যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি থিঙ্কট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান। আর এখন জানা যাচ্ছে, একধাপ এগিয়ে এ অবস্থান এখন ৪০তম। দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হওয়ার এই পূর্বাভাস অত্যন্ত আশা জাগানিয়া নিঃসন্দেহে। তথ্য অনুযায়ী, সিইবিআর তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ২০১৯ সালের পিপিপি সমন্বিত জিডিপি ৫ হাজার ২৮ ডলারের সমন্বয়ে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ। গত বছরে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে দেশটির অর্থনীতি দুর্দান্ত করেছে। যদিও ২০১৮ সালে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। আর ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রতিবছর এক শতাংশ হারে বাড়ছে। এর মানে হলো- সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাথাপিছু আয় যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার এটাও স্বীকার করতে হবে, দীর্ঘ কয়েকবছর জিডিপি ৬ ঘরের বৃত্তে আটকে থাকলেও বিগত কয়েক বছরই ধরেই জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। এই সময়ে দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে, বেড়েছে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ। অন্যদিকে দারিদ্র্য হ্রাস, মাতৃ ও শিশুমৃতু্য হারও কমেছে। এতে সবকিছু মিলিয়ে দেশের অর্থনীতি যে উর্ধ্বমুখী সে ব্যাপারেও সন্দেহ পোষণের অবকাশ নেই। ডবিস্নউইএলটির সাম্প্রতিক পূর্বাভাসও এই সাক্ষ্য বহন করছে। জানা গেছে, প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে ২০০৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নেওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে। এ ক্ষেত্রে ১৯৩টি দেশের বার্ষিক অবস্থান নির্ণয়ের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ সম্ভাব্যতা বিচার করে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত দেশগুলোর অবস্থানের এই পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। তালিকায় শীর্ষ পাঁচ অর্থনীতির দেশ হিসেবে নাম রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, জার্মানি ও ভারতের। আর ২০২৯ ও ২০৩৪ সালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ঠাঁই করে নেবে যথাক্রমে- ২৬তম ও ২৫তম স্থানে। আগামী ১৫ বছরে উলেস্নখযোগ্য মাত্রায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে। আমরা মনে করি, এই পূর্বাভাসকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে সংশ্লিষ্টদের। কেননা, বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হতে গেলে স্বভাবতই কিছু প্রতিবন্ধকতা মাথা তুলে দাঁড়ায়। এই প্রতিবন্ধকতাগুলো চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েই তা মোকাবিলার উদ্যোগ নিতে হবে- বিশ্লেষকরা এমনটিই মন্তব্য করেছেন। অস্বীকারের সুযোগ নেই, বাংলাদেশের অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে মধ্যমহারের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি, পরিব্যাপ্ত দারিদ্র্য, আয় বণ্টনে অসমতা, শ্রমশক্তির উলেস্নখযোগ্য বেকারত্ব, জ্বালানি, খাদ্যশস্য এবং মূলধনী যন্ত্রপাতির জন্য আমদানিনির্ভরতা, জাতীয় সঞ্চয়ের নিম্নহার, বৈদেশিক সাহায্যের ওপর ক্রমহ্রাসমান নির্ভরতা এবং কৃষি খাতের সংকোচনের সঙ্গে সঙ্গে সেবা খাতের দ্রম্নত প্রবৃদ্ধি। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর বাংলাদেশের অর্থনীতি যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প বিশ্বের বৃহত্তম শিল্পের মধ্যে অন্যতম। এসব সার্বিক দিক বিবেচনায়, আমাদের প্রত্যাশা থাকবে সংশ্লিষ্টরা এমন উদ্যোগ নিশ্চিত করুক, যাতে আমাদের সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। সর্বোপরি মনে করি, কৃষি ও শিল্পের পাশাপাশি আমাদের ওষুধশিল্প এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতও অনেক এগিয়ে এসেছে, সেহেতু এসব শিল্পের বিকাশেও গুরুত্বারোপ করা জরুরি। সরকার এ ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক এবং পদক্ষেপও দৃশ্যমান; এরপরও প্রত্যাশা থাকবে অন্যান্য খাতের দিকেও সমহারে গুরুত্ব দিতে হবে। গুরুত্ব দিতে হবে বেকারত্ব নিরসন, নতুন শ্রমবাজার উন্মুক্ত করাসহ কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা। এজন্য বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশীয় বিনিয়োগ বাড়ানোও অপরিহার্য। বাংলাদেশকে সার্বিকভাবে উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে হলে, দীর্ঘমেয়াদি এবং সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন আবশ্যক। দেশের নীতিনির্ধারকদের কর্তব্য হওয়া দরকার, পূর্বাভাস প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে, সমৃদ্ধির লক্ষ্যে পৌঁছাতে কী কী প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে তা শনাক্ত করে মোকাবিলার সামর্থ্য অর্জনও নিশ্চিত করা।