শিক্ষাবান্ধব শিক্ষাঙ্গনের প্রত্যাশা

প্রকাশ | ০৫ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
নতুন বছরে নোংরা ছাত্র রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাবান্ধব শিক্ষাঙ্গন চাই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী আসে মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। এই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে পরিবার বা তাদের ব্যক্তিগত নানা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে। কিন্তু ক্যাম্পাসে আসার পর যেখানে তারা জ্ঞানচর্চা করবে সেখানে তার ঠিক উল্টোটা দেখা যায়। বিশেষ করে ছাত্রদের এই বিভ্রান্তিগুলোতে পড়তে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কর্তৃত্বে থাকে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন। সে ক্ষেত্রে নিরুপায় মধ্যবিত্ত পরিবারের ছাত্রগুলোকে বাধ্য হয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ নিতে হয়। রাজনীতি হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কিছু ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত কোনো গোষ্ঠী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যা দ্বারা নাগরিক সরকারের রাজনীতিকেই বোঝানো হয়, তবে অন্যান্য অনেক সামাজিক প্রতিষ্ঠান, যেমন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেখানে মানুষের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক বিদ্যমান, সেখানে রাজনীতিচর্চা করা হয়। রাজনীতি কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার ভিত্তিতে গঠিত সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে গঠিত। রাজনীতির চর্চা যদি আজ সঠিকভাবে এগিয়ে যেত তাহলে বর্তমান দেশ বা শিক্ষাঙ্গন এমন বিভ্রান্তিতে পড়ত না। শিক্ষাঙ্গনে আজ যেখানেই অরাজকতা সেখানেই রহস্য উদঘাটন করলে দেখা যায় এর পেছনে মূল হোতা ছাত্র রাজনীতি। আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল ছাড়া কোনো মহৎ কাজ করতে দেখিনি। আমি দেখেছি তাদের অস্থিতিশীলতার কারণে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীকে বিভ্রান্তিতে পড়তে। কল্যাণের অজুহাতে যে ছাত্র সংগঠন খুন করতে কুণ্ঠাবোধ করে না সেই সংগঠনের কি আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে? ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনগুলো একই ধাঁচের রাজনীতিচর্চা করে। বিএনপি-জামায়াত জোট যখন ক্ষমতায় ছিল তখন ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরের দৌরাত্ম্য ছিল, বর্তমানে ছাত্রলীগের। নামে নয় কাজে যদি বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগ হতো তাহলে হয়তো বর্তমান শিক্ষাঙ্গন সত্যিই শিক্ষাবান্ধব হতো। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের তথ্যানুসারে, গত ১০ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে লাশ হয়েছেন ২৪ জন শিক্ষার্থী। এ ছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও ৩ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব হত্যাকান্ডের ১৭টি ঘটেছে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে! লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের আধিপত্য বিস্তার, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির কারণে মূলত এসব হত্যাকান্ড ঘটেছে। \হদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় হোক নোংরা ছাত্র রাজনীতিমুক্ত। শিক্ষাঙ্গন হবে মুক্ত জ্ঞান আহরণের স্বাধীনতম আবাসস্থল। যেখানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করাসহ বিভিন্ন ধরনের গবেষণামূলক ও সামাজিক কাজকর্ম করা হয়ে থাকে। সুতরাং মনের বিরুদ্ধে নয়, শিক্ষাঙ্গন হোক মনের ভাব বা চেতনাকে বহির্প্রকাশের অন্তঃস্থল। বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে গবেষণা। গবেষণার জন্য একেকজনের ভিন্ন রকম চিন্তা-চেতনা থাকাটাই স্বাভাবিক। সবার চিন্তা এক নয়। যেখানে চিন্তা ভিন্ন সেখানে মতাদর্শ ভিন্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। এই স্বাধীনতাটুকু না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্ত জ্ঞানচর্চা বা আহরণে বাধাগ্রস্ত হবে। ফারহানা নওশিন তিতলী শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া